করোনাসংক্রমণ বাড়ায় সর্বাত্মক লকডাউনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মৃতদের মধ্যে আইসিইউতে চারজন, ১৬নং ওয়ার্ডে তিনজন, ২৯ নং ওয়ার্ডে একজন, ২২ নং ওয়ার্ডে দুজন মারা গেছেন। মৃতদের অধিকাংশই চাঁপাইনবাবঞ্জ জেলার বাসিন্দা।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ||

করোনাসংক্রমণ বাড়ায় সাতদিনের সর্বাত্মক লকডাউন জারি করা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। ২৪শে মে রাত ১২টা থেকে আগামী ৩০শে মে রাত ১২ টা পর্যন্ত এই লকডাউন দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আজ ২৪শে মে সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, জেলাজুড়ে করোনা সংক্রমণের উর্দ্ধমুখি প্রবণতা দেখা দিয়েছে। সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে আটকে পরা বাংলাদেশীরা আসছেন। তাদের মাধ্যমে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা ও করোনা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশক্রমে  জেলায় ৭ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হলো। এসময় উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী, পুলিশ সুপার এএইচএম আবদুর রকিব সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

লকডাউনের এ সাতদিন অপ্রয়োজনে কেউ বাসার বাইরে যেতে পারবেন না। জেলায় সকল প্রকার যানবহন বন্ধ থাকবে। তবে গণমাধ্যমকর্মী, রোগী পরিবহণ বা এ্যাম্বুলেন্স, জরুরী পণ্যবাহী ট্রাক ও সেবাদানের জন্য যানবহন চলবে।  এসময় রাজশাহী/নওগাঁ থেকে কোন যানবাহন চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ কিংবা বেরুতে পারবে না। কাঁচাবাজার, মুদিখানা, ফার্মেসি ছাড়া সব ধরনের দোকানপাট ও সাপ্তাহিক হাট বন্ধ থাকবে।

নির্দিষ্ট একটি স্থানে আমের আড়ৎ বা বাজার বসতে পারবে না, ইউনিয়ন পর্যায়ে আড়তদারদের মাধ্যমে আম বিক্রি করতে হবে।  তবে বাগান থেকে ট্রাকে করে কিংবা কুরিয়ারে আম পাঠানো যাবে।

এছাড়া শপিংমল বন্ধ থাকবে। খাবারের দোকানে প্যাকেট খাবার বিক্রি করা যাবে, বসে খাওয়া যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে জুম্মা সহ প্রতি ওয়াক্তে সর্বোচ্চ ২০ জন মুসল্লি অংশ নিতে পারবেন।  গণমাধ্যম, আইনশৃঙ্খলাসহ জরুরী পরিসেবা এ লকডাউনের আওতার বাইরে থাকবে বলে জানানো হয়।

উল্লেখ্য, গত কয়েকদিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনাক্রান্তের গড় হার ৫৫ ভাগ থেকে ৬০ ভাগের মধ্যে ওঠানামা করছে। দেশের অন্য জেলাগুলোর তুলনায় এই হার এখন সর্বোচ্চ। ঈদের দুদিন পর থেকেই সংক্রমণের হার বাড়তে থাকে। তুলনামূলক চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংক্রমনের সংখ্যা বেড়ে যাবার কারণে সোমবার থেকে এক সপ্তাহের লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

পুলিশ সুপার এএইচএম আবদুর রকিব জানান, প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতা করে থাকবে পুলিশ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিভিন্ন পয়েন্টগুলোতে পুলিশ পাহাড়ায় সাধারণ মানুষকে লকডাউন মানাতে কাজ করবে।

রবিবার বিকাল থেকে সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই মারা গেছে ১০ জন। তারা সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। 

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মৃতদের মধ্যে আইসিইউতে চারজন, ১৬নং ওয়ার্ডে তিনজন, ২৯ নং ওয়ার্ডে একজন, ২২ নং ওয়ার্ডে দুজন মারা গেছেন। মৃতদের অধিকাংশই চাঁপাইনবাবঞ্জ জেলার বাসিন্দা।

সোমবার দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট ও আইসিউতে ১৬৮ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন।

তিনি আরো জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। আক্রান্তদের জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার কিছু অংশে করোনা ব্যাপক আকার নিয়েছে। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

সংবাদ সারাদিন