করোনাঝুঁকিতেই সেবা দিচ্ছেন ভোলার সাড়ে চারশ’ স্বাস্থ্যকর্মী

|| অনলাইন প্রতিনিধি, ভোলা ||

করোনাঝুঁকিতেই মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন ভোলার পরিবার পরিকল্পনা দফতরের সাড়ে চারশ মাঠকর্মী। করোনা সুরক্ষা নিশ্চিতে নেই কোন ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম তথা পিপিই। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন জেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্যাটেলাইট ক্লিনিকের এসব কর্মীরা। স্বাস্থ্যদুর্যোগের এই সময়ে গ্রামের মানুষের জন্য নূন্যতম এই স্বাস্থ্যসেবা চালু রাখতে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জামা সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন এসব স্বাস্থ্যকর্মীরা।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্যমতে জেলায় ৫টি মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্র, ৪৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র, ২৫০টি স্যাটেলাইট ক্লিনিকের কাজ করছেন ২০৪ জন পরিবার কল্যান সহকারী, ৬২ জন পরিবার কল্যান পরিদর্শকা, ৫৯ জন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক, ১০ জন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, ৮ জন মেডিকেল অফিসার, ৪ জন সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। যাদের প্রায় সবাইকেই নানা পর্যায়ে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষদের নিয়েই কাজ করতে হয়।

গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে হাতের নাগালে পরিবার পরিকল্পনা স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি করোনা মোকাবেলায় সচেতনতার লক্ষ্যে কাজ করছে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সাড়ে চার’শ মাঠকর্মী। এসকল কজের পাশাপাশি তারা মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসাও দিয়ে থাকেন।

হোম কোয়ারেন্টাইন ও লকডাউনের কারণে যখন মানুষ সঠিকভাবে সাধারণ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না, সেসময়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের এমন উদ্যোগে স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মাঝে। চিকিৎসার পাশাপাশি তারা স্বাস্থ্যসুরক্ষা এবং করোনা ভাইরাসের এর মহামারি রোধে জীবাণুনাশক বিভিন্ন উপকরণ ও মাস্ক ব্যাবহারসহ সচেতনতামূলক পরামর্শ দিচ্ছেন। চিকিৎসা ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিরাপত্তার যাবতীয় সরঞ্জাম পেলে আরও বিস্তৃত সেবা দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

পরিবার পরিকল্পনা সহকারী নিলুফা আক্তার, সেলিনা আক্তারসহ আরো অনেকেই জানান, আমরা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পক্ষ থেকে আগের মতো করেই তৃর্নমূল মানুষের স্বাস্থ্যসুরক্ষার জন্য প্রত্যেকের ঘরে ঘরে গিয়ে স্বাস্থ্য পরামর্শ ও সেবা দিয়ে আসছি।

জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এ সেবা দিচ্ছি আমরা। এর পাশাপাশি বাইরে গিয়েও প্রতিদিন ক্লিনিক করতে হচ্ছে। সেখানে ৫০-১০০ জনের মতো রোগী আসছে বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে। তাদেরকেও সেবা দিতে হচ্ছে। অথচ আমাদেরই নেই কোন পিপিই ও সুরক্ষা সরঞ্জাম। এগুলো ছাড়াই আমরা মানুষকে করোনা সম্পর্কে সচেতন করছি। এমনকি লকডাউন কিংবা কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষদের বাড়ীতেও যেতে হচ্ছে আমাদেরকে। আমাদের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। বলেন নিলুফা আক্তার।

পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মাহাবুবুর রহমান, মেজবাহ উদ্দিনসহ আরো অনেকে জানান, দেশে করোনা পরিস্থিতির যতই অবনতি হচ্ছে ততই এসব সেবা প্রত্যাশীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা সুরক্ষায় সরকারিভাবে পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস, হ্যান্ডস্যানিটাইজার, জীবাণুুনাশক স্প্রেসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি সরবরাহ না করায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা।

পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠ কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. সমশের আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা ভোলা জেলায় সাড়ে চারশ মাঠ কর্মী দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। মাঠ পর্যায়ে কাজ করার জন্য আমাদের যেসব সরঞ্জাম দরকার সেগুলো আমরা পাচ্ছি না।

সমশের আলী বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের প্রটেকশনের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জামগুলো দেওয়া হলে কাজ করতে আরও সুবিধা হতো। এছাড়াও বিভিন্ন খাতের পাশাপাশি আমাদের মাঠ কর্মীদের প্রণোদনার আওতায় আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা জোর দাবী জানাচ্ছি। স্বাস্থ্যকর্মীদের এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছেন, উপজেলা ( ভারপ্রাপ্ত) পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ড. আফরোজা বেগম।

স্বাস্থ্যকর্মীদের এমন কাজকে স্বাগত জানিয়ে ভোলার নাগরিক অধিকার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সাহাদাত হোসেন শাহিন বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা যেভাবে জীবনের ঝূঁকি নিয়ে রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন, এটা প্রশংসার দাবি রাখে। তাদের পিপিই, যানবাহন সংকট রয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের সমস্যাগুলো সমাধান করলে তারা আরও ভালভাবে নিজেদের নিরাপদ রেখে স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন