|| উপজেলা প্রতিনিধি, ভালুকা (ময়মনসিংহ) ||
করোনাঝুঁকিতেই চালু হলো ভালুকার সব কলকারখানা। গেল রোববার থেকেই কারখানাগুলোর দুই একটি করে খুলতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার উপজেলার সব কারখানাই খুুলে দিয়েছেন মালিক কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় শ্রমিকতো বটেই, বাইরের শ্রমিকরা এসে কাজে যোগ দেওয়ায় এখন পুরোদমে চলছে কারখানাগুলো।
টেক্সটাইল, নিট, কটন ও সোয়েটার ফ্যাক্টরিসহ সবমিলিয়ে একশ’র বেশী কারখানা রয়েছে ভালুকায়। সরকার ও বিজিএমএইএ’র নির্দেশনা মত শুধু স্থানীয় শ্রমিকদের দিয়ে কারখানা চালাতে বলা হলেও তার কোন বালাই নেই এসব কারখানায়। কাজে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের করোনা স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরত্ব মানার কোন সুযোগ নেই।
বরাবরের মত তারা নির্দিষ্ট সময়ে আগেই ধাক্কাধাক্কি করে কারখানায় ঢুকছে আর বেরোচ্ছেন। কিছু কারখানায় গেইটের দারোয়ানরা শ্রমিকদের হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিচ্ছে এবং স্প্রে করছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের থেকে খুবই কম। অনেক শ্রমিক এসব না মেনেই ভেতরে ঢুকে পড়ছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মানছে না বেশীর ভাগ কারখানা মালিক। ফলে ঝুঁকিতে পড়ছে শ্রমিকসহ এলাকার মানুষ। জামিরদিয়া মাস্টারবাড়ি এলাকার আবু সাঈদ বলেন, উপজেলার জামিরদিয়া মাষ্টারবাড়ি ও সিডস্টোর এলাকা কারখানাঅধ্যুষিত হওয়ায় এখানে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের বসবাস। সারাদেশ থেকে আসা শ্রমিক ও অন্য লোকজন এই এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকেন। তারা যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এজন্য তারাতো বটেই আমরা স্থানীয়রাও আতঙ্কের মধ্যে আছি।
কারখানা খোলা প্রসঙ্গে ক্রাউন ওয়্যার প্রাইভেট লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মো. সোহেল রানা বলেন, ‘আমরা রোববার থেকে ফ্যাক্টরি চালু করেছি। বর্তমানে আমার ফ্যাক্টরিতে ৪০ ভাগ শ্রমিক নিয়ে কাজ করছি। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকদের কারখানায় ঢোকাচ্ছি এবং ভেতরেও নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করাচ্ছি। মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছি। সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে আমরা কারখানায় ট্রাস্কফোর্স গঠন করেছি।
রাসেল স্পিনিং মিলের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন জানান, তারাও যথাযথ নিয়ম কানুন মেনেই কারখানা চালু করেছি। সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন শ্রমিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার।
টিএম টেক্সটাইল লিমিটিডের নির্বাহী পরিচালক দূর্জয় জানান, তারা কারখানা খুলেছেন গেল ২৬ তারিখে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালাচ্ছেন দাবি করে দূর্জয় বলেন, ‘প্রত্যেক শ্রমিককে তাপমাত্রা মেপে হাত ধুয়ে এবং স্প্রে করে কারখানায় ঢোকানো হচ্ছে। আমরা বিজিএমইএ’র পরামর্শ মেনে দূরের শ্রমিক না এনে যাদের বাড়ি কাছাকাছি তাদের দিয়ে কাজ করাচ্ছি। বর্তমানে আমার ফ্যাক্টরিতে ৪০ ভাগ শ্রমিক দিয়ে কাজ চালাচ্ছি ‘
তবে শ্রমিকরা বলছেন, কোন কারখানা মালিকই যথাযথ নিয়ম কানুন মানছেন না। আমাদেরকে দিয়ে আগের মতোই পরিবেশেই কাজ করানো হচ্ছে। গেইট দিয়ে ঢুকতে, বের হতে এবং ভেতরেও সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। রাসেল স্পিনিং মিলের শ্রমিক বোরহান বলেন, ‘আমাদের এখানে যথাযথ নিয়ম কানুন মানা হচ্ছে না। আমরা বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজ করতে এসে খুবই শঙ্কিত। আর কটা দিন বন্ধ রাখলে ভালো হতো ‘
এ প্রসঙ্গে ময়মনসিংহ শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাহেব আলী জানান, ভালুকার কারখানাগুলোতে আমরা যতটুকু দেখছি তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করছে। আর আমরা বলছি করোনা বেশী আক্রান্ত এলাকা ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে কারখানায় শ্রমিক না আনতে।
হালিমুন্নেছা চৌধুরাণী মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জামাল হোসেন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কলকারখানা চালু করা মোটেও উচিৎ হয়নি। দিনদিন করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলছে। যদি একবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাহলে অপরিমেয় ক্ষতিতে পড়তে হবে আামাদেরকে।’ #