|| মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, কুমিল্লা থেকে ||
লকডাউনে গাড়িঘোড়া কম চলাচলে অন্য অনেক স্থানের মতো কিছুটা হলেও ভিন্নমাত্রা পেয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ। সড়কে নেই যানবাহনের কালোধোঁয়া। কমেছে ধুলোবালিও। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অন্যান্য সময়ের মতো মানুষ ঘর থেকে বের না হওয়ায় মহাসড়ক বলতে গেলে ফাঁকা। জরুরি সেবা ছাড়া কোনও ইঞ্জিনচালিত যান চলছে না। শুধু কি বায়ু দুষণই কমেছে, গ্রীস্মের রুদ্র প্রকৃতিতে সড়কের বিভিন্ন অংশজুড়ে মৃতপ্রায় গাছগুলোতে ফুটেছে রঙিন সব ফুল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গেলো চার সপ্তাহ ধরে চলমান লকডাউনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বায়ুর গুণগত মানের বিস্তর উন্নতি হয়েছে। যান্ত্রিক যান বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকগুণ কমে গেছে বায়ুদূষণ। মঙ্গলবার রাতে বৃষ্টির কারণে ধুলোবালিও তেমন নেই। বেড়েছে বাতাসের বিশুদ্ধতা। পরিসংখ্যান বলছে, লকডাউনে সড়কসংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে বায়ু দূষন কমেছে প্রায় সত্তর শতাংশ পর্যন্ত।
এমনিতে স্বাভাবিক সময়ে জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনই সড়কে বহুলোকের আনাগোনা লেগেই থাকে। এসব মানুষকে বহন করে সড়কে ছুটে বেড়ায় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। লকডাউনে এখন এগুলো চলছে না বললেই চলে। সাধারণ মানুষ লকডাউনের এই সময়টা সাধারণত ঘরেই কাটাচ্ছেন। এতে করে দূষণ কমার পাশাপাশি সড়কের ডিভাইডার বরাবর রোপিত মৃতপ্রায় গাছগুলোতে ফুটেছে বর্ণিল সব ফুল।
পরিবেশবিদরা বলছেন, আদর্শ পরিবেশ এমনটাই হওয়া উচিত। গত বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর সাধারণ ছুটি চলাকালে মার্চ ও এপ্রিলে কমতে থাকে বায়ু দুষণ। তবে সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর ধীরে ধীরে তা ফের বাড়তে থাকে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতুর টোলপ্লাজায় কর্মরত লোকমান হোসেন বলেন, ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার গাড়ি চলাচল করত। বর্তমানে লকডাউন থাকায় এই ব্যস্ততম মহাসড়কে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ হাজার পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করছে। যা অর্ধেকের চেয়েও কম।
পরিবেশ সংগঠক মতিন সৈকত বলেন, মহাসড়কে যান্ত্রিক যান বাতাসকে বিষিয়ে তুলছে। বায়ুদূষণের জন্য অর্ধেক দায়ই মূলত তরল জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমে তৈরি হওয়া ধোঁয়া। বর্তমানে কম গাড়ি চলাচল করায় দূষণের মাত্রা কমেছে। কিন্তু তা তো সাময়িক। সব খুলে দিলে আবার তো আগের অবস্থা হয়ে যাবে। তাই এখনই উদ্যোগ নেয়া দরকার। দূষণ কমানোর এই ঘটনায় প্রমাণিত হলো, এতদিন আমরা যেসব উৎসকে কারণ হিসেবে বলেছি সেগুলোই সঠিক। সরকার যদি আমাদের চিহ্নিত উৎসগুলো থেকে দূষণ কমানোর উদ্যোগ নেয় তাহলে মানুষ ও প্রকৃতি অনেকটাই স্বস্তি পাবে।