কক্সবাজারে সুকন ও জাহাঙ্গীরের সন্ত্রাসে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা

কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া এলাকায় সন্ত্রাসী সুকন ও তার ভাইদের কাছে রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছেন ঝিলংজা ইউনিয়নের তিন ওয়ার্ডের কয়েক হাজার মানুষ। সুকন ও তার ভাই জাহাঙ্গীরের এমনসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিকার চান তারা।

দেড় মাসে ১০ জন রক্তাক্ত

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার ||

কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া এলাকায় সন্ত্রাসী সুকন ও তার ভাইদের কাছে রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছেন ঝিলংজা ইউনিয়নের তিন ওয়ার্ডের কয়েক হাজার মানুষ। সুকন ও তার ভাই জাহাঙ্গীরের এমনসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিকার চান তারা।  

ডিসির গাড়ি ডাকাতি, হত্যা, চাঁদাবাজি, গ্রামীণ ব্যাংক কর্মকর্তার টাকা ছিনতাই, নারী নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টা মামলাসহ ডজন মামলার আসামী সুকন। খুরুলিয়া কোনার পাড়ার মৃত মাষ্টার জুলফিকার আলীর ছেলে সুকনের কাছে অনেক সময়ে প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্তরাও তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। এই সন্ত্রাসী সুকনের সক্রিয় অংশগ্রহণে বাজার দখল, টোলের নামে গাছ বাজারে বেপরোয়া চাঁদাবাজি, বাড়ি ভাংচুর, নারী নির্যাতন, লুটপাট, ছিনতাই, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষসহ নানা অপকর্ম যেন একরকম স্থায়ী সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।

তারা এতটাই শক্তিশালী যে, ভোট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচনেও বিশেষ ভূমিকা রাখে সুকন তার ভাইয়েরা। জনপ্রতিনিধিরাও অসহায় এই পরিবারটির কাছে। তারাও এক প্রকার জিম্মি বলে স্বীকার করেছেন।

সন্ত্রাসী সুকন ও সহোদর জাহাঙ্গীরের অত্যাচারে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, হত্যা ছাড়া অন্য কোনো নির্যাতনের ব্যাপারে ভয়ে কেউ আইনের শরণাপন্ন হন না। সম্প্রতি সুতারচর এলাকার কাঠমিস্ত্রি আলতাজ এবং ওই এলাকার প্রাইমারী শিক্ষক শহিদকে বেদড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করার পর স্থানীয়রা মুখ খুলতে শুরু করে।

শুধু তাই নয়, রাতে সন্ত্রাসী সুকনের উপস্থিতি টের পাওয়া মাত্রই আতঙ্কে ঘরের বাতি বন্ধ করে দেন স্থানীয়রা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নানা উৎকণ্ঠায় দীর্ঘদিন এলাকাবাসীর ‘ঘুম হারাম’ বললেও অতিরঞ্জিত হবে না-এমন মন্তব্য অনেকেরই।

এদিকে সন্ত্রাসী সুকন ও জাহাঙ্গীরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ঘাটপাড়া এলাকার যুবকদের একটি অংশ নিজেরাই সিন্ডিকেট গড়ে তুলছে। তাদের উদ্দেশ্য প্রতিশোধ নেয়া। পাশাপাশি ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এক সিন্ডিকেট ভেঙে সৃষ্টি হয়েছে আরেক বাহিনীর।

ঝিলংজার শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র বৃহত্তর খরুলিয়ার বাজার পাড়া-মহল্লায় সরেজমিন ঘুরে পাওয়া গেছে উল্লিখিত এসব তথ্য।

সর্বশেষ গত ৫ই মার্চ সুতারচর এলাকার কাঠমিস্ত্রি আলতাজকে বাজারে দিনদুপুরে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত করে সড়কে ফেলে রাখে। শুধু তাকে রক্তাক্ত করেই ক্ষান্ত হয়নি। পরে তার বসত বাড়িতে গিয়ে বাড়ি ভাংচুর চালায় সুকন ও তার বাহিনীর অন্যতম সহযোগী ফারিয়াল জামাল প্রকাশ ছোটন। এসময় বাড়িতে উপস্থিত থাকা আলতাজের ছোট ভাইদেরকেও পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। ৫ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সোমবার বাড়ি ফিরেছে আলতাজ। ফের হামলার আশংকায় থানায় অভিযোগ দিতেও ভয় পাচ্ছেন বলে জানান ভুক্তভোগী আলতাজ। এছাড়াও গত কয়েকমাসে আলতাজের আপন বড় ভাই আলম, ভ্যান চালক কলিম উল্লাহ, মান্নান, রাশেদ, স্কুল শিক্ষক শহীদ, প্রবাসী নুরুল ইসলাম, শফিক, সবজী বিক্রেতা মোহাম্মদ উল্লাহ, রামুর বাবলা, ব্যবসায়ী ফকির, বাশেক, আবছার, গফুর এবং খেলা চলাকালে খেলোয়াড়দের উপর হামলাসহ অন্তত ২০ জনকে গুরুতর আহত করে। আর এইসব হামলার উদ্দেশ্য হলো এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে মোটা অংকের মাসোয়ারা আদায় করা এবং খরুলিয়া বাজার নিয়ন্ত্রনে রাখা।

অন্যদিকে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং জেলা যুবলীগের শীর্ষ এক নেতার আর্শিবাদপুষ্ট হওয়ায় জাহাঙ্গীরের নির্দেশেই সার্বিক তদারকি ও টোলের নামে গাছ বাজারে চাঁদা আদায়ের কাজ করে থাকে সুকন তার অন্যান্য সহযোগীরা। এসব কাজের আড়ালেও তার পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের নামে মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতার দাপটে অবৈধ দখল, কৃষকের কৃষি জমি ভরাট করে মাটি ও বালি বিক্রি, থানার দালালী, বিচারের নামে টাকা আত্মসাৎ, মাদক ব্যবসায়ী শেল্টার, প্রকৃতি ধ্বংস করে টাকা ইনকাম করে অল্প সময়েই কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে যাওয়া জাহাঙ্গীর তার পরিবারটির অত্যাচারে বর্তমানে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এলাকার নিরীহ মানুষেরা।

সন্ত্রাসী সুকন ও জাহাঙ্গীরের বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি, ভুক্তভোগীরা জানান, এই খরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় সুকনের দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্রসহ অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। নিজেদের বিভিন্ন অপকর্মে অস্ত্রের ব্যবহারের পাশাপাশি তারা অস্ত্র ভাড়াও দেয়।

শুধু খরুলিয়া কোনারপাড়া নয়, এমন ভীতিকর পরিবেশের চিত্র খরুলিয়ার অসংখ্য গ্রামে বিরাজ করছে। সুকনের অত্যাচার যেন এসব এলাকার অধিবাসীদের জন্য নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, গত দু’মাস আগে সুকনের সহযোগীদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখায় এক স্কুল মাষ্টারকে তার দোকানে গিয়ে হামলা চালায়। এর দু’দিন পর নুরুল ইসলাম নামের এক প্রবাসীর বাগানে গিয়ে স্বস্ত্রীক কুপিয়ে জখম করে সুকন।

এলাকায় বখাটে ও সন্ত্রাসী আছে স্বীকার করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, তাদের (সন্ত্রাসী) বিষয়ে আমরা খুবই কঠোর অবস্থানে ছিলাম এবং আছি। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে অনুরোধ করা হচ্ছে।

সংবাদ সারাদিন