কক্সবাজারে খুন ডাকাতি ছিনতাই বাড়ায় উৎকন্ঠায় মানুষ

গেল ছয় মাসে জেলায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, দম্পতি, গৃহবধূ এবং যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাসহ অন্তত ২০ জন খুন হয়েছেন। পূর্বশত্রুতা, আধিপত্য ও জমিবিরোধের পাশাপাশি ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ার কারণেও ঘটেছে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার ||

কক্সবাজার জেলায় কিছুদিন ধরেই বেড়েছে গেছে খুন ডাকাতি আর ছিনতাইরের মতো অপরাধ। গেল ছয় মাসে জেলায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, দম্পতি, গৃহবধূ এবং যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাসহ অন্তত ২০ জন খুন হয়েছেন। পূর্বশত্রুতা, আধিপত্য ও জমিবিরোধের পাশাপাশি ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ার কারণেও ঘটেছে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা। এ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশকে আরও কঠোর এবং রাতের টহল বাড়ানোর দাবি উঠেছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে জনগণকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খুনটি ঘটেছে গেলো রোববার সকালে সদর উপজেলার ঈদগাঁও ইসলামাবাদের চর পাড়ায়। পাওনা টাকা পরিশোধ করতে না পারায় নুরুল আলম নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি ওই গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে।এর আগে বৃহস্পতিবার ৩১শে ডিসেম্বর টেকনাফের হ্নীলা চৌধুরীপাড়া রাখাইন পল্লীতে পারিবারিক কলহে স্বামীর ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন তিন সন্তানের মা চ খিং ওয়ান (৪৩)। পরে অভিযান চালিয়ে ঘাতক স্বামীকে আটক করে পুলিশ।

এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই পরদিন শুক্রবার ১লা জানুয়ারি টেকনাফে একটি ইজিবাইক চুরির ঘটনার প্রতিবাদ করায় ভোর সাড়ে ৫টার দিকে খুন হন স্থানীয় যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ উসমান সিকদার। তিনি ফজরের নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হন। উসমান সাবরাং ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কচুবনিয়া এলাকার মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে।

এরআগে গত ২৯শে নভেম্বর জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে চকরিয়া পৌর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানাকে (২৮) পিটিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। তিনি ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পালাকাটা হাসেম মাস্টারপাড়ার আবদুর রকিমের ছেলে। ভরামুহুরী হাজিপাড়ায় তাদের ক্রয় করা একটি জায়গা দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালায় স্থানীয় ভূমিদস্যু-সন্ত্রাসীরা। এ খবরে সোহেলসহ কয়েকজন সেখানে ছুটে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে একা পেয়ে সোহেলকে পেছন থেকে হাতুড়ি, গাছের বাটাম দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এতে ঘটনাস্থলেই পড়ে থাকে সোহেলের নিথর দেহ। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেপে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নভেম্বরের ২৩ তারিখে কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিতে নিহত হন যুবক আনোয়ার হোসেন। তিনি বগুড়ার আদমদীঘি এলাকার তবিবুর রহমানের ছেলে। চাকরি সূত্রে পরিবার নিয়ে কক্সবাজার শহরের বিজিবি ক্যাম্প চৌধুরীপাড়ায় থাকতেন।

গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে মহেশখালীতে নিখোঁজ হওয়ার ছয় দিন পর আফরোজা আকতার (২০) নামের এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জানা যায়, শশুর বাড়ির লোকজনই ওই গৃহবধুকে হত্যা করে বাড়ির উঠানে পুঁতে রাখেন।  কালারমারছড়া ইউনিয়নের উত্তর নলবিলা গ্রামে তাঁর শ্বশুরবাড়ির উঠোনের মাটি খুঁড়ে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

এর কয়েকদিন আগে সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের মুহুরীপাড়ায় বন্ধুর সাথে কথা কাটাকাটির জেরে মো: সাবিল নামের এক কলেজ ছাত্র খুন হয়। নিহত সাবিল ওই এলাকার হাকিম উল্লাহর পুত্র ও কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ২য় বর্ষের ছাত্র।

হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডাকাতি ও চুরির ঘটনাও। গত ২৭শে নভেম্বর চকরিয়ায় গভীর রাতে সৌদিয়া পরিবহনের একটি বাস ৩৩ জন যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে বাসটি চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের হাঁসেরদিঘি এলাকায় পৌঁছালে অস্ত্রের মুখে চালককে জিম্মি করে বাসের যাত্রীদের মারধর করে ডাকাত দল। কয়েক যাত্রী প্রতিবাদ করলে তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে তাঁরা। এ সময় চার যাত্রী গুলিবিদ্ধ হন। সেদিন ওই গাড়িতে থাকা সব যাত্রীর স্বর্ণালংকারসহ সর্বোচ্চ লুট করে নিয়ে যান ডাকাতদল।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) এর একাধিক নেতারা এসব অপরাধ রোধে পুলিশকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান। তারা বলছেন, পুলিশি তৎপরতা শুধু গ্রেফতার অভিযানের মধ্যেই সীমিত রাখলে চলবে না। অপরাধীরা যাতে শাস্তি পায়, তার সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। ছিনতাই এবং চুরি বন্ধে পুলিশ টহল জোরদার এবং প্রয়োজনে ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিউনিটি পুলিশের সদস্যদেরও সক্রিয় করারও আহ্বান জানান তারা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম হঠাৎ করেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, সব হত্যাকাণ্ড কিন্তু পরিকল্পিত নয়। বিচ্ছিন্ন অনেক কারণও এর পেছনে রয়েছে। তবে পুলিশ সবক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। ছিনতাই ও চুরি রোধেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে টহল জোরদার করা হয়েছে এবং আগামীতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

সংবাদ সারাদিন