এন্তার অভিযোগ রহনপুর ইউসুফ আলী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে

জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউসুফ আলী সরকারী কলেজটি ২০১৮ সালে সরকারি করা হয়। এরআগে ২০১৬ সালের সরকারি নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী দৈনন্দিন খরচ ছাড়া কলেজের উন্নয়নে কোন ধরনের প্রকল্প গ্রহণ ও ব্যয় নির্বাহ করতে পারবেন না অধ্যক্ষ। কিন্তু ২০১৫ সালে কলেজে যোগ দেয়ার পর থেকেই একের পর এক অনিয়ম-দূর্নীতিতে নিজেকে জড়িয়েছেন অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম।

|| জহুরুল ইসলাম জহির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ||

চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর ইউসুফ আলী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এন্তার অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনি কলেজে যোগ দেয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানানো অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ উঠতে থাকে। তবে এসব অভিযোগ নিয়ে তার অবস্থান জানতে চাইলে সবকিছু অস্বীকারতো করেনই। উপস্থিত টিভি চ্যানেলের  ক্যামেরার সামনে থেকেও উঠে যান অধ্যক্ষ।

জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউসুফ আলী সরকারী কলেজটি ২০১৮ সালে সরকারি করা হয়। এরআগে ২০১৬ সালের সরকারি নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী দৈনন্দিন খরচ ছাড়া কলেজের উন্নয়নে কোন ধরনের প্রকল্প গ্রহণ ও ব্যয় নির্বাহ করতে পারবেন না অধ্যক্ষ। কিন্তু ২০১৫ সালে কলেজে যোগ দেয়ার পর থেকেই একের পর এক অনিয়ম-দূর্নীতিতে নিজেকে জড়িয়েছেন অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম।

অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রশিদুল ইসলাম জানান, পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা ও বিভিন্ন ফান্ডের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতেন অধ্যক্ষ স্যার। আমরা অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কলেজে অনেকগুলো উন্নয়ন ফান্ড রয়েছে সেগুলোর জন্য এসব অর্থ নেয়া হয়।  এগুলো কোনভাবেই অতিরিক্ত নয়।

কলেজ ছাত্র ফারুক হোসেন মিলন জানান, আমাদের অধ্যক্ষ স্যারের অনেক দুর্নীতি রয়েছে। কলেজের ফরম পুরণ, সার্টিফিকেট নেয়ার সময় অতিরিক্ত টাকা আদায় করে থাকেন। এ টাকাগুলো রশিদ ছাড়াই ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে নেয়া হয়। সরকারী কলেজে পড়ে যদি অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় তাহলে অন্য প্রাইভেট কলেজেই পড়াই ভাল। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সরকারী কলেজে পড়াটা গ্রামাঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এটার প্রতিকার চাই আমরা।

কলেজ ছাত্র মোমিনুল হক জানান, অতিরিক্ত টাকা নেয়ার জন্য অত্র কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেও কোন লাভ হয়নি। প্রশাসন এবিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেননি। আমরা কলেজের অতিরিক্ত নেয়া থেকে বাঁচতে চাই আমরা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও সরকারি বিধি লঙ্ঘণ করে হোস্টেল সংস্কার, কলেজ ক্যাম্পাসের প্রায় ৫০টি গাছ কেটে নেয়া, পুকুর ও জমি লিজ দেওয়া এবং ফল বাগান বিক্রি করেছেন টেন্ডার ছাড়াই, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, আমবাগান বিক্রি ও দাতার জমি দখল করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের নামে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। ফাঁকি দিয়েছেন সরকারি ভ্যাট ও ট্যাক্সও। আর এসব অনিয়ম-দূর্ণীতির বিষয়ে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন এবং প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা।

জমি দাতার প্রতিনিধি ইয়াসিন আলী জানান, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাতাদের অতিরিক্ত ৯৯ শতাংশ জমি দখল করে নির্মাণ করেছেন সীমানা প্রাচীর। অনিয়ম-দূনীর্তি করেছেন অনার্স বিল্ডিং তৈরিতেও। এসব অনিয়ম-দূর্নীতির বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও মেলেনি কোন প্রতিকার। থামানো যায়নি অধ্যক্ষের অনিয়ম-দূর্নীতি।

ইয়াসিন আলী আরো জানান, গত বছরের ২রা ডিসেম্বর অভিযোগ দাখিল করলেও ইউএনও  প্রায় ২ মাস পর গত ১লা ফেব্রুয়ারি তদন্ত কাজে শুনানীর জন্য তার কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু অসুস্থতার কারনে সেদিন শুনানীতে অংশ নিতে পারেননি। সর্বশেষ এ বিষয়ে গত ৮ই মার্চ স্থগিত হওয়া শুনানী সম্পন্ন হয়। তিনি অভিযোগ করেন ইউএনওকে অভিযোগ দেয়ার ২ মাস তিনি এ বিষয়ে রহস্যজনক নীরবতা পালন করেন।

তিনি আরও অভিযোগ করেন ইউএনও শুনানীতে অধ্যক্ষের পক্ষ নেয়ার চেষ্টা করেছেন এবং তাকে বিভিন্নভাবে অভিযোগ থেকে নিবৃত্ত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন। দুর্নীতি-অনিয়মকারী অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলামের হাত থেকে কলেজটি রক্ষার জন্য সরকারসংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

কলেজের সাবেক  জিবি (গর্ভনিং বডি) সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলবুল জানান, আমি জিবি সদস্য থাকাসময়ে অধ্যক্ষ কলেজের সীমানা প্রাচীর, অনার্স ভবন, হোস্টেল সংস্কার কলেজ ক্যাম্পাসের প্রায় ৫০টি গাছ কেটে এগুলো অনিয়মের মধ্যেই করেছে কোন টেন্ডার ছাড়া এসব কাজ করেছে। জিবির কয়েকজন সদস্যকে হাত করেই অধ্যক্ষ এসব অনিয়ম করতে পেরেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা দাতা সদস্যের অভিযোগগুলো তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। প্রমানিত হলে তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তকরণ ও শিক্ষক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিল থেকেও লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় কলেজে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অধ্যক্ষের অনিয়ম-দূর্ণীতির তদন্তের দাবি করেন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।

সংবাদ সারাদিন