উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় রেশম কারখানা বন্ধ ১৯ বছর ধরে

‘কারখানা বন্ধ হওয়ায় আমাদের জীবনটা থমকে গেছে। জানি না কবে আবারো আগের মতো একটু শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারব। এটি চালু হলে আমাদের মতো অনেকেরই এখানে কাজের ব্যবস্থা হবে। তাই অবিলম্বে এটি চালুর দাবি জানাচ্ছি।’

|| ওয়াদুদ হোসেন ঠাকুরগাঁও থেকে ||

উত্তরবঙ্গের দুটি রেশম কারখানার মধ্যে একটি রাজশাহীতে। আরেকটি ঠাকুরগাঁও জেলায়। এ দুটোর মধ্যে রাজশাহীর কারখানাটি সম্প্রতি চালু হলেও ঠাকুরগাঁওয়েরটি চালুর কোন উদ্যোগ নেই। তবে বন্ধ থাকা রেশম কারখানাটি শিগগিরই চালু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম। এমন আশ্বাসেও ভরসা পাচ্ছেন না কারখানার শ্রমিক ও রেশমচাষিরা। কেননা গেল ১৯ বছর ধরে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার এমন আশ্বাস এরআগে তারা শুনেছেন অনেকবার।

এদিকে দীর্ঘবছর ধরে বন্ধ থাকায় অব্যবহৃত ও সংস্কারের অভাবে কারখানার দেয়ালসহ বিভিন্ন দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। মেশিনসহ প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রয়েছে অকেজো অবস্থায়।

জেলা রেশম বোর্ডের তথ্যমতে, ক্রমাগত লোকসানের ফলে ২০০১ সালের ডিসেম্বরের দিকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় ঠাকুরগাঁওয়ের এই রেশম কারখানা। এরপর থেকে আর চালু হয়নি এটি। ফলে বেকার দিন পার করছেন কারখানার ১৩৪ জন শ্রমিক ও প্রায় ১০ হাজার রেশমচাষি।

এরইমধ্যে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে করা হয়েছে কারখানার আধুনিকায়ন। পুন:স্থাপন করা হয়েছে যন্ত্রপাতি। বাড়ানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট মেশিনযন্ত্রাংশ। বিএমআরই করার পরও কারখানাটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কোটি কোটি টাকার মূল্যবান যন্ত্রপাতি মরিচা ধরে প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৭-৭৮ সালে আরডিআরএস নামে একটি বেসরকারি সংস্থা ঠাকুরগাঁওয়ের দুরামারিতে (বর্তমানে বিসিক শিল্প নগরীতে) এই রেশম কারখানা স্থাপন করে। পরবর্তী সময়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ১৯৮১ সালে কারখানাটি রেশম বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করার পর থেকেই ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি আর অনিয়মের কারণে লোকসান দিয়ে আসছে এই কারখানা। পর্যায়ক্রমে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকায়। অব্যাহত লোকসানের অজুহাতে ২০০১ সালে কারখানাটি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। বেকার হয়ে পড়েন এতে কর্মরত ১৩৪ জন শ্রমিক ও প্রায় ১০ হাজার স্থানীয় রেশমচাষি।

অবশেষে ২০১৭ সালের ৩রা এপ্রিল বন্ধ হয়ে যাওয়া রেশম কারখানা পুনরায় চালু করার উদ্যোগে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ঠাকুরগাঁওয়ে রেশম বোর্ড চালুর বিষয়ে ১১ সদস্যের একটি দল কারখানাটি পরিদর্শন করেছিল। সেসময়ে কারখানা চালুর আশ্বাস দিয়ে তারা বলেছিলেন, এই রেশম কারখানাটি চালুর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের গঠন করা কমিটির ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে যেকোনো সময় এটি চালু হবে।

আলী আফজাল, জয়নাল, রুবেলসহ বেশ কয়েকজন রেশমচাষি বলেন, ‘কারখানা বন্ধ হওয়ায় আমাদের জীবনটা থমকে গেছে। জানি না কবে আবারো আগের মতো একটু শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারব। এটি চালু হলে আমাদের মতো অনেকেরই এখানে কাজের ব্যবস্থা হবে। তাই অবিলম্বে এটি চালুর দাবি জানাচ্ছি।’

ঠাকুরগাঁও রেশম বোর্ডের সহকারী পরিচালক সুলতান আলী বলেন, ‘কারখানাটি চালু হলে রেশম চাষের সঙ্গে যুক্ত চাষিরা পুনরায় কাজের সুযোগ পাবে। শ্রমিক ও চাষিদের কথা ভেবে অবিলম্বে কারখানাটি পুনরায় চালু করা হলে ভালো হয়। আমরা এরই মধ্যে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।’

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কারখানাটি চালু করার বিষয়ে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে একটি চিঠি এসেছে। স্বল্প পরিসরে হলেও চালু হবে এটি।’

জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ‘আমার আশা করছি সামনের বছরের প্রথম দিকেই (জানুয়ারি) চালু হবে কারখানাটি। এটি চালু হলে এই জেলায় মানুষের কাজের সুযোগ বাড়বে।’

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন