আত্রাই বাঁধের গাছ কেটে সাবাড় কর্তৃপক্ষের একেকজনের একেক কথা

রাস্তার আম ও কাঁঠাল গাছ তাদের লাগানো। এখন তারা (প্রদীপ ও তার লোকজন) জোর করে গাছ কেটে নিচ্ছেন। গাছ কেটে নেয়ার কারণ জানতে চাইলে জানানো হচ্ছে, ‘ফল খেয়েছেন। গাছ তো খেতে পারবেন না।’

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ ||

নওগাঁর মান্দায় আত্রাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের রাস্তার গাছ কেটে সাবার করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে কোন প্রকার কর্তৃপক্ষীয় অনুমোদন ছাড়াই উপজেলার নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের পার-নুরুল্লাবাদ এলাকার প্রায় ৬০০ ফুট বাঁধের গাছ কেটে নেয়া হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, শুক্রবার ৯ই এপ্রিল ছুটির দিনে কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে এলাকায় প্রভাবশালী প্রদীপ হাওলাদার ও তার লোকজন গাছগুলো কেটে বিক্রিও করে দিয়েছেন।

নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের পার-নুরুল্লাবাদ এলাকায় আত্রাই নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ৬০০ ফুট রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। কিছুদিন আগে বাঁধ সংস্কারের টেন্ডার হয়েছে। এ সুযোগে বাঁধের রাস্তায় থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কোনো প্রকার কর্তৃপক্ষীয় অনুমোদন ছাড়াই গাছগুলো কেটে নিয়েছেন পাঁজরভাঙ্গা গ্রামের মৃত সুবল চন্দ্র হাওলাদারের ছেলে প্রদীপ হাওলাদার ও তার লোকজনেরা।

স্থানীয় বাসিন্দা আমজাদ হোসেন, আনোয়ার হোসেন, আমিনুল ইসলাম অভিযোগ করেন, রাস্তার আম ও কাঁঠাল গাছ তাদের লাগানো। এখন তারা (প্রদীপ ও তার লোকজন) জোর করে গাছ কেটে নিচ্ছেন। গাছ কেটে নেয়ার কারণ জানতে চাইলে জানানো হচ্ছে, ‘ফল খেয়েছেন। গাছ তো খেতে পারবেন না।’

এদিকে গাছের ক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাঁধের ৬০০ ফুটের মধ্যে যত গাছ আছে, তা ২৫ হাজার টাকা দিয়ে প্রদীপ হাওলাদারের কাছ থেকে কিনেছি।’

অথচ স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বাঁধের রাস্তায় দেড় শ’র বেশী আম, কাঁঠাল, জাম ও বাবলাসহ এসব গাছের দাম কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। তারা বলছেন, টাকাটাই বড় কথা নয়, এসব গাছের কারণে স্থায়িত্ব পেয়েছিল বাঁধ।

জানতে চাইলে প্রদীপ হাওলাদার বলেন, ‘উপজেলা বন কর্মকর্তা আহমদ আলী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মুনসুর আলীর মৌখিক নির্দেশে আমরা গাছগুলো কেটেছি।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস সহায়ক মুনসুর আলী বলেন, ‘রাস্তা সংস্কারে মাটির কাজের জন্য টেন্ডার হয়েছে। রাস্তার গাছ অপসারণ করতে ইতোমধ্যে উপজেলা বন বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে কে বা কারা গাছ কাটছে, তা আমার জানা নেই। আর গাছ কাটার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততাও নেই।’

উপজেলা বন কর্মকর্তা আহমদ আলী মণ্ডল বলেন, ‘গাছ কাটার ব্যাপারে কোনো টেন্ডার হয়নি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা মৌখিকভাবে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। আমি জানিয়েছি কিছু নিয়মনীতি আছে। সে অনুসারে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বরাবর লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে।’

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান বলেন, ‘গাছ কাটার জন্য বনবিভাগকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে গাছের টেন্ডার হয়েছে কি-না তা আমার জানা নেই।’

সংবাদ সারাদিন