আজ ঈদুল আজহা ঈদজামাত কখন কোথায়

আজ পবিত্র ঈদুল আজহা। পার্থিব লোভ, লালসা, মোহ মাৎসর্যের মত রিপুকে দমনের সর্বাত্মক চেস্টার অংশ হিসেবে প্রতি বছরের মত এবারো এসেছে ত্যাগের মহিমায় নিজেকে উদ্ভাসিত করবার সুযোগ নিয়ে কোরবানির ঈদ। তবে এবারে বিশেষ এক পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মুসলমানদের ধর্মীয় এই উৎসব।

|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||

আজ পবিত্র ঈদুল আজহা। পার্থিব লোভ, লালসা, মোহ মাৎসর্যের মত রিপুকে দমনের সর্বাত্মক চেস্টার অংশ হিসেবে প্রতি বছরের মত এবারো এসেছে ত্যাগের মহিমায় নিজেকে উদ্ভাসিত করবার সুযোগ নিয়ে কোরবানির ঈদ। তবে এবারে বিশেষ এক পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মুসলমানদের ধর্মীয় এই উৎসব।

বিশ্ব আজ এক প্রাণঘাতি ভাইরাস করোনায় সংক্রমিত। এই ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে রোজার ঈদের মত কোরবানির ঈদের জামাতও পড়তে হবে মসজিদে। মাঠে ময়দানে কোন জামাত অনুষ্ঠান করা যাবে না। মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি এবং করা যাবে না কোলাকুলি। সবাইকে বাসা থেকে ওজু করে মসজিদে যেতে হবে মাস্ক পরে। কাতারে দাঁড়াতে হবে জনদূরত্ব রেখে।

আবহাওয়া ভালো থাকলে এমনিতে দেশে ঈদের প্রধান জামাতটি হয় ঢাকায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সেই জামাতে নামাজ পড়েন ঈদের সকালে। কিন্তু মহামারীর কারণে রোজার ঈদের মত এবার কোরবানির ঈদেও তা হচ্ছে না।

প্রতিবছর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের আয়োজন হয়। কিন্তু মহামারীর মধ্যে খোলা মাঠে ঈদ জামাত আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় রোজার ঈদের মত এবারও জামাত হচ্ছে না শোলাকিয়ায়।

ঢাকায় সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় এবার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঈদ জামাতের আয়োজন থাকছে না। মসজিদগুলো নিজেদের ব্যবস্থাপনায় ঈদ জামাতের আয়োজন করছে। ঈদের জামাতের সময়ে মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না, নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিস্কার করতে হবে।

অজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে বলা হচ্ছে সবাইকে। মসজিদে অজুর স্থানেও সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে বলা হয়েছে।

ঢাকায় কোথায় কখন হবে ঈদের নামাজ

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের বাইরে ঢাকার মসজিদগুলোতে এক বা একাধিক ঈদ জামাতের ব্যবস্থা থাকছে। রাজধানীর গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদে সকাল ৬টা, সকাল ৮টা এবং সকাল ১০টায় ঈদের তিনটি জামাত হবে।

মিরপুর কাজীপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তিনটি জামাত হবে সকাল ৭টায়, সকাল ৮টায় এবং ৮টা ৪৫ মিনিটে। সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা, ঢাকা মসজিদ এবং ধানমণ্ডি ঈদগাহ মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের জামাত হবে।

পুরান ঢাকা তারা মসজিদ, বংশাল বড় মসজিদ, নিমতলী ছাতা জামে মসজিদ, নাজিরা বাজার আহলে হাদিস মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং সকাল সাড়ে ৮টায় দুটি করে ঈদের জামাত হবে।

চকবাজার জামে মসজিদ, যাত্রাবাড়ী মারকাজ জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং লাল শাহী মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ হবে।

ধানমণ্ডি তাকওয়া মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ও সকাল ৯টায়, ধানমণ্ডির বায়তুল আমান মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ও সাড়ে ৮টায় দুটি করে জামাত হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ এবং শহীদুল্লাহ্ হল জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদ জামাত হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

চট্টগ্রামে ঈদের নামাজ

অন্য বছর চট্টগ্রামে ঈদের প্রধান জামাত হয় জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে। এবারও ঈদের প্রধান জামাত ওই মসজিদে হবে, তবে মাঠে নয়, হবে মসজিদের ভেতরে।

সকাল পৌনে ৮টায় জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে প্রথম এবং পৌনে ৯টায় দ্বিতীয় জামাত হবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা কালাম চৌধুরী বলেন, মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রথম জামাতে জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে ঈদের নামাজ পড়বেন।

“সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে স্থানীয় কাউন্সিলরদের ব্যবস্থাপনায় একটি করে ঈদ জাহাত আয়োজন করা হচ্ছে, তবে সবই হবে মসজিদে। পাশাপাশি স্থানীয় মসজিদগুলোতে ঈদের জামাতের আয়োজন করতে মসজিদের পরিচালনা কমিটিগুলোকে বলা হয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে।”

অন্য বছর সিটি করপোরেশন নগরীর ১৬৪ স্থানে ঈদ জামাতের আয়োজন করত। এর মধ্যে ৪১টি ওয়ার্ডের কয়েকটি বড় মসজিদ সংলগ্ন মাঠেও ঈদের নামাজ আয়োজন করা হত।

এবার খোলা স্থানে ঈদের কোনো জামাত আয়োজন করা হচ্ছে না বলে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটির আয়োজনে অন্য বছর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম মাঠে ঈদ জামাত হত, এবার তা হচ্ছে না।

বরিশালের কোথায় কখন নামাজ

বরিশালে এবার ঈদের প্রধান জামাত হবে সকাল ৮টায় কালেক্টরেট জামে মসজিদে। জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাতে অংশ নেবেন।

মহামারীর মধ্যে ঈদুল ফিতরের মত কোরবানির ঈদেও ঈদগাহ বা খোলা জায়গায় ঈদ জামাতের আয়োজন রাখা হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।

তিনি বলেন, মসজিদগুলোতে সকাল ৭টা থেকে ১০টার মধ্যে এক বা একাধিক ঈদের জামাত হবে। যারা ঈদের নামাজে অংশ নেবেন, তাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

বরিশাল জেলা পুলিশ লাইনস জামে মসজিদে সকাল ৮টা থেকে আধা ঘণ্টা পরপর মোট চারটি জামাত হবে। জামে এবাদুল্লাহ মসজিদে সকাল ৮টা, সাড়ে ৮টা ও ১০টায় হবে ৩টি জামাত।

সকাল ৮টা ও ৯টায় দুটি জামাত হবে জামে কশাই মসজিদে। একই সময় দুটি জামাত হবে জামে রায়তুল মোকারম মসজিদে। পোর্ট রোড কেরামতিয়া জামে মসজিদে সকাল ৭টা ও ৮টায় দুটি জামাত হবে।

এছাড়া আদালতপাড়া জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায়, পূর্ব বগুড়া রোড জামে মসজিদ ও কেন্দ্রীয় কারাগার জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের জামাত হবে।

খুলনাতে নামাজ হবে কোথায় কখন

খুলনায় ঈদুল আজহার প্রধান জামাত হবে শনিবার সকাল ৮টায় টাউন হল জামে মসজিদে। একই স্থানে দ্বিতীয় জামাত হবে সকাল ৯টায়। এছাড়া কোর্ট জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায়।

খুলনা সিটি করপোরেশন পরিচালিত বায়তুন নূর জামে মসজিদ কমপ্লেক্সে সকাল ৮টা ও ৯টায় দুটি জামাত হবে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে সকাল ৭টায় এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে ঈদের জামাত হবে সকাল ৮টায়।

ময়লাপোঁতা মোড়ের বায়তুল আমান জামে মসজিদে পৌনে ৭টা ও পৌনে ৮টায় দুটি জামাত হবে। নগরীর ইকবাল নগর জামে মসজিদে একমাত্র ঈদ জামাত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়।

রূপসা স্ট্যান্ড রোডে বায়তুশ শরফ মসজিদ কমপ্লেক্স ও রূপসা ফেরিঘাটে হযরত আবুবকর সিদ্দিকী (রা.) জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় জামাত হবে। হাজী মেহের আলী সড়কের মসজিদ-এ-মিনাতে জামাত হবে সকাল ৮টায়।

রেলিগেট বায়তুল ইলাহ জামে মসজিদ, মহেশ্বরপাশা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, কুলি বাগান ইস্পাহানি কলোনি জামে মসজিদ, দৌলতপুর বেবিটেক্সি স্ট্যান্ড জামে মসজিদ, ইসলামবাগ জামে মসজিদে সকাল ৮টায় জামাত হবে।

আর মহেশ্বরপাশা সাহেব পাড়া বায়তুন নূর জামে মসজিদে সাড়ে ৭টা ও সাড়ে ৮টায় হবে দুটি জামাত। এছাড়া গিলাতলা গাজীপাড়া বায়তুন নাজাত জামে মসজিদে সকাল ৮টায়, গিলাতলা বায়তুল হামদ জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায়, মোল্লাপাড়া জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায়, শেখপাড়া বায়তুল আমান জামে মসজিদে সাড়ে ৭টায়, গিলাতলা বাজার (ফাঁড়ি) মসজিদে সকাল ৭টায়, শিরোমনি পূর্বপাড়া বায়তুল আক্সা জামে মসজিদে সকাল ৮টায়, শিরোমণি বায়তুল মা’মুর (বাজার) জামে মসজিদে সকাল ৭টায়, ৮টায় ও ৯টায় তিনটি, ফুলবাড়ীগেট বাজার জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায়, ফুলবাড়ীগেট বায়তুল আমান জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের জামাত হবে।

খুলনান জেলা প্রশাসক মো. হেলাল হোসেন বলেন, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ঈদের জামাতে অংশ নিতে হবে।

সিলেটের কোথায় কখন ঈদের জামাত

সিলেটে হযরত শাহজালাল (র.) জামে মসজিদে এবার ঈদুল আজহার প্রধান জামাত হবে। এ মসজিদের খতিব আসজাদ আহমদ জানান, মসজিদের ভিতরে সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ৮টায় ঈদুল আজহার প্রধান জামাত হবে। মসজিদের বাইরে কেউ নামাজে অংশ নিতে পারবেন না।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খোলা মাঠে বা ময়দানে এবার ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে না। ফলে সিলেটের শাহী ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহার প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে না বলে তিনি জানান।

সিলেট জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার সিলেটের মসজিদগুলোতে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

জেলায় পাঁচ হাজার ২০৩টি জামে মসজিদ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মসজিদগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে ঈদের জামাত আয়োজন করতে বলা হয়েছে।

রংপুরের যেসব স্থানে ঈদের জামাত

রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সৈয়দ এনামুল কবির (সার্বিক) বলেন, সকাল ৮টায় কোট মসজিদে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় কেরামতিয়া মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া অন্যান্য এলাকায় মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় হবে।

রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান জানান, নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে মসজিদে ঈদুল আজাহার জামাত করতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

রাজশাহীতে ঈদের নামাজ কোথায় কখন

রাজশাহীতে হযরত শাহমখদুম (রহ.) দরগা জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত হবে। জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল সাংবাদিকদের জানান, ঈদুল ফিতরের মত ঈদুল আজহার নামাজও মসজিদ কমিটির নির্ধারণ করা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হবে।

“তাই জেলা প্রশাসন নামাজের সময় নির্ধারণ করে দেয়নি। মসজিদ কমিটি তাদের সুবিধামত নামাজের সময় নির্ধারণ করবে। তারপর মাইকিং করে তা জানিয়ে দেবে।” তবে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে সব জায়গায় ঈদের নামাজ হবে বলে জেলা প্রশাসক জানান।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, “আমি রাজশাহীর কালেক্টরেট মসজিদে নামাজ পড়ব। সেখানে জামাত সকাল ৮টায়।”

ময়মনসিংহে কোথায় কোথায় হবে ঈদের নামাজ

ময়মনসিংহে কোরবানির ঈদের প্রধান জামাত হবে আঞ্জুমান ঈদগাহ মসজিদে সকাল ৮টায়। পরে ৮টা ৪৫ মিনিটে এবং সাড়ে ৯ টায় আরও দুটি জামাত হবে। আকুয়া মার্কাজ মসজিদে সকাল ৭টা ও ৮টায় এবং বড় মসজিদে সকাল ৮টা ও সাড়ে ৮টায় দুটো করে জামাতের আয়োজন থাকছে।

জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, “করোনাভাইপ্রতিরোধে সবাইকে সতর্ক থেকে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে। নামাজে দাঁড়ানোর সময় এক কাতার ফাঁকা রেখে শারীরিক দুরুত্ব বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

সকলেই এ নির্দেশনা মেনে চলবেন আশা প্রকাশ করেন মিজানুর বলেন, সাধারন মানুষকে সচেতন করার জন্য ঈদের দিন মাঠে প্রশাসনের লোকজন ও কাজ করবে। এছাড়া সবাইকে মাস্ক পরে ও জায়নামাজ সঙ্গে নিয়ে মসজিদে যাওয়ার জন্য আহ্বানও জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন