দিনে দুপুরে মাটি লুট হচ্ছে গাজীপুরে যাচ্ছে ইটভাটাতে

কোথাও  জোর করে, কোথাও চুরি করে আবার কোথাওবা প্রভাবশালীদের চাপে ফসলী জমির মাটি দিতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। মাটি লুটের ঘটনায় কালিগঞ্জ থানায় মামলাও হয়েছে।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, গাজীপুর ||

গাজীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এসব মাটি কেটে নেয়ার অভিযোগ প্রভাবশালী ব্যক্তি ও মাটিকাটার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। কোথাও  জোর করে, কোথাও চুরি করে আবার কোথাওবা প্রভাবশালীদের চাপে ফসলী জমির মাটি দিতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। মাটি লুটের ঘটনায় কালিগঞ্জ থানায় মামলাও হয়েছে। সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, মাটি খেকুরা ফসলি জমি থেকে মাটি লুট করে ইটভাটায় বিক্রি করছে। কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও, কড়িহাতা, সনমানিয়া, ঘাগুটিয়া, বারিষাব, রায়েদ, টোক ও সিংহশ্রী এলাকার ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের লতিফপুর এলাকায় অনেকগুলো ইটভাটার মাটি সংগ্রহ করছে কৃষিজমি থেকে।

ছবি: সংগৃহিত

মামলা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কালিগঞ্জ উপজেলার মালিবন্ধ মৌজার নাজমুল হুদার ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষি জমি থেকে খননযন্ত্র (ভেকু) দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করেছে মাটিকাটা সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। ওই সব জমির মাটি কেটে ২৫ থেকে ৩০ ফুট গভীর গর্ত করে পঞ্চাশ লক্ষাধিক টাকার মাটি লুট করার অভিযোগে চারজনকে আসামী করে কালিগঞ্জ থানায় মামলা করেন জমির মালিক। একই এলাকার এ কে এম শফিউন নূরের সাথে শত্রুতা করে তার কৃষিজমির মাটি কেটে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে মামলা করেছেন শফিউন নূর।

মাটিকাটা সিন্ডিকেটের বিচার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা মামলার বাদী নাজমুল হুদা বলেন, ঢাকায় থাকার সুযোগে আমার কয়েকটি জমির মাটি ৩০ ফুটের বেশী গভীর করে কেটে নিয়ে পঞ্চাশ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি করেছে। এসকল মাটিকাটা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে কৃষি ও পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা কালিগঞ্জ থানার সাব-ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, প্রধান আসামি মাহবুবুল আলম খোকাকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছি। বাকী আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

কাপাসিয়া উপজেলার কড়িহাতা-আড়াল ও ধানদিয়ার মাঝখানের বিশাল এলাকার ফসলি জমি থেকে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মাটি বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।

ছবি: সংগৃহিত

জমির শ্রেণী পরিবর্তন রোধে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা পরিবেশ অধিদফতর কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পরিবেশবিদ ও সচেতন মহলের। উপজেলার পাখরী বাজারসংলগ্ন সরকারি ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার সংবাদ পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে খননযন্ত্র (ভেকু) আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয়া হয়। স্থানীয়রা  দাবী করেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির মাটি কেটেছেন তারা।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কাপাসিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন, আর এস রেকর্ডভূক্ত পাখরী বাজারসংলগ্ন খাস জমি থেকে মাটি কাটার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তিনি আরো বলেন, পরিবেশ অধিদফতর গাজীপুর অফিসকে জানানোর পর ইটভাটার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হচ্ছে।

ছবি: সংগৃহিত

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) গাজীপুর আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসান ইউসুফ খান বলেন, কৃষিজমির মাটি কেটে ফেলায় এই এলাকা থেকে ফসলের আবাদ কমে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এসব কৃষিজমি রক্ষা করা সম্ভব না। জমির শ্রেণী পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে খুব দ্রুত, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরী। হাউজিং কোম্পানি এবং শিল্পকারখানার মালিকরা জলাভূমি ভরাট করে কারখানা ও আবাসনসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলছে। তিনি মনে করেন, সাংবিধানিক ভাবেই ভূমি সংরক্ষণের দায়িত্ব সরকারের।

পরিবেশ অধিদফতরের গাজীপুরের উপ পরিচালক মো. আব্দুস সালাম সরকারের মোবাইল ফোনে কয়েকবার ফোন দিয়ে রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সংবাদ সারাদিন