|| সারাবেলা প্রতিনিধি, জামালগঞ্জ (সুনামগঞ্জ)||
করোনা মহামারীতে পুস্তক ব্যবসায়ীরা গভীর সঙ্কটে দিন কাটাচ্ছে। সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজার, নোয়াগাঁও বাজার, সেলিমগঞ্জ বাজার, মান্নানঘাটসহ বিভিন্ন বাজারের বইয়ের দোকানে দেখা যায় ক্রেতাশূন্য। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সাচনা বাজারের পাঠচক্র নামের বইয়ের দোকানে অবস্থান করার পর দেখা যায় একজন ক্রেতা ছোট একটি পঞ্জিকা নিতে এসেছে। দাম ৮০ টাকা। ওইদিন সময়ের মধ্যে মাত্র একজন ক্রেতা ভিড়ে ওই দোকানটিতে।
দোকানী জানায়, বনি করার কারণে পঞ্জিকাটি কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে। এমন অবস্থা পুস্তক ব্যবসায়ী ও লাইব্রেরি মালিকদের প্রতিটি দোকানেই। বিভিন্ন দোকান ঘুরে জানা যায়, দীর্ঘমেয়াদে করোনা মহামারীতে উপজেলার বই বিক্রেতারা গভীর সঙ্কটে পড়েছেন। তাদের দুর্দিনের অন্ত নেই। কারও দুই মাস, কারও চার মাস দোকান ভাড়া বাকি। আবার কেউ ঋণ করে ভাড়া পরিশোধ করছেন। অনেকেই কর্মচারী বিদায় করে একাই পরিশ্রম করে দোকান চালাচ্ছেন। অনেকে আবার পেশা বদল করে দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় ১৮ মার্চ এই রোগে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এ সময় থেকে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ফলে উপজেলার বইয়ের ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় ধস নেমেছে। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে অনেকে ধারদেনা করছে। উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক বইয়ের দোকানের ব্যবসায়ীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বই বিক্রেতাদের চোখেমুখে হতাশার চাপ লক্ষ্য করা যায়।
জামালগঞ্জের মা লাইব্রেরির মালিক ধীরেন্দ্র কুমার তালুকদার জানান, বছরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় দোকান ভাড়া নিয়েছি। প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাড়া গুণতে হয়। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেচাবিক্রি শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। যা বিক্রি হয় তা দিয়ে ঘর ভাড়া ও সংসার চালানো যাচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, ব্র্যাক ও গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ২ লাখ টাকা এবং অগ্রণী ও জনতা ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দোকানে বিনিয়োগ করেছি। তাদের আর কোন আয়ের পথ নেই। টাকা ও লভ্যাংশ পরিশোধ করা যাচ্ছে না। প্রতি মাসে দোকান ভাড়া ও ঋণের কিস্তি যোগার করতে ধারদেনা করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রেতা সমিতি জামালগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও জুঁই লাইব্রেরির সত্বাধিকারী রিপন তালুকদার জানান, এই উপজেলায় আমাদের ছোট-বড় বইয়ের দোকানের সংখ্যা প্রায় ৫০টিরও বেশি। করোনার কারণে ৮ জন ব্যবসায়ী তাদের দোকান বন্ধ করে অন্য পেশায় চলে গেছেন। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় ব্যবসীদের ঋণ করে চলতে হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবে খোলবে তাও অনিশ্চিত। এদিকে অন্য কোন আয়ের পথ না থাকায় ঘর ভাড়া ও কর্মচারীর খরচ চালাতে কষ্ট হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। করোনাকালীন লকডাউনে আমরা বড় অসহায়। আমাদের এই দুর্দিনে কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি।
তিনি আরও বলেন, করোনার এই দুর্যোগে দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা সরকারি প্রণোদনা পাচ্ছেন। কিন্তু সাধারণ বই ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বই বিক্রেতারা সরকারি প্রণোদনা পেলে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারতেন। প্রণোদার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ স্থানীয় প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি পাঠচক্রের সত্বাধিকারী সঞ্জয় কুমার রায় জানান, স্কুল কলেজ বন্ধ থাকার কারণে বেচাকেনা নেই। দোকান ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সকলকে। সেই সাথে ব্যাংক ঋণ ও এনজিও কিস্তি অনেকেরই বকেয়া পড়ে গেছে। করোনার আগে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি করতাম। বর্তমানে ৫০০ টাকাও বিক্রি হয় না। দোকানে বই-খাতা ও অন্যান্য সামগ্রীসহ ২০-২৫ লাখ মালামাল থাকা সত্বেও কোনদিন বনি হয় না।
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বছরের অধিক সময় বন্ধ থাকায় পুস্তক ব্যবসায়ীরা কষ্টে আছেন। তাদেরকে সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জোর দাবি জানাচ্ছি।