|| সারাবেলা প্রতিনিধি, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) ||
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে কিশোরী স্বণাকে ধর্ষণ ও অবৈধ গর্ভপাতে খুনের মামলাটি শেষপর্যন্ত থানায় নথিভুক্ত করা হয়েছে। এই মামলায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ঈশ্বরগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল কাদির মিয়া বলেন, উল্লেখিত আসামীদের গ্রেফতার অভিযান চলছে।
মামলার আসামিরা হলেন- উপজেলার ৯ নম্বর উচাখিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম শফিক, তার বড় ভাই স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মঞ্জুরুল হক মঞ্জু, নিহত স্বর্ণার মা আছমা, চেয়ারম্যানের বডিগার্ড দুলাল মিয়া ও মাহাবুবুল আলম। এর আগে, গত ২৩শে মে রোববার জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক মো. রাফিজুল ইসলামের কাছে মামলার আবেদন করেন নিহতের বাবা স্বপন মিয়া। পরদিন ২৪শে মে সোমবার মামলাটি আমলে নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশকে মামলা রুজু করার নির্দেশ দেন আদালত। এ তথ্য জানান, ময়মনসিংহ জেলা ও জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাড. মকবুল হোসেন।
স্বর্ণা হত্যা মামলা সম্পর্কে জানতে উচাখিলা ইউনিয়ন পরিষদে গেলে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিককে পাওয়া যায়নি। তবে মামলায় তালিকাভূক্ত আসামী ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি মঞ্জুরুল হক মঞ্জুর ছেলে ও চেয়ারম্যানের ভাতিজা নায়েব এ জাহান মনি প্রতিবেদককে জানান, মেয়েটি ব্রেইন স্ট্রোকে মারা গেছে, অভিযোগটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে এই অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, চরআলগী গ্রামের কাঠমিস্ত্রি স্বপন মিয়া তার পরিবার পরিজন নিয়ে উচাখিলা বাজারে বসবাস করে আসছিল। তার বাসায় ইউপি চেয়ারম্যান শফিক নিয়মিত যাতায়াত করতো। তাকে বাসায় না আসার জন্যে নিষেধ করায় চেয়ারম্যানের পরামর্শে স্বপনকে তালাক দিয়ে আসমা তার তিন কন্যা সন্তান নিয়ে বাজারের সীডস্টোর ভবনে বসবাস শুরু করে। সীডস্টোরের বাসায় চেয়ারম্যান নিয়মিত যাতায়াত অব্যহত রাখে।
এ সুযোগে স্বপনের স্ত্রী আসমার মৌন সম্মতিক্রমে দ্বিতীয় কন্যা স্বর্ণা (১৬) কে বিবাহ করার মিথ্যা প্রলোভনে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুলে চেয়ারম্যান শফিক। এক পর্যায়ে কিশোরী স্বর্ণা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এতে আসামিরা বিপাকে পড়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য ওই কিশোরীকে কবিরাজী ওষুধ সেবন করায়। এতে অন্তঃসত্ত্বা স্বর্ণার ব্যাপক রক্তক্ষরণ শুরু হলে গত ৯ই মে কিশোরীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তার তাকে ঢাকায় রেফার করে। কিন্তু আসামিরা স্বর্ণাকে ঢাকায় না নিয়ে বাড়ী নিয়ে আসে। পরদিন তার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ায় ১১ই মে ভিকটিমকে ঢাকায় ন্যাশনাল নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ই মে রাত ২টার দিকে স্বর্ণা মারা যায়। লাশ ঢাকা থেকে এনে এলাকায় দাফন কাফন না করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই ভিকটিমের বাড়ি থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে উপজেলার ইসলামপুর মাদ্রাসার কবরস্থানে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই দাফন করা হয়।