|| সারাবেলা প্রতিবেদন ||
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের রিমান্ড নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী বৃহস্পতিবার তাঁর জামিনের শুনানি হতে পারে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার পরপর রোজিনা ইসলামকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে নেওয়া হয়। এসময়ে শুনানি করতে গিয়ে পুলিশ তাঁকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করলৈ বিচারক তা নাকচ করে দেন। পুলিশ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে।
আদালতে রোজিনা ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন প্রথম আলো নিয়োজিত আইনজীবী এহসানুল হক সামাজি। রোজিনা ইসলাম প্রথম আলো পত্রিকার জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক।
এরআগে সকাল আটটার দিকে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানা থেকে আদালতে নেওয়া হয়। রোজিনা ইসলামের স্বামী মনিরুল ইসলাম সে সময় জানান, তাঁকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।
প্রসঙ্গত, পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে রোজিনা ইসলামকে সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ তাঁকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। তাঁকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিকেরা বিকেলে সচিবালয়ে এবং রাতে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভ করেন। এর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে), অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংগঠন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে)। গতকাল সোমবার সিপিজে এক বিবৃতিতে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্ত বন্ধ ও অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
সিপিজে বিবৃতিতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে আরও জানায়, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিযোগ করার পর প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ ও ৫ ধারা অনুসারে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিসের নথিপত্রের ছবি তোলার অভিযোগ আনা হয়। পেনাল কোডের ৩৭৯ ও ৪১১ ধারা অনুসারে দোষী সাব্যস্ত হলে রোজিনা ইসলামের ১৪ বছরের কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
সিপিজের এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক আলিয়া ইফতিখার বলেন, ‘বাংলাদেশে কঠোর ঔপনিবেশিক আইনের ধারায় সাংবাদিককে আটক ও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনায় আমরা শঙ্কিত। এই আইনে দুঃখজনকভাবে কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়।’
সিপিজের এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ এই গবেষক আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ ও সরকারকে বুঝতে হবে রোজিনা ইসলাম একজন সাংবাদিক। তাঁর কাজ জনসেবামূলক। অবিলম্বে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে তাঁকে মুক্তি দিতে হবে।’
ঢাকা ট্রিবিউনের বরাত দিয়ে ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ করার কথা ছিল।
প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ সিপিজেকে বলেন, রোজিনা ইসলাম গত মাসে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন।
সাজ্জাদ শরিফ আরও জানান, থানায় নিয়ে যাওয়ার আগে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে রোজিনা ইসলামকে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রাখা হয়।
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, সচিবালয়ে রোজিনা ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।
সাজ্জাদ শরিফ সিপিজেকে বলেন, মনে হচ্ছে, দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের কারণে রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় সিপিজেকে ফোনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। এ ব্যাপারে ই-মেইলে মন্তব্য জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাইদুল ইসলাম কোনো উত্তর দেননি।