|| সাগর চৌধুরী, মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি ||
বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস সামাল দিতে গিয়ে প্রবাসে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী, চাকরি ও শ্রমজীবীদের সংকট এখন চারদিকে। সীমিত পরিসরে লকডাউন খুললেও গতি নেই অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে। করোনাভাইরাস প্রধানত মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় বিধায় বিশ্বজুড়েই মানুষ আজ ঘরবন্দি।
এই পরিস্থিতিতে নিজ দেশ ছেড়ে প্রবাসে জীবিকার জন্য থাকা মানুষগুলো পড়েছেন সর্বগ্রাসি সংকটে। একদিকে প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ এর আতঙ্কে পরিবার নিয়ে থাকতে হচ্ছে শঙ্কায়, অন্যদিকে বেশীর ভাগেরই আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। অনেকের আবার বন্ধের পথে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, কফিলের ফায়দা, লাইসেন্স নবায়ন এবং পরিবার নিয়ে যারপর নাই সংকটে পড়েছেন।
প্রবাসী ব্যবসায়ীরা ভয়াবহ রকমের আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছেন জানিয়ে ওমানে বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাবের সভাপতি সিরাজুল হক বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের দেশের বিরাট এক জনগোষ্ঠী ওমানে বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে রয়েছেন। দেশে প্রবাসী আয় পাঠানোর দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্য অন্যতম একটি হচ্ছে ওমান। এখানে বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা। করোনার এই ভয়াল থাবায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে অনেকের স্বপ্ন। সাধারণ মানুষ অনেক কষ্টে দিন পার করছেন। ওমান সরকারও নানাভাবে বাংলাদেশসহ প্রবাসীদের সহায়তা দিচ্ছে। অবৈধদেরও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। দীর্ঘদিন লকডাউনে থাকা শহরগুলো সীমিত পর্যায়ে আনলক করা হচ্ছে। খুলতে শুরু করেছে কলকারখানা ও খাদ্যসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।”

করোনা পরিস্থিতিতে ক্লাবের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাবের উদ্যোগে ক্লাবের নির্বাহী সদস্য, আজীবন সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তায় কাজ হারিয়েছেন এমন প্রায় তিন হাজার প্রবাসীকে ত্রাণসহায়তা দিয়েছি।”
তিনি জানান, মাস্কাটসহ অন্য শহরগুলোতে বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা লকডাউনের বিপর্যস্ত সাধারণ প্রবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছে৷ অনেকের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। পুরো ওমানের অবস্থা ধীরে হলেও স্বাভাবিক হচ্ছে। বন্ধ থাকা বেশীর ভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে।
অবৈধ প্রবাসীরা দেশে যেতে পারবে কিনা কিংবা আউটপাস কখন নাগাদ দিচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আউটপাস দেওয়া না দেওয়ার বিষয়টি ওমান সরকারের ওপর নির্ভর করে। ওমানে অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ ক্ষমার অপেক্ষায় রয়েছে। সেটি দূতাবাসসহ সবার নজরে আছে। অবৈধ বাংলাদেশী নাগরিকদের বিনা জরিমানায় দেশে ফেরার সুযোগ দিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ওমানের মহামান্য সুলতানের কাছে সাধারণ ক্ষমার আবেদনসহ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে ওমান সরকার থেকে এখনো পর্যন্ত সাধারণ ক্ষমার কোন ঘোষণা পাওয়া যায়নি।
যারা ছুটিতে দেশে আছেন তারা ওমানে যেতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে সিরাজুল হক বলেন, “লকডাউনের আগে যারা ছুটিতে দেশে গিয়েছেন ছুটির সময় পেরিয়ে যাওয়ায় তাদের জন্য কর্মস্থলে ফিরে কাজে যোগ দেওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। এটি দুই দেশের সরকারের ওপর নির্ভর করছে।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের এখন প্রয়োজন ছাড়া বাংলাদেশে না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, যারা এখন ওমানে অবস্থান করছেন, প্রয়োজন ছাড়া যেন দেশে না যায়, হয়ত এই সংকটময় মুহুর্তে মানুষ চলে যেতে চাইছেন, কিন্তু তাদের এখন না যাওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
ওমানে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের ওমানের আইন-কানুন মেনে চলার অনুরোধ করে সিরাজুল হক বলেন, “বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এবং ওমানের সঙ্গে সুসম্পর্ক ধরে রাখতে হলে অবশ্যই ওমানের নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে। ওমানে অবস্থানরত প্রবাসীদের যাবতীয় সমস্যায় দূতাবাসের পরামর্শ নিতেও বলেন তিনি। ওমানে অবস্থিত বাংলাদেশি প্রবাসীদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এবং সবাইকে এক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
বলেন, “বর্তমানে কিছু অসাধু বাংলাদেশির কারণে ওমানে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বিদেশের মাটিতে কেউ যেন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব ওমান এর সভাপতি সিরাজুল হক।