|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
তালা খুলে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নেওয়ার দুইদিনের মাথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতেও উঠে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে উঠে পড়েছেন একদল শিক্ষার্থী। অন্যদিকে সোমবার সকালের মধ্যে হল ছাড়তে নির্দেশ দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদেরকে নিয়ে আলোচনায় বসেছেন কর্তৃপক্ষ। হল খুলে দেয়ার দাবিতে সোচ্চার হয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। একই দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও চলছে নানা কর্মসূচি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
হল খুলে দেয়ার দাবিতে সোমবার সোয়া ১২টার দিকে প্রায় পঞ্চাশজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের প্রধান ফটকের শিকল খুলে ভেতরে ঢুকে পড়েন। এ সময় হলের নিরাপত্তা কর্মকর্মীরা উপস্থিত থাকলেও কাউকে বাধা দিতে দেখা যায়নি। প্রায় ঘণ্টাখানেক হলের ভেতরে থাকার পর দুপর সোয়া একটা দিকে শিক্ষার্থীরা হল থেকে বেরিয়ে যান। দ্রুত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেয়ার দাবিতে বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন করবেন তারা। একইসঙ্গে প্রশাসনকেও স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচিও রয়েছে তাদের। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবেই হলে উঠতে চান।
শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কিছু চলছে, কিন্তু আবাসিক হল বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ঢাকায় আমাদের অনেকের আবাসন সঙ্কট রয়েছে। পড়ালেখার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে আর কত দিন? তাই বাধ্য হয়ে আমরা আজ হলে এসেছি।”
এ প্রসঙ্গে শহীদুল্লাহ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ন আখতার বলেন, “আমি অনলাইন ক্লাসে ছিলাম। হলের কেয়ারটেকার আমাকে বলেছে, শিক্ষার্থীরা তাদের জিনিসপত্র নিতে এসেছে। প্রত্যেক দিনই চার পাঁচ জন করে আসে। তবে আজ অনেকে একসঙ্গে এসেছে, ছবি তুলেছে। তারা এখন হল থেকে বেরিয়ে গেছে।”
হল ছাড়েনি জাবি শিক্ষার্থীরা
কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া সময়ে হল ছাড়েননি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা। তারা পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের ছয় দফা দাবি মানতে উদ্যোগী না হলে তারা পরবর্তী কর্মসূচিতে যাবেন।
তিনদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গেরুয়া এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের পর নিরাপত্তা হুমকিতে পড়েন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে শনিবার দিনভর বিক্ষোভ দেখিয়ে তালা খুলে হলগুলোতে ঢুকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। রবি ও সোমবার তাদের সঙ্গে যোগ দেন আরও অনেকে।
এদিকে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সরকারিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা হল খোলার কোনো ঘোষণা না আসায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে নির্দেশ দেয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা মানেনি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি সরকার ও রাজনীতি বিভাগের (৪৫তম ব্যাচ) ছাত্রী সামিয়া লিতু সোমবার সকালে বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেছে। আজকের মধ্যে যেন বাকি হলগুলো খুলে দেওয়া হয়, সেজন্য গতকাল প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। তা মেনে না নিলে আমরা নতুন কর্মসূচিতে যাব।”
অন্যদিকে প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন বলেন, “প্রশাসনের মিটিং থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি স্ব স্ব হল প্রভোস্ট তার টিম নিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলবে। সরকারি নির্দেশে এখনও হল বন্ধ রয়েছে, তারা যেন হল ছেড়ে চলে যান।”
শিক্ষার্থীরা হল না ছাড়লে কর্তৃপক্ষ কী করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা মনে করি শিক্ষার্থীরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তারা চলে যাবে।” দুপুরের আগেই প্রভোস্টরা তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে হলে হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা শুরু করেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
গভীর রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর পরিবহন শ্রমিকদের হামলার সঠিক তথ্য তুলে ধরে মামলা, অপরাধীদের গ্রেফতার ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবির সঙ্গে এবার হল খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র অমিত হাসান রক্তিম ও মাহমুদুল হাসান তমাল জানান, হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ক্যাম্পাসে রাতযাপন কর্মসূচি পালন করছেন ববি শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী সিয়াম জামান বলেন, অপরাধী এখনও গ্রেফতার হয়নি। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছাড়া অন্য কোথাও নিরাপত্তা নেই। অন্যদিকে প্রশাসনও আমাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে হল খুলে দিচ্ছে না। বারবার অনুরোধ করার পরও না। তাই আমরা গ্রাউন্ড ফ্লোরে অবস্থান করছি। এখানে রাত কাটানো ছাড়া উপায় নেই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাস ও হল খোলার দাবিতে বিক্ষোভ ও ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলগুলো খুলে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। তাদের ‘একদফা’ দাবির বিষয়ে এ সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত না জানালে সোমবার থেকে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, দেশের সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই আবাসিক হলগুলো বন্ধ রেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে তারা একাধিকবার হল খেলার বিষয়ে অনুরোধ এবং স্মারকলিপি দেওয়াসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না। চলতি মাসেই আবাসিক হলগুলো খোলার ঘোষণা না দিলে আজকের এই আন্দোলন থেকেই তারা কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন।