|| সারাবেলা প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ ||
বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নানের বাড়িতে হামলা করেছে স্থানীয় কয়েকশ’ মানুষ।শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দফায় দফায় হামলার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসচিবকে অবরুদ্ধ করে সশস্ত্র এসব মানুষ তাকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ারও আল্টিমেটাম দিয়েছে। একইসময়ে তার প্রটোকলে থাকা কটিয়াদী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলমকে বেধড়ক পেটানো হয়েছে। মারতে মারতে তাকে এক পর্যায়ে পুকুরে ফেলে দিয়েছে তারা।
স্বাস্থ্য বিভাগের সচিবের অভিযোগ, স্থানীয় (কিশোরগঞ্জ-২, কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া আসনের) সংসদ সদস্য সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদের নির্দেশে তার লোকজন ভাঙচুর, মারপিট, হুমকিসহ এ তাণ্ডব চালিয়েছে। এমন অসহায় পরিস্থিতির মুখোমুখি তাকে আর কোনোদিন হতে হয়নি বলেও জানান তিনি।
অভিযোগ অস্বীকার করে সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ বলেছেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তিনি ওয়াকফের জমি দখল করেন, এলাকায় যা খুশি তা করে বেড়ান। এমনকি অন্যের ও মাজারের জমি দখল করে তিনি কমিউনিটি ক্লিনিক করছেন। এসব ব্যাপারে লোকজন প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর পায় না। এলাকার মানুষ তার অবজ্ঞা, তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের শিকার হওয়ায় তারা রুখে দাঁড়িয়েছে। এর বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ঘটনাটি ঘটেছে। এলাকার এমপি হিসেবে এলাকাবাসীর এই কাজ পরোক্ষভাবে হলেও আমার ওপরই বর্তায়।
স্বাস্থ্যসচিবের বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার চান্দপুর গ্রামে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় ঘটনাস্থলে থাকা কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান আত্মরক্ষার্থে কোনো রকমে গাড়িতে উঠে ঘটনাস্থল ছেড়ে যান। এছাড়া হামলায় নির্মাণাধীন কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বরত প্রকৌশলীসহ অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন।
স্বাস্থ্যসচিবের বাড়িতে হামলা ও তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা এবং এসিল্যান্ডকে মারধরের খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদ, র্যাবের ভৈরব ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিউদ্দিন মোহাম্মদ জুবায়ের, কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তাহিয়াত চৌধুরী, হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী, কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাম্মৎ আক্তারুন্নেছা, ওসি এমএ জলিলসহ অন্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান।
এ পরিস্থিতিতে রোববার পূর্বনির্ধারিত কিশোরগঞ্জ জেলা পর্যায়ের করোনাভাইরাস টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের উপস্থিতি বাতিল করে শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে র্যাব ও পুলিশের কড়া প্রহরায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন স্বাস্থ্যসচিব মো. আবদুল মান্নান।
দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে মানিকখালী বাজারেই উত্তেজনার আঁচ পাওয়া যায়। পুলিশের তাড়া খেয়ে লাঠিসোটা হাতে শতাধিক যুবক মানিকখালী রেলস্টেশনের দিকে ছুটে যায়। সেখান থেকে মিনিট দশেকের দূরত্ব পেরিয়ে নির্মাণাধীন কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, টিনের তৈরি শ্রমিকদের ঘরটির টিন খুলে নেওয়া হয়েছে। ঘরটির প্রায় প্রত্যেকটি টিন কুপিয়ে তছনছ করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক ভবনের রড খোলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। সেখানেই পাওয়া যায় হামলায় আহত নির্মাণ শ্রমিক কমল, সুজন মিয়া, নূরুল ইসলাম, সুজন ও চয়নকে। তারা বলেন, সকালে তারা যখন কাজ করছিলেন, হঠাৎ তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। তাদের নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে নামতে পর্যন্ত সময় দেয়নি হামলাকারীরা। এ ছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে যাওয়ার জন্য নির্মাণাধীন রাস্তার মাটি কাটার মেশিনের চালককে পর্যন্ত পিটিয়ে আহত করা হয়।