|| বার্তা সারাবেলা ||
করোনা সংক্রমণের পরপরই নিজেকে বহুগুণে মিউটেট করতে থাকে। আর এর মধ্য দিয়ে নিজের সংক্রমণক্ষমতাকে এতোটাই বিপজ্জনক করে তোলে যে, রোগী দ্রুত কাবু হয়ে পড়েন। কিন্তু এই ভাইরাসটির সংক্রমণের প্রায় তিন মাসের মাথায় এসে বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিষয়টা যেভাবে বলা হয়েছিল সেটা ছিল প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষণা। এখন তারা বলছেন, সার্স-কোভ-২ মিউটেট করে ঠিকই। কিন্তু তার যে ক’টি ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে, সেগুলোর মূল চরিত্র একই থাকে। তাই মিউটেট নিয়ে তেমন আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই।
বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, মিউটেট করবার মধ্য দিয়ে ভাইরাসটি বিপজ্জনক হওয়ার বদলে বরং নিজেকেই দূর্বল করে তোলে। ফলে ভাইরাসটি শেষপর্যন্ত নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে কিনা সে নিয়েও বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে।
প্রতিষেধক ও সংক্রমণজনিত রোগের ওষুধ তৈরির গবেষণাকাজে জড়িত নোবেলজয়ী পিটার.সি ডোয়ার্টি এ প্রসঙ্গে বলছেন, ‘‘ক্রমাগত মিউটেশন হতে থাকলে সংশ্লিষ্ট ভাইরাসকে একটা বড় ‘ফিটনেস কস্ট’ দিতে হয়। যার অর্থ হল, মিউটেশনের ফলে অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলি টিকে থাকার ক্ষেত্রে নির্বাচিত না-ও হতে পারে।’’
বিজ্ঞানীদের মতে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর যে কোনও ভাইরাস নিজেকে মিউটেট করে। তারা বলছেন, এই প্রকৃতির সবগুলো ভাইরাসেরই মূল চরিত্রে কিছু মিল রয়েছে। ২০০২-’০৩ সালের সার্স কোভ ভাইরাস যে পদ্ধতিকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছিল, সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাসও সেই একই পদ্ধতিতে শরীরে ঢুকছে।
‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর)-এর এমেরিটাস বিজ্ঞানী ও সাবেক ডিন নরেন্দ্র কে মেহরা বলছেন, ‘‘সার্স-কোভ ও সার্স-কোভ-২, দু’টি ভাইরাসই মানুষের শরীরে প্রবেশের ক্ষেত্রে অ্যাঞ্জিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম-টু (এসটু) নামের রিসেপটর, যা মূলত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে টার্গেট করেছে। ফলে সেখানে কোনও পরিবর্তন দেখা যায়নি। সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের যে তিনটি ভ্যারিয়েন্ট এই মুহূর্তে পাওয়া গিয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও এই বিশেষ জায়গাটিতে কোনও পরিবর্তন দেখা যায়নি। তারা একই রয়েছে।’’
সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে আগের সার্স-কোভের থেকে সার্স-কোভ-২ কেন এতটাই বিপজ্জনক, সে প্রসঙ্গে নিউইয়র্কের কর্নেল ইউনির্ভাসিটির ‘মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি’ বিভাগের অধ্যাপক আভেরি অগাস্ট জানান, সংক্রমণ ছড়ানোর বিষয়টি ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট বা মিউটেশনের সঙ্গে জড়িত নয়।
তিনি বলেন, “অনেক দেশে যেমন ইতালিতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি। আবার কোনও দেশ কী ভাবে সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে কত তাড়াতাড়ি লকডাউন করেছে বা মাস্ক, গ্লাভস পরা বা জনদূরত্ব বজায় রাখার মতো নিয়ম বাধ্যতামূলকভাবে পালন করেছে, এমন অনেক বিষয়ের উপরে সংক্রমণের হার নির্ভর করছে।’’
অনেক বিজ্ঞানী-গবেষক আবার ক্রমাগত মিউটেশনের তত্ত্বটি স্বীকারই করেনি। যেমন ভারতে কোভিড-১৯-এর অন্যতম গবেষণাকেন্দ্র ‘ট্রানস্লেশনাল হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’-র ইমিউনোলজির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অমিত অবস্থির বলছেন, ‘‘ক্রমাগত মিউটেশনের তত্ত্বটি প্রথম থেকেই চলে এসেছে। কিন্তু সাম্প্রতিকতম গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস পরিবারের কোনও ভাইরাসেরই এতবার মিউটেশনের ক্ষমতা নেই, যা এইচআইভি ভাইরাসের রয়েছে। ফলে মিউটেশন নিয়ে এতটা আতঙ্কিত হওয়ার কোন দরকার নেই।’’
সংবাদসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা