মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের পরীক্ষা শুরু

|| বার্তা সারাবেলা ||

মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের পরীক্ষা শুরু করেছে যুক্তরাজ্য। দেশটির ইমপেরিয়াল কলেজ অব লন্ডন এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। আর ভ্যাকসিন তৈরির এই প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ৪৬ মিলিয়ন পাউন্ড। যার মধ্যে যুক্তরাজ্য সরকার দিচ্ছে ৪১ মিলিয়ন পাউন্ড। বাকি ৫ মিলিয়ন পাউন্ডের যোগান আসছে বিভিন্ন দাতব্য সহায়তা থেকে।

গবেষনাতথ্য বলছে, ভ্যাকসিনটি তৈরির এই পর্যায়ে এসে এটিকে মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে। এখন দেখা হচ্ছে, এটির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কতটা এবং কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে এটি কতটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।

আগামী কয়েক সপ্তাহে সুস্বাস্থ্যের অধিকারি ৩শ’ স্বেচ্ছাসেবির শরীরে এই ভ্যাকসিনের দুটো ডোজ প্রয়োগ করা হবে। যদির এটি কোন মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না যায় এবং রোগপ্রতিরোধে কার্যকর প্রমাণিত হয় তাহেলে এবছরের শেষনাগাদ আরো ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবির শরীরে এটি প্রয়োগ করা হবে। গবেষকরা আশা করছেন, ক্লিনিক্যাল পর্যায়ের পরীক্ষায় সাফল্য আসলে পর এটি যুক্তরাজ্যসহ সারা বিশ্বে উৎপাদন ও সরবরাহ করা হবে।

প্রচলিত পথপদ্ধতিতে সাধারণত ভাইরাস থেকে নেওয়া উপাদান দিয়েই ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়ে থাকে। কিন্তু ইমপেরিয়ালের এই ভ্যাকসিন তৈরিতে সিনথেটিক স্ট্র্যান্ডস অব জেনেটিক কোড বা আরএনএ ব্যবহার করা হয়েছে। যার মূল উপাদান হচ্ছে ভাইরাসের জেনেটিক ম্যাটেরিয়ালস।

এই ভ্যাকসিন মানুষের মাংসপেশিতে প্রয়োগ করা হলে আরএনএ নিজে থেকেই প্রসারিত হয়। নিজেকে কপি করতে থাকে। এবং শরীরের নিজস্ব কোষগুলোকে ভাইরাসের বাইরের দিকে লেগে থাকা প্রোটিনকে কপি করার নির্দেশনা দেয়। এই প্রক্রিয়ায় ভ্যাকসিনটি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ইমিউন সিস্টেমকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রশিক্ষিত করে। ফলে মানুষের শরীর সহজেই ভাইরাসটিকে চিনতে পারে এবং কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে কাজ করতে শুরু করবে।

গবেষক দলের প্রধান ও ইমপেরিয়াল কলেজের সংক্রামক রোগ বিভাগের অধ্যাপক রবিন শ্যাটক বলেন, “কোভিড-১৯ ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষের প্রাণ নিয়েছে। বিপর্যস্ত করেছে জনজীবন। একটি কার্যকর ভ্যাকসিনই পারে বিশ্বকে এমন দুরাবস্থা থেকে রেহাই দিতে এবং মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে।”

বিজ্ঞানের দিক থেকে দেখতে গেলে, বলা যায় যে এমন এক নতুনতর প্রযুক্তিতে এই ভ্যাকসিন তৈরি করা হচ্ছে যা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে দ্রুততর গতিতে এগুচ্ছে। আমরা একেবারেই শুণ্য থেকে এই ভ্যাকসিন তৈরি করতে সমর্থ হয়েছি এবং মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই এটিকে মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়েছে। যা আগে এই ধরণের ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে কখনো ঘটেনি।

দলধিপতি এই অধ্যাপক বলেন, “আমাদের এই প্রচেষ্টা যদি কাজ করে এবং এই ভ্যাকসিন যদি কোভিডের বিরুদ্ধে কার্যকর সুরক্ষা দেয়, তাহলে ভবিষ্যতে এই ধরনের মহামারি মোকাবেলায় এটি হবে বৈপ্লবিক এক সূচণা।”

রবিন শ্যাটক অবশ্য এও বলেছেন, “দেখতে হবে সেই টিকাগুলি কি সংক্রমণ রুখতে পারছে পুরোপুরি? নাকি সেগুলি সংক্রমিত হয়ে যাতে কেউ অসুস্থ না হয়ে পড়েন, সে ব্যাপারে কার্যকরী হচ্ছে? হয়তো দেখা যাবে, ওই দু’টি ক্ষেত্রে কোনও কাজেই লাগছে না টিকাগুলি। তখন এটাও দেখতে হবে, কোভিড রোগীরা যাতে আরও বেশি অসুস্থ না হয়ে পড়েন, সেটা কি নিশ্চিত করতে পারছে টিকাগুলি?”

গবেষনা সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেই এই ভ্যাকসিনের যাবতীয় খুটিনাটি প্রকাশ করার কথা জানিয়ে গবেষকরা বলছেন, “সবকিছু ঠিকঠাকমত এগোলে আগামী বছরের মাঝামাঝিতে ভ্যাকসিনটি বাজারে পাওয়া যাবে।

এদিকে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলোক শর্মা বলেছেন, “ব্রিটিশ গবেষকদের দৃঢ়তা আর দক্ষতার কারণেই ইমপেরিয়ালের এই ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়া এতো দ্রুত এগোচ্ছে। এই মুহূর্তে যেসব পরীক্ষা হচ্ছে তা যদি সফল হয়, তাহলে এই ভ্যাকসিন শুধু করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধেই নয়, ভবিষ্যতের যে কোন নতুন রোগের চিকিৎসায়ে এই পথপদ্ধতি সহায়ক হবে।”

সংবাদসূত্র: পিটিআই

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন