মহামারীতে কর্মী ছাঁটাই শুরু ডেইলি স্টারে

“এইচআর থেকে ওই ফোন পেয়ে তো আমি হতভম্ব। আমাকে বলা হল, অপশন আছে দুইটা। হয় আমি পদত্যাগ করব, আর না হলে ছাঁটাই। এতগুলো বছর কোম্পানির জন্য এত কাজ করলাম, এখন আমাকে চলে যেতে হবে!”

|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||

করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিস্তৃতি ও কোভিড ১৯ অতিমারিতে অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মত কর্মী ছাঁটাই চলছে দেশের সংবাদপত্র শিল্পেও। ভাইরাস সংক্রমণের শুরুর মাসেই বেতন কমানো, এবং ঈদ বোনাস না দেওয়া কিংবা কমিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি চালু হলেও এই প্রথম সবথেকে বেশী কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে দেশে শীর্ষ ইংরেজ কাগজ দ্য ডেইলি স্টার।

প্রথম পর্যায়ের ছাঁটাইয়ের তালিকাতে রয়েছেন প্রধানত বার্তা কক্ষের বাইরের কর্মীরা। এই সংখ্যা প্রায় ৩৫ জন। এদের সবাই প্রতিষ্ঠানটির তথ্য প্রযু্ক্তি ও উৎপাদন বিভাগের কর্মী। সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের বড় ছাঁটাই এটি। ছাঁটাইরে শিকার অনেকেই জানিয়েছেন, মানবসম্পদ বিভাগ থেকে তাদের ফোন করে বলা হয়েছে, ১৯শে অগাস্টের মধ্যে নিজে থেকে ইস্তফা না দিলে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হবে। তবে ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের আট মাসের মূল বেতন দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে কর্মীদের।

সংশ্লিষ্ট একজন কর্মী বলেন, “এইচআর থেকে ওই ফোন পেয়ে তো আমি হতভম্ব। আমাকে বলা হল, অপশন আছে দুইটা। হয় আমি পদত্যাগ করব, আর না হলে ছাঁটাই। এতগুলো বছর কোম্পানির জন্য এত কাজ করলাম, এখন আমাকে চলে যেতে হবে!”

কর্মীরা জানান, পত্রিকাটির পরিচালনা পর্ষদ রোববার ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করার পর সোমবার থেকে তা কার্যকর করা শুরু হয়। সোমবার পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে ১০ জন কম্পিউটার অপারেটরকে (কম্পোজিটর ও মেইকআপ ম্যান)। ছাঁটাইয়ের এই পরিকল্পনা চলছিল বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। পত্রিকাটির অন্যতম মালিক ট্রান্সকম চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের মৃত্যুর পর বিষয়টি গতি পায়।

কম্পিউটার বিভাগের এক কর্মী বলেন, “দেশে একটা মহামারী চলছে, এর মধ্যে আমাকে চাকরি ছেড়ে দিতে বললো, এটা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে।” তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল আরও নয় বছর পর। চাকরি হারিয়ে এখন তিনি গভীর দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন।

পত্রিকা বিক্রি ও বিজ্ঞাপন কমে যাওয়ায় করোনাআগে লাভজনক প্রতিষ্ঠানটি যে আর্থিকভাবে সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে, সে বিষয়ে ছাঁটাই শুরুর আগেই সতর্ক করেছিলেন পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম। গত ১৩ মে কর্মীদের উদ্দেশে লেখা একটি নোটে বোনাস কমানোর কারণ ব্যাখ্যা করেছিলেন মাহফুজ আনাম।

সেখানে তিনি বলেছিলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে মার্চের শেষ দিক থেকেই পত্রিকার ব্যবসায় বড় ধরনের ধস নেমেছে। পত্রিকা বিক্রি কমে গেছে ৭৫ শতাংশ; আয় কমেছে ৮০ শতাংশ। সব মিলিয়ে এপ্রিল-মে দুই মাসে ৮ কোটি টাকার আয় হারিয়েছে স্টার। ওই নোটে মাহফুজ আনাম লিখেছিলেন, “যখন বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশন চ্যানেল মাসের বেতন দিতে পারছে না, এ অঞ্চলের এবং বিশ্বের অনেক বড় বড় পত্রিকা যখন বেতন কমিয়ে দিচ্ছে, তখনও আমরা পুরো বেতন দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।”

গত রোজার ঈদে ডেইলি স্টার এক মাসের মূল বেতনের অর্ধেক টাকা কর্মীদের উৎসব ভাতা হিসেবে দিয়েছিল, যেখানে তারা এমনিতে দুই মাসের মূল বেতন বোনাস হিসেবে দেয়। কিন্তু মহামারীর মধ্যে আর্থিক অবস্থার বিশেষ উন্নতি না ঘটায় জুলাই মাসে কোরবানির ঈদের সময়ও কর্মীদের অর্ধেক বোনাস দিতে হয়েছে ডেইলি স্টারকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন