ভারতীয় পণ্য ট্রান্সশিপমেন্ট করে প্রথম চালানে ৪৪ হাজার টাকা পেল রাষ্ট্র

ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তির আওতায় ভারতীয় পণ্যের পরীক্ষামূলক প্রথম চালান খালাস করে প্রায় ৪৪ হাজার টাকা আয় হচ্ছে সরকারের। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আয় ৩০ হাজার ৮৯৯ টাকা। আর বাকি ১৩ হাজার একশ’ টাকা চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের । এই চালানে টন প্রতি শুল্ক ও বন্দর হ্যান্ডলিং বাবদ আয় হচ্ছে ৫৮৯ টাকা।

|| অর্থবাজার প্রতিবেদন, চট্টগ্রাম ||

ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তির আওতায় ভারতীয় পণ্যের পরীক্ষামূলক প্রথম চালান খালাস করে প্রায় ৪৪ হাজার টাকা আয় হচ্ছে সরকারের। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আয় ৩০ হাজার ৮৯৯ টাকা। আর বাকি ১৩ হাজার একশ’ টাকা চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের । এই চালানে টন প্রতি শুল্ক ও বন্দর হ্যান্ডলিং বাবদ আয় হচ্ছে ৫৮৯ টাকা।

রাষ্ট্রের এই আয়ের বাইরে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশি জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত আনা এবং বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ভেতর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত পর্যন্ত নেওয়ার পরিবহন খরচও পাচ্ছে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কোম্পানি। কলকাতা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে সড়কপথ ব্যবহার করে এই চার কনটেইনার পণ্য নেওয়া হচ্ছে ভারতের উত্তর–পূর্বের রাজ্য ত্রিপুরা ও আসামে।

ভারতের কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বন্দর থেকে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে ট্রান্সশিপমেন্টের পরীক্ষামূলক চালানের চার কন্টেইনার পণ্য নিয়ে মঙ্গলবার ভোরে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি সেঁজুতি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। পরে বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে চারটি ট্রেইলরে করে প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার আখাউড়া সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে পৌঁছায়।

বৃহস্পতিবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব পণ্যভর্তি কন্টেইনার ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় পৌঁছবে বলে জানিয়েছেন সেঁজুতি জাহাজের স্থানীয় এজেন্ট ম্যাঙ্গোলাইন লিমিটেডের ব্যবস্থাপক হাবীবুর রহমান। তিনি বলেন, জাহাজে করে পণ্য আনা থেকে শুরু করে আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছানোর দায়িত্ব তাদের প্রতিষ্ঠান ম্যাঙ্গো লাইনের।

পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বন্দরে যে পরিমান মাশুল দেয়, ঠিক সেই পরিমান মাশুলই দিতে হচ্ছে ট্রানজিট পণ্য পরিবহনেও। তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ট্রানজিট পণ্যের জন্য আলাদা করে চারটি বাড়তি মাশুল আদায় করছে। এরপরও টনপ্রতি পণ্য পরিবহনের মাশুল হিসাব করা হলে তা খুব বেশি নয় বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। তবে পণ্য পরিবহন যদি বাড়ে, তাহলে মাশুল প্রত্যাশিত মাত্রার চেয়ে কম হলেও আয় বাড়বে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, সরকারের আয়ের চেয়ে বড় কথা হলো ট্রানজিট পণ্য পরিবহন যদি বাড়ে, তাহলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে। সরকারের চেয়ে বেসরকারি খাতেই আয় বেশি হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ট্রানজিট পণ্য পরিবহনের ঘটনা এবারই প্রথম। তবে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ট্রানজিট পণ্য পরিবহন হয়েছে। এরআগে ২০১৬ সালের জুনে নৌ প্রটোকলের আওতায় কলকাতা থেকে নৌপথে আশুগঞ্জ হয়ে সড়কপথে ভারতের আগরতলায় পণ্য পরিবহন হয়। তখন টনপ্রতি ট্রানজিট মাশুল বাবদ ১৯২ টাকা, নিরাপত্তা ফি ৫০ টাকা, নৌবন্দরের ফি বাবদ সাড়ে ৩৪ টাকাসহ টনপ্রতি মোট ২৭৭ টাকা করে আদায় করা হয়েছিল।

এবার সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের কারণে সরকারের আয় বেড়েছে। আবার সরকারি ফির কয়েকটি খাতও যুক্ত হয়েছে। অবশ্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রশাসনিক মাশুল পরীক্ষামূলক চালানে নেওয়া হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ট্রানজিট পণ্য পরিবহন শুরু হওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। তবে যে ধরনের সেবা দেওয়ার কথা, তা ভালোভাবে দেওয়া হলে এই পথটি নিয়মিত ট্রানজিট পথ হিসেবে ব্যবহার হবে। এতে উভয় পক্ষেরই লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পথে পণ্য পরিবহন কী পরিমাণ হবে, তা নির্ভর করছে এ মুহূর্তে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে পথটি কতটা আকর্ষণীয়, তার ওপর।

সরকারের আয়

এই পণ্য পরিবহনে সরকারে কত আয় হচ্ছে তা জানাতে গিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন) মো. জাফর আলম বলেন, ভারতীয় এই কন্টেইনার হ্যান্ডলিং, ক্রেন ও সিঅ্যান্ডএফ চার্জ এবং ভ্যাটসহ এ চালান থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ ৩০ হাজার ৮৯৯ টাকা পেয়েছে।

অন্যদিকে প্রসেসিং মাশুল, ট্রান্সশিপমেন্ট মাশুল, নিরাপত্তা মাশুল, প্রশাসনিক মাশুল, এসকর্ট মাশুল, কন্টেইনার স্ক্যানিং মাশুল ও ইলেকট্রিক সিলের মাশুলসহ বিভিন্ন পর্যায়ে মাশুল পেয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এই অর্থের পরিমান ১৩ হাজার একশ টাকা বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মো. ফখরুল আলম।

বেসরকারি খাতে আয়

ভারতীয় এসব পণ্য পরিবহনে সরকারের চেয়ে বেসরকারি খাতে আয় হচ্ছে বেশি। যে জাহাজে করে চার কনটেইনার পণ্য আনা হয়েছে, তা বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজ। ফলে জাহাজ ভাড়া বাবদ অর্থ পাচ্ছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান। আবার জাহাজ থেকে নামানোর পর বাংলাদেশের কনটেইনার পরিবহনকারী গাড়িতে করে আগরতলায় নেওয়া হবে এ চারটি কনটেইনার। জাহাজ ও গাড়ি ভাড়া বাবদ মোট ২ লাখ ৭২ হাজার টাকা আয় হবে পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাঙ্গো লাইন লিমিটেডের।

এ প্রসঙ্গে ম্যাঙ্গো লাইনের কর্মকর্তা হাবীবুর বলেন, প্রতি কন্টেইনার চারশ ডলার হিসেবে জাহাজ ভাড়া পড়েছে এক লাখ দুই হাজার টাকার মতো। এছাড়া বন্দর থেকে আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত প্রতিটি ৩০ হাজার টাকা হিসেবে চারটি ট্রেইলরের ভাড়া পড়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। এর বাইরে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মতো ‘আরও চার্জ’ থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সবমিলিয়ে কন্টেইনার চারটির পরীক্ষামূলক পরিবহনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ তিন লাখ টাকার মতো আয় হওয়ার কথা।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর–পূর্ব রাজ্যে পণ্য পরিবহনের চুক্তি হয়েছিল ২০১৮ সালের অক্টোবরে দিল্লিতে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবরাহবিষয়ক এ চুক্তিটি হয়। এক বছর পর ২০১৯ সালের ৫ই অক্টোবর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ-সংক্রান্ত পরিচালন পদ্ধতির মান বা এসওপি সই হয়।

ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ বেশি লাগে। এ জন্য প্রতিবেশী দেশটি চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পরিবহন করতে এই চুক্তি করে। সেই চুক্তির আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রথম ভারতীয় পণ্যের পরীক্ষামূলক চালানের পরিবহনের কাজ সম্পন্ন হল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন