পুরুষতন্ত্র আর দুর্বল আইনে বিচার চাইতে গিয়ে আরো বেশী নির্যাতিত হন নির্যাতিতা

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো ও আইনি দুর্বলতার কারণে ধর্ষণের শিকার নারী বিচার চাইতে গিয়ে বহুবার নির্যাতিত হন।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ||

বাংলাদেশের আইনকে অতিমাত্রায় ‘পুরুষতান্ত্রিক ও অমানবিক আখ্যা দিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, এই আইন প্রয়োগ করে যে বিচারকার্য হয়, তাতে নির্যাতিত নারী বহুবার নির্যাতিত হন। ফলে তারা বিচারের জন্য মামলা করে না। শুক্রবার রাজধানী শাহবাগে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর আয়োজনে ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ আয়োজিত গণসমাবেশে তিনি একথা বলেন।

আনু মুহাম্মদ এও বলেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো ও আইনি দুর্বলতার কারণে ধর্ষণের শিকার নারী বিচার চাইতে গিয়ে বহুবার নির্যাতিত হন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, “আমরা ধর্ষণের যে পরিসংখ্যান পাই, তা বাস্তব চিত্রের অতি সামান্য একটি অংশ। আমরা পরিসংখ্যান থেকে যা পাই, তা পুলিশের দপ্তর বা পত্রিকার খবর থেকে আসে। কিন্তু বাস্তবে এই অপরাধ বহুগুণ বেশি। ধর্ষণের কোনো ঘটনার মামলা হলে সেটা পত্রিকায় আসে। সব ঘটনায় কিন্তু মামলা হয় না। কারণ মামলা করার জন্য যে শক্তি, সাহস বা পরিস্থিতি দরকার, তা অনেক নির্যাতিতার থাকে না।”  ধর্ষণের শিকার নারীর মামলা না করার কারণের পেছনে আর্থ-সামাজিক অবস্থান ও বিচারের বিদ্যমান অভিজ্ঞতার কথাও জানান তিনি।

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

আনু মুহাম্মদ বলেন, “যারা নির্যাতিতদের পোশাক, তাদের চলাফেরা খুঁজে, তারা মূলত অপরাধীর অপরাধকে আড়াল করতে চায়। যখন একজন ধর্ষণের শিকার হয়, তখন ভিক্টিমের দোষ যারা খুঁজে, তারা আসলে সন্ত্রাসী বা ধর্ষকদের পৃষ্ঠপোষকতা করে, ধর্ষকের পক্ষের যুক্তিতত্ত্ব খোঁজার চেষ্টা করে। স্থান,কাল, সময়, পোশাক কোনও কিছুই আসলে ধর্ষণের কারণ নয়, এর মূল কারণ হলো ধর্ষকের ক্ষমতা। ধর্ষণকারীর পরিচয়টা প্রকাশ করতে হবে ভালোভাবে এবং একইসঙ্গে তার ক্ষমতার উৎসও।”

নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কথাও জানান তিনি। বলেন, এজন্য প্রথমত, লেখালেখি, গান, কবিতা, মিছিল-মিটিংসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সকল দিক থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। দ্বিতীয়ত, সব কাজে নারীর সক্রিয়তা ও অংশগ্রহণ বাড়ানো। তৃতীয়ত, নারীর মানসিক ও শারীরিক শক্তি বাড়ানো।

আনু মুহাম্মদ বলেন, “যে সরকার ধর্ষক, নিপীড়ক, সন্ত্রাসী, নদী ও বন দখলদারদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়, তাদের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। তারা একটা শক্তি দিয়ে জনগণের ওপর নিপীড়ন করছে। জনগণকেও শক্তি দিয়ে তা মোকাবিলা করতে হবে।”

সমাবেশে নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, “ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরকার কথা বলবে না, যা করতে হবে আমাদেরই করতে হবে।”

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, “ধর্ষণ, নিপীড়ন বন্ধে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। ধর্ষণবিরোধী নয় দফা দাবিতে আমরা দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করছি। আমাদের এই আন্দোলন চলবে। আমরা মনে করি, ৯ দফা দাবি বাস্তবায়ন হলেই নিরাপদ সমাজ গড়া সম্ভব হবে।”

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহর সঞ্চলনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) সভাপতি আল কাদেরী জয়, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ-মার্কসবাদী) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক সালমান সিদ্দিকী ও প্রীতিলতা ব্রিগেডের নারী নেত্রী আসমানর আশাসহ ছাত্র-যুব-নারী সংগঠনের নেতারা।

সংবাদ সারাদিন