পায়ের দামতো আর টাকায় হয় না

আদালত রায় দিয়েছেন আমি মেনে নিয়েছি। আমি মনে করি টাকার পরিমান যাই দেওয়া হোক আমি কিন্তু আগের মতো স্বাভাবিক হতে পারবো পারবো না। ফেরত যাওয়াও সম্ভব না। পায়ের দাম তো্ আর টাকায় হয়না।

|| আমিনুল ইসলাম মল্লিক ||

রাসেল সরকার। সংসার চালাতেন ব্যক্তিগত গাড়ি চালিয়ে। থাকতেন রাজধানীতে। সে ২০১৮ সালের কথা। দিনটি ছিল ২৮শে এপ্রিল। প্রতিদিনের মতো গাড়ি নিয়ে বের হয়েছেন রাজধানীর রাস্তায়। চলছেন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা ধরে। হঠাৎই একটি বড় বাস ঘেষা দিয়ে যায় নিজের ছোট্ট গাড়িটিকে। তাকিয়ে দেখেন পায়ের দিক থেকে রক্ত পড়ছে গলগলিয়ে। বড় গাড়ির ঘষার সঙ্গে চলে গেছে নিজের বা পাটিও। তারপর আর কিছু বলতে পারেন না রাসেল। নিজেকে আবিস্কার করেন হাসপাতালের বিছানায়।

পরদিন খবরের কাগছে নিজের ছবিসহ সংবাদ। গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষের বাসের চাপায় বাম পা বিচ্ছিন্ন রাসেলের।স্বপ্রণোদিত হয়ে রাসেলের পায়ের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ি) সংসদীয় আসনের সদস্য অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি। দীর্ঘ আইনী লড়াই শেষে প্রথম দফা ১৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরন পান রাসেল। সবশেষ ১লা অক্টোবর বৃহস্পতিবার আরো ২০ লাখ টাকা দিতে অভিযুক্ত গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

মামলার সবশেষ রায় পেয়ে রাসেল কথা বলেছেন সংবাদ সারাবেলার সঙ্গে।

সংবাদ সারাবেলা : রায়তো পেলেন। ক্ষতিপূরণ মিলেছে ৩৩ লাখ টাকা। কি ভাবছেন। করবেনই বা কি।

রাসেল সরকার: কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিলেও আমার পা ফেরত পাবো না। তবে আদালত যে রায় দিয়েছেন তাতে আমি সন্তুষ্ট। আদালত রায় দিয়েছেন আমি মেনে নিয়েছি। আমি মনে করি টাকার পরিমান যাই দেওয়া হোক আমি কিন্তু আগের মতো স্বাভাবিক হতে পারবো পারবো না। ফেরত যাওয়াও সম্ভব না। পায়ের দাম তো্ আর টাকায় হয়না। তারপরও পায়ের বিনিময়ে যে টাকা পেয়েছি তা দিয়ে স্ত্রী ও ছেলেপুলে নিয়ে একটু ভাল থাকবার চেষ্টা করবো আর কি।

সংবাদ সারাবেলা: পা হারানোর পর থেকে তো আর কাজ করতে পারছেন না। সংসার চলতে কীভাবে।

রাসেল সরকার: আমি পা হারানোর পর থেকেই বাড়িতে বসেই সময় পার করছি। গাড়িতো আর চালাতে পারবো না। আমার স্ত্রী প্রাইভেট পড়িয়ে কিছু আয় করেন। সে আয় দিয়েই আমার সংসার চলছে কোনমতে। কষ্টে শিস্টে চলে যাচ্ছে আর কি।

সংবাদ সারাবেলা: ক্ষতিপুরণের টাকায় কি করবেন ভাবছেন।

রাসেল সরকার: বড় অঙ্কের একটি টাকা ব্যাংকে জমা রাখব। সেখান থেকে মাসে যে লাভ পাবো তাই দিয়ে সংসার চালাবো। আমি এখন অচল নিজে একা একা কোন কিছুই করতে আমার কষ্ট হয়। এছাড়া কিছু টাকায় জমি বন্ধক নিয়ে চাষাবাস করার চিন্তা আছে। যাতে কেউ বলতে না পারে আমি বেকার বসে খাই।

সংবাদ সারাবেলা: ছেলে মেয়েদের নিয়ে কী ভাবছেন।

রাসেল সরকার: যে টাকা পেলাম। তা দিয়ে সংসার চালানোর মতো আয়ের ব্যবস্থা করবার পাশাপাশি ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা করাবো। মানুষের মতো মানুষ করানোর চেষ্টা করবো। যাতে আমার মত দুর্ভাগ্য ওদের না হয়।

সংবাদ সারাবেলা: সবশেষে যে গাড়িচালকের অসাবধানতায় আপানার এমন ক্ষতি হয়ে গেছে। তার বা অন্য গাড়িচালকদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?

রাসেল সরকার: আসলে ক্ষতি হয়ে গেলে সেটাতো আর ফেরানো যায় না। তাই আমি আমার সহকর্মী চালক ভাইদের বলবো, সাবধানে গাড়ি চালাবেন। আপনার অসকর্ততা আর খেয়ালি চালনায় সবশেষ হয়ে যেতে পারে আরেকজন মানুষের। পথে বসে যেতে পারে একটি পরিবার।

সংবাদ সারাবেলা : আপনাকে ধন্যবাদ।

রাসেল সরকার : ধন্যবাদ সংবাদ সারাবেলাকেও।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তায় ২০১৮ সালের ২৮শে এপ্রিল গ্রিন লাইন পরিবহনের ধাক্কায় বাম পা হারান ব্যক্তিগত গাড়ি চালক রাসেল সরকার। এতে স্বপ্রণোদিত হয়ে উচ্চ আদালতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করেন গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী)আসনের সরকার দলীয় এমপি অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি। এরপর দীর্ঘ আইনী লড়াই শেষে ক্ষতিপূরণের অর্থে কিছুটা হলেও স্বস্তি আর স্বচ্ছন্দ আসার ব্যবস্থা হলো রাসেলের পরিবারের।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন