|| মেহেরপুর ও ধামইরহাট থেকে হাসানুজ্জামান ও বাকি জানাচ্ছেন বিস্তারিত ||
পলাশ শিমুল জানান দিচ্ছে বসন্ত আসছে। জেলা শহর মেহেরপুরের রাস্তার পাশে আর ছায়াবিথিগুলোতে পলাশের শরীরজুড়ে কাকাতুয়ার ঠোঁটের মতো অভিমানি বক্রমুখা সবফুল যেনো সদর্পে প্রকাশ করছে নিজেকে। একইভাবে নওগাঁর ধামইরহাটে শিমুল জানাচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তা। পলাশের বৈজ্ঞানিক নাম (Butea monosperma)। তবে পলাশ নামেই পরিচিতি বেশি। রয়েছে আরো কত বাহারী রকমের নাম যেমন কিংশুক, পলাশক, বিপর্ণক। আর শিমুলের বৈজ্ঞানিক নাম বোম্বাক্স সেইবা। মালভেসি পরিবারের এই উদ্ভিদ আমাদের দেশে শিমুল নামেই সমধিক পরিচিত।
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/02/polash-300x182.jpg?resize=1200%2C728&ssl=1)
শীতের বিদায় ছুঁই ছুঁই। বসন্ত আসছে আর মাত্র কিছু দিন পরেই। গাছের পাতা ঝরতে শুরু করেছে। আবার ফল গাছে মুকুল ধরেছে। গাছে গাছে ফুলের সমারহ। এক অভিন্ন অনুভূতি। যা ইতিমধ্যে আমরা অনুভব করতে শুরু করেছি। তবে বসন্তের আগমনের বার্তা আগে থেকেই জানিয়ে দেয় গাছের কোলজুড়ে দুলতে থাকা রক্তিম পলাশ ফুল। মনে হয়, বনে আগুন লেগেছে। নবীন পাতার সমারোহ আর বনজুড়ে দেখেতে পাই পলাশের বর্ণমিছিল। তাই পলাশকে নির্দ্বিধায় বলতে পারি অরণ্যের অগ্নিশিখা পলাশ।
বাংলা সাহিত্যে পলাশের প্রভাব অতিশয়। গানে, কবিতায় কোথায় নেই পলাশ? তবে শুধু এ কালের সাহিত্য নয়, পলাশ সুপ্রাচীনকালেও ছিল সমান আদরণীয়। মহাভারতের সভাপর্বে ইন্দ্রপ্রস্থ নগরের যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, সেখানে উদ্যান আর কৃত্রিম জলাধারের পাশেও ছিল পলাশ বৃক্ষের মাতামাতি। আজ সেই পলাশ বৃক্ষের মাতামাতি খুঁজে পাওয়া দায়। আমাদের মধ্যে থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে পলাশ। পলাশ ফুল রক্ষায় চোখে পরার মত নেই কোন উদ্যেগ। বছরের ফেব্রুয়ারির দিকেই আমরা পলাশের জন্য অপেক্ষা করি, কখন ফুটবে পলাশ।
বাংলাদেশসহ অন্য অন্য দেশেও রয়েছে পলাশ ফুলের ব্যাপক চাহিদা। আমদের দেশে গ্রাম অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। পলাশের বিভিন্ন অংশ ভেষজ ও অন্যান্য নানা কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ফুল থেকে যে হলুদ রঙ পাওয়া যায় তা দোলের রং তৈরিতে কাজে লাগে। আঠা অরেচক হিসেবে ও কোন কোন স্থানে নানান খাবার তৈরির জন্য বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। তাই পলাশ রক্ষার্থে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।
ধামইরহাটে ফুটছে শিমুল
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের বহু চর্চিত ওই কবিতার ভাষায় ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত। ষড় ঋতুর পরিক্রমায় প্রকৃতিতে এসেছে ঋতুরাজ বস্নÍ। শীতের পরই ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী বার্তা বয়ে আনে শিমুল ফুল। গ্রাম বাংলার অনেক মানুষ ক্যালেন্ডারের তারিখ গণনা করতে না পারলেও অযত্নে-অবহেলায় বেড়ে ওঠা শিমুল গাছে ফুল আসলেই তারা বলতে পারে ফাগুন মাস এসেছে। গাঢ় লাল রঙের পাপড়ি আর সবুজ রঙের বোটায় আবৃত্ত এক অপরূপ ফুলের নাম শিমুল ফুল। মৌমাছি শিমুল ফুলের উপর বসে গুনগুন শব্দ করে পুরো এলাকার জানান দেয় এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার জনপদে শীতের পরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমনি বার্তায় গাছে গাছে ফুটেছে লাল শিমুল ফুল।
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/02/Naogaon-Dhamoir-hat-Spring-Pic-From-Baki-09-02-2021-2-300x185.jpg?resize=1200%2C740&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/02/Naogaon-Dhamoir-hat-Spring-Pic-From-Baki-09-02-2021-2-300x185.jpg?resize=1200%2C740&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/02/Naogaon-Dhamoir-hat-Spring-Pic-From-Baki-09-02-2021-2-300x185.jpg?resize=1200%2C740&ssl=1)
উপজেলার উত্তর চকরহমত গ্রামের কৃষি শিক্ষক আলাল হোসেন বলেন, মাঘ মাসে শিমুল গাছে ফুলের কুঁড়ি আসে। শিমুল কুঁড়ি দিন দিন বড় হয়ে মাঘের শেষে কুড়ি থেকে ফুটে বের হয় লাল শিমুল ফুল। গ্রাম বাংলার অনেক মানুষ ক্যালেন্ডারের তারিখ গণনা করতে না পারলেও শিমুল গাছে ফুল আসলেই তারা বলতে পারে ফাগুন মাস এসেছে বাংলার বুকে।
গ্রামীণ জনপদের প্রকৃতির অপরূপ শোভা শিমুল ফুল যুগ যুগ ধরে গ্রাম বাংলার পথে ঘাটে নদ-নদীর ধার, ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গল, পুকুর পাড় পথে ঘাটে ফাঁকা মাঠে পথচারীদের দৃষ্টি কাড়ে শিমুল ফুলে। হালকা বাতাসে পথ চলতে শিমুল ফুলে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায় সৌন্দর্যে। যুগ যুগ ধরে অযত্নে-অবহেলায় বেড়ে ওঠা শিমুল গাছে শিমুল ফুলে একবার চোখ পড়লে বার বার দেখতে ইচ্ছে জাগে। চিরচেনা এ ফুলের দিকে তাকালে মনে পড়ে পুরাতন দিনের অনেক কথা।
ধামইরহাট পৌরসভার দক্ষিণ চকযদু গ্রামের শিক্ষক কামরুন নাহার বলেন, এক সময় গ্রামের পথে ঘাটে শিমুল ফুল ফুটতো। তা ছিল চোখে পড়ার মত দৃশ্য। শিমুল গাছ বেশ বড় হলেও এর কাঠ তেমন শক্ত হয় না। এর কাঠ শুধু মাত্র জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। তবে শিমুল তুলা কাপড়, বালিশ-লেফ বানানোসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহিত হয়ে থাকে। প্রতি বছর পতিত জমি ওয়ারিশদের মধ্যে ভাগ বন্টনের কারণে শিমুল গাছ কমতে শুরু করেছে।
দেশের জনসংখ্যা আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাড়ায় নদ-নদী কুল কিনার জমি, পতিত স্থান ও উঁচু জমি কমে যাওয়ায় শিমুল গাছ কমে যাচ্ছে। ফলে প্রকৃতির অপরূপ শোভা দানকারী ও সৌন্দর্যের প্রতীক শিমুল গাছ এখন কমতির পথে। আজও এখনও চলতে পথে রাস্তার দুপাশে রেল লাইনের ধারে বেড়ে ওঠা প্রাকৃতিক অবদানে ফুটে উঠে চির চেনা সেই শিমুল ফুল। অনেকে বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষায় শিমুল ফুলের অবদান রয়েছে। এ ফুল সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার ফলে সবার মন খুশি থাকে। শিমুল ফুল শোভাদানকারী সবার প্রিয় ফুল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দাবিদার শিমুল ফুল অযত্নে-অবহেলায় জন্ম নেয়।
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/02/polash-0ek-300x169.jpg?resize=1200%2C676&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/02/polash-0ek-300x169.jpg?resize=1200%2C676&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/02/polash-0ek-300x169.jpg?resize=1200%2C676&ssl=1)
ধামইরহাট পৌরসভার দক্ষিণ চকযদু গ্রামের শিক্ষক বেনজির আফরিন তমা বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে শিমুল গাছ সংরক্ষেণে কৃষকদের মাঝে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সেই সাথে জমির মালিক সরকারী দপ্তরের বনবিভাগ ও বেসরকারী পর্যাযে সংরক্ষণ করতে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে দ্রুত এগিয়ে আসলে আবারও জেগে উঠবে মাঠ জুড়ে শিমুল গাছ। নচেৎ একদিন হারিয়ে যাবে প্রকৃতির অপরূপ শোভা দানকারী ও সৌন্দর্যের প্রতীক শিমুল ফুল।