‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হয়েছে বাংলাদেশের মানুষকে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা’ দেওয়ার জন্য। আর এ আইনের অপব্যবহার যাতে না হয়, সে বিষয়ে সরকার ‘সচেতন’ আছে।

বললেন তথ্যমন্ত্রী

|| সারাবেলা প্রতিনিধি,  চট্টগ্রাম ||

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পক্ষেই নিজের অবস্থান জানালেন সরকারের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। আর তিনি তার এই অবস্থান এমন এক সময়ে জানালেন, যখন কিনা কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুপ্রতিবাদে সোচ্চার সারাদেশ। জোরালো দাবি উঠেছে যে আইনে বন্দী অবস্থায় লেখক অ্যাক্টিভিস্ট মুশতাক আহমেদের মৃত্যু হলো সেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের। তিনি বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হয়েছে বাংলাদেশের মানুষকে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা’ দেওয়ার জন্য। আর এ আইনের অপব্যবহার যাতে না হয়, সে বিষয়ে সরকার ‘সচেতন’ আছে।

শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামের দেওয়ানজি পুকুর পাড়ে নিজের বাড়িতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রীর নিজের এমনসব অবস্থান জানান। তিনি বলেন, “মুশতাক আহমেদের মৃত্যুটা সত্যিই অনভিপ্রেত। আমিও তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি। সেখানে কারা কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি ছিল কিনা- সেটা খুঁজে দেখা যেতে পারে।”

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধিতাকারীরা বলছেন, নানা পক্ষের আপত্তি, সাংবাদিকদের উদ্বেগের মধ্যে ২০১৮ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় নতুন এই আইন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ব্যাপক সমালোচিত ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা বাতিল করে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হলেও পুরনো আইনের বাতিল হওয়া ধারাগুলো নতুন আইনে রেখে দেওয়ায় এর অপপ্রয়োগের শঙ্কা থেকেই যায়। দেশের সাংবাদিক, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সে সময় এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়।

প্রসঙ্গত করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গত বছরের ৬ই মে মুশতাককে লালমাটিয়ার বাসা থেকে গ্রেফতার করার পর ওই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেই তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পেশায় ব্যবসায়ী মুশতাক অনলাইনে লেখালেখিতে বেশ সক্রিয় ছিলেন। তার সঙ্গে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তা সংগঠনের দিদারুল ভূইয়া এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নানকেও গ্রেপ্তার করা হয়। মামলায় ‘সরকারবিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগ আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে।

তদন্ত শেষে পুলিশ শুধু মুশতাক, কিশোর ও দিদারকে আসামি করে এ মাসের শুরুতে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। দিদারুল ও মিনহাজ মান্নান জামিন পেলেও কিশোর ও মুশতাকের আবেদন নাকচ হয় কয়েক দফা।

বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরের কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগারে মৃত্যু হয় ৫৩ বছর বয়সী মুশতাকের। রাষ্ট্রিয় হেফাজতে একজন নাগরিকের মৃত্যুতে বামপন্থি বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন শুক্রবার দুপুরে ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের পাশাপাশি মুশতাকের মৃত্যুর তদন্ত ও বিচার দাবি করে। বিকালে জাতীয় যাদুঘরের সামনে তার গায়েবানা জানাজা থেকেও একই দাবি তোলা হয়।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “ডিজিটাল বিষয়টা আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে ছিল না, সুতরাং ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়টিও ছিল না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনলাইনে যখন একজন সাংবাদিকের চরিত্র হনন করা হয়, একজন গৃহিনীকে যখন অপবাদ দেওয়া হয়, একজন সাধারণ মানুষ যখন ডিজিটাল আক্রমণের শিকার হন, তিনি কোন আইনে প্রতিকার পাবেন? তখন কোন আইনের বলে সে নিরাপত্তা পাবে? সেজন্য একটা আইনের দরকার। এই জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।”

তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার যাতে না হয়, সে বিষয়ে সরকার ‘সচেতন’ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিশেষ করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যাতে এই আইনের অপব্যবহার না হয়, সেজন্য তথ্য মন্ত্রণালয় ও আমি ব্যক্তিগতভাবে সবসময় সচেতন আছি এবং কোনোখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়।”

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ‘কবর দেওয়া উচিৎ’ বলে যে মন্তব্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী করেছেন, সে বিষয়েও তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। উত্তরে হাছান মাহমুদ বলেন, “ডা. জাফরুল্লাহতো নানা কথা বলেন, যেমন করোনার টিকার বিরুদ্ধে খুব সোচ্চার ছিলেন, আবার নিজে করোনার টিকা নিয়ে বলেছেন এই টিকা সবার নেওয়া উচিৎ। সুতরাং আজকে জাফরুল্লাহ সাহেব যে কথা বলেছেন, দুদিন পর দেখবেন নিজের কথা তিনি আবার অন্য সুরে কথা বলবেন। সুতরাং এটার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।”

সংবাদ সারাদিন