করোনা ঝুঁকিতেই খুললো চট্টগ্রাম ইপিজেডের ১১০ কারখানা খুলছে অন্যগুলোও

|| এম. মতিন, চট্টগ্রাম থেকে ||

করোনাদুর্যোগের মধ্যেই সীমিত পরিসরে দেশের সব তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। এরইমধ্যে খুলে দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামে তিনটি ইপিজেডের ১১০টি পোশাক কারখানা। তবে মালিকরা বলছেন, এসব কারখানায় করোনা স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেই কার্যক্রম চালু রাখা হবে।

চট্টগ্রাম ইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলছেন, রোববার ২৬শে এপ্রিল সকাল থেকে এসব কারখানায় হাজার হাজার শ্রমিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজে যোগ দিয়েছেন। বলা হচ্ছে, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যথাযথ গুরুত্ব দিয়েই কারখানা পরিচালনা করবেন তারা। চট্টগ্রাম ইপিজেডের জিএম খুরশিদ আলম জানান, পুরোদমে কারখানা কখন থেকে চালু হবে, সে বিষয়ে আগামী সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তবে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে লকডাউনের মধ্যেই কারখানা চালু করায় সংক্রমণ বিস্তারের ঝুঁকি আরো বেড়ে গেল। যা তাদেরকে আরো বেশী করে শঙ্কায় ফেলে দিল।

চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম ও কর্ণফুলী ইপিজেড ও কোরিয়ান ইপিজেডে দেশি-বিদেশি সবমিলিয়ে ২শ’র বেশি কারখানায় প্রায় ২ লাখ ৭৬ হাজার শ্রমিক কাজ করছে।

খুলছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র কারখানাও

বিজিএমইএর সহ সভাপতি ফয়সাল সামাদ জানিয়েছেন, রোববার থেকে তাদের সদস্য ঢাকা ও আশপাশের এমন অন্তত ২শ’ কারখানা চালুর প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। তবে বিকেএমইএ’র অন্তর্ভূক্ত কত কারখানা খুলছে সে সংখ্যা জানাতে পারেনি তিনি।

ফয়সাল সামাদ জানান, খুলে দেওয়া এসব কারখানাতে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ শ্রমিকের উপস্থিতি মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে বিজিএমইএ। অন্যদিকে শুধ নিটিং, ডায়িং ও স্যাম্পল সেকশন চালু করার পরামর্শ দিয়েছে বিকেএমইএ। তাতেও দরকার হবে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শ্রমিকের উপস্থিতি।

বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র নির্দেশনায় বলা হয়, লকডাউন পরিস্থিতিতে যেসব শ্রমিক সংশ্লিষ্ট কারখানার আশপাশে অবস্থান করছেন তাদেরকে দিয়েই কারখানা চালু করতে হবে। এই মুহূর্তে দূরে থাকা শ্রমিকদের ডেকে না আনার কথাও বলা হয়েছে নির্দেশনায়।

ফয়সাল সামাদ এও বলেন, তারা তাড়াহুড়ো করে কোনো কিছু করছেন না। গতকাল শনিাবর মালিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কারখানার আশপাশে থাকছেন এমন শ্রমিকদের দিয়েই কারখানা চালু করতে হবে। দূরের কোন শ্রমিক নিয়ে আসা যাবে না। ৩০ শতাংশের বেশি শ্রমিকের উপস্থিতি করানো যাবে না। কারখানায় কর্মরত অন্য শ্রমিকরা এখন কাজে যোগ দিতে না পারলেও তাদের কারো চাকরি যাবে না বলেও জানান বিজিএমইএ’র সহ সভাপতি ফয়সাল সামাদ।

সদস্যদের কাছে পাঠানো বিজিএমইএর এক নির্দেশনায় বলা হয়, প্রথম ধাপে কেবল কারখানার আশপাশে বসবাসরত শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিতে পারবেন। ২৬শে এপ্রিল থেকে ২রা মে পর্যন্ত ৩০ শতাংশ শ্রমিকের উপস্থিতি রাখা যাবে। এই কয়দিনের কাজের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আরও ৩০ শতাংশ অর্থাৎ ৫০ শতাংশ শ্রমিকের উপস্থিতি রেখে চালু রাখা হবে কারখানাগুলো।

একইসঙ্গে শ্রমিকদের গ্রাম থেকে ঢাকায় আনা যাবে না এমন নির্দেশনা দিয়ে শ্রমিক ছাঁটাই না করতেও কারখানার মালিকদের অনুরোধ করেছে বিজিএমইএ।

এদিকে নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, তারা সংশ্লিষ্ট সদস্যদের শুধু নিটিং, ডায়িং ও স্যাম্পল সেকশন খোলার নির্দেশনা দিয়েছেন। যাতে করে শ্রমিক উপস্থিতি কম রাখা যায়। সব কারখানা আজকে না খুললেও ২রা মে থেকে সব কারখানা পুরোদমে খুলবে বলেও জানান মোহাম্মদ হাতেম।

কারখানা চালুর বিরুদ্ধে অবস্থান শ্রমিক সংগঠনগুলোর

করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যেই কারখানা খুলে দেওয়ার বিরোধিতা করে গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, যেখানে মানুষের জীবনের নিশ্চিয়তা নেই সেখানে কল-কারখানাগুলো চালু থাকে কীভাবে? তারা এই পরিস্থিতিতে আগামী তিন মাস পোশাক শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বেতনভার বহনের দাবি জানান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন