|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
গেল চব্বিশ ঘন্টায় নতুন করে ৭৯০ জন আক্রান্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা এখন ১১ হাজার ৭১৯ জন। বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়ে মারা গেছেন আরও ৩ জন। এনিয়ে এখন পর্যন্ত ১৮৬ জন মারা গেল কোভিড ৯ রোগে। এদিকে করোনায় মানুষকে সচেতন আর আইন শৃংখলা ঠিক রাখতে গিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ১১৮৯ জন পুলিশ প্রাণঘাতি এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে যুক্ত হয়ে দেশের করোনা পরিস্থিতিরি সবশেষ এসব তথ্য জানান প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা।
গত এক দিনে আক্রান্তদের মধ্যে মোট কতজন সুস্থ হয়েছেন তা আজকের বুলেটিনে জানানো হয়নি। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত ১ হাজার ৪০২ জনের সুস্থতার তথ্য দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর।
সামাল দেওয়া যাচ্ছে না পুলিশে সংক্রমণ
করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে শুরু থেকেই মানুষকে সচেতন করতে এবং একইসঙ্গে আইন শৃংখলা রক্ষা করতে অগ্রবর্তি বাহিনী হিসেবে মাঠে রয়েছে পুলিশ। গেল সাতদিনেরও কম সময়ে মাঠে থাকা এই বাহিনীতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের সদস্যই ৫৭৬ জন বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তর।

তথ্য বলছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ১৮৯ জন পুলিশ সদস্য। ইতোমধ্যে মারা গেছেন পাঁচজন। আক্রান্তদের বাইরে কোয়োরেন্টিনে আছেন এক হাজার ২৬০ জন এবং আইসোলেশনে আছেন এক হাজার ৮৯ জন। এর মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্ হয়েছেন ৮৫ জন পুলিশ সদস্য।
বাংলাদেশ পুলিশের ফেইসবুক পেইজে এক পোস্টে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মো. সোহেল রানা বলেন, “পুলিশিং একটি ইউনিক পেশা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশার ব্যাপক সুযোগ এই পেশায় রয়েছে, এটি অন্য কোনো পেশায় নেই। এই বিশেষ দিকটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে বর্তমান এই পরিস্থিতিতে।”
তিনি বলেন, হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার জন্য পুলিশকে মানুষের বাড়ি বাড়ি যেতে হয়েছে এবং আইসোলেশন নিশ্চিত করার জন্যও মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়েছে পুলিশ। এছাড়া খুব কাছে থেকে এগুলো নিশ্চিত করতে হয়। পাশাপশি পুলিশ যখন দেখে কোনো রোগীর বা ব্যক্তির চিকিৎসা প্রয়োজন, হাসপাতালে নেওয়া প্রয়োজন বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যরা সেই রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে। আবার দ্রব্য মূল্য নিশ্চিত করার জন্য বাজারে যেতে হয়েছে। মানুষের কাছে থেকে কাজ করতে হয়েছে। বিভিন্ন কারণে কোথায়ও বিক্ষোভ হলেও সেখানে পুলিশকে মাঝখানে থেকে কাজ করতে হয়েছে।
তিনি এও বলেন, “এই ভাইরাসে যখন কেউ মারা যাচ্ছেন আর কেউ এগিয়ে না আসলেও পুলিশ সদস্যরা যাচ্ছেন ওই ব্যক্তির জানাজা বা সৎকারে এবং দাফনে যাচ্ছেন- এতে করে পুলিশে কিছু ঝুঁকি থাকছে।”



অনেক ক্ষেত্রে পুলিশকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হয় বলে সব সময় সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হয় না স্বীকার করে এআইজি সোহেল রানা বলেন, “আমরা সুরক্ষা সামগ্রী যা পরছি তা শতভাগ সুরক্ষা কখনও দেয় না। এ ধরনের ঝুঁকি আমাদের কাজে রয়েছে। আমাদের কাজে বৈচিত্র্যের কারণে, ইউনিকনেসের কারণে বাড়তি ঝুঁকির মধ্যে পড়ছি।”
এছাড়া পুলিশের কোনো একজন আক্রান্ত হলে অন্যদের মধ্যে সহজে সংক্রমিত হওয়ার বেশি ঝুঁকি থাকে বলেও জানান তিনি। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “ব্যারাকে বা পুলিশ লাইনসে যেভাবে থাকে চিরাচারিতভাবে অল্প পরিসর জায়গায় অনেককে থাকতে হয়। প্রতিনিয়ত মান উন্নয়নের জন্য কাজ করা হচ্ছে। তবে হুট করে বর্তমান এই পরিস্থিতিতে ব্যারাকে বা লাইনসে যারা অনেকে এক সঙ্গে থাকেন। এই একসঙ্গে থাকা একটু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমরা চেষ্টা করেছি, সেখানে যারা থাকেন তাদের সামাজিক দূরত্ব বাজায় রাখার জন্য। তা আমরা করেছিও স্বাস্থ্য বিধি মেনে থাকার জন্য।”



তারপরও পেশাগত কারণে বাড়তি কিছু ঝুঁকির মধ্যে সব সময় থেকে যাই। এই সকল কারণে বাংলাদেশ পুলিশে সংক্রমণের হার একটু বেশি। যেহেতু আমাদের ঝুঁকি বেশি, আমরা ঝুঁকি নিচ্ছিও বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষায় পুলিশ সদস্যদের আরও সাবধানে কাজ করতে হবে। তিনি বলেছেন, “মুখে মাস্ক অবশ্যই রাখতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। হাত কোনোভাবেই মুখে দেওয়া যাবে না।”