করোনাভাইরাসে ৩৩ বছরে সবচেয়ে বাজে অবস্থায় বিশ্ব পুঁজিবাজার

অর্থবাজার ডেস্ক
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ঐতিহাসিক ক্ষতিতে পড়েছে বিশ্ব শেয়ারবাজার। যুক্তরাষ্ট্রের ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ সূচক ও লন্ডনের এফটিএসই ১০০ সূচকে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ১৯৮৭ সালের পর সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে। এই তিন মাসে বিশ্বের প্রধান সূচক দুটি ২৩ শতাংশ ও ২৫ কমেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ এই ত্রৈমাসিকে ২০ শতাংশ দর হারিয়েছে, যা ২০০৮ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ দরপতন।
প্রাণঘাতী ভাইরাসটির বিস্তার কমাতে দেশে দেশে বেশিরভাগ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার মধ্যে শেয়ারবাজারের এই দরপতন হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে এবার বিশ্ব অর্থনীতিতে যে আঘাত আসবে তাতে বিগত ২০০৮ সালের মন্দার চেয়ে বড় আর্থিক সংকট তৈরি হবে বলে অর্থনীতিবিদরা হুঁশিয়ার করেছেন।
বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান আইএইচএস মার্কিটের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৮ শতাংশ হারে কমবে। আগের মন্দার পর ২০০৯ সালে প্রবৃদ্ধি কমেছিল ১ দশমিক ৭ শতাংশ হরে কমেছিল।
কোনও দেশই অক্ষত নেই। সংস্থাটির হিসাবে, চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবার ২ শতাংশ হারে কমবে এবং যুক্তরাজ্য প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৪ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। ইতালি ও স্বল্পোন্নত অর্থনীতির দেশগুলির পরিস্থিতি আরও খারাপ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সভাপতি ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা মঙ্গলবার বলেছেন, “২০২০ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রবণতায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন; বিশেষ করে মন্দা পরিস্থিতি উদীয়মান বাজার ও স্বল্প আয়ের দেশগুলিতে যে আঘাত হানবে তা নিয়ে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আগামী তিন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার ৩২ শতাংশের বেশি বেড়ে যেতে পারে, যেখানে চার কোটি ৭০ লাখের বেশি মানুষ তাদের চাকরি হারাবে।
বিশ্বজুড়ে অনেক মূল্য সূচি বছরের শুরুর চেয়ে ২০ শতাংশের বেশি কমেছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় ও উত্পাদকদের মধ্যে মূল্য যুদ্ধের তেলের দামে খাড়া দরপতন বিশ্ব অর্থবাবাজারের সমস্যাগুলিকে প্রকট করে তুলেছে।
তবে এমন পরিস্থির মধ্যে দেশে দেশে সরকারগুলি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বড় আকারের তহবিলের ঘোষণা দেওয়ার সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজার কিছুটা চাঙা হয়েছে।
মঙ্গলবার লন্ডনের এফটিএসই প্রায় দুই শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে জার্মানির ডিএএক্স এবং ফ্রান্সের সিএসি ৪০ সূচকও কিছুটা বেড়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান সূচক হোঁচট খেয়েছে। যেমন ডাউ জোন্স সূচকের এক দশমিক ৮ শতাংশ, এসএন্ডপি ৫০০-এর এক দশমিক ৬ শতাংশ ও নাসডাক সূচকের প্রায় ১ শতাংশ দর হারিয়েছে।
এই প্রান্তিকে জ্বালানি ও আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর ফলাফল সবচেয়ে খারাপ ছিল। দোকান বন্ধ থাকায় তলানিতে ঠেকা বিক্রি পরিস্থিতি নিয়ে বড় ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে খুচরা বিক্রেতা কোম্পানিগুলো। বেশিরভাগ কর্মীদের অবৈতনিক ছুটি ঘোষণার পর দিন রিটেইলার কোম্পানি ম্যাসি একদিনে প্রায় ৯ শতাংশ দর হারিয়েছে।
ইউএস ব্যাংক ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের বিশ্লেষকরা লিখেছেন, মুদ্রানীতি ও আর্থিক খাতে প্রণোদনার ঘোষণার পরও যতক্ষণ পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর মেয়াদ ও প্রভাব অজানা থাকবে, তেলের দাম অবদমিত ও মুনাফার সম্ভাবনা মেঘাচ্ছন্ন থাকবে, ততদিন শেয়ারবাজারের অস্থিরতা বাড়তে থাকবে বলেই আমরা আশঙ্কা করছি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন