|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার ‘ঘোড়া’কে যেনো কোনভাবেই বাগে আনা যাচ্ছে না। গেলো কয়েকমাস ধরে প্রতিদিনই খবর মিলছে কোন না কোন পণ্যের দাম বাড়বার। বাজারে গিয়ে মাথায় হাত পড়ছে সাধারণের।
গেলো বছরের মাঝামাঝিতে পেঁয়াজের দাম বাড়ে অস্বাভাবিক এবং অযৌক্তিকভাবে। রাষ্ট্র, সরকার ও ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে বলা হয় ভারত রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। তাছাড়া দেশে উৎপাদনও কম হয়েছে। তাই এই অবস্থা। খুব শিগগিরই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সরকারের দিক থেকে প্রতি কেজির দাম ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েও কমানো যায়নি পেঁয়াজের দাম। ভরা মৌসুমে বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসায় দাম ২০ থেকে ২৫ টাকায় নেমে আসলেও তা খুব বেশীদিন স্থির থাকেনি।দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা বেড়েছে। এই মুহূর্তে সাধারণকে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে সেই ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়!
পেঁয়াজ প্রসঙ্গে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির জানান, টিসিবির খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি চলছে। বিদেশি এসব পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই বিক্রি কার্যক্রম আগামী এপ্রিল পর্যন্ত চালু রাখা হবে।
গেলো কয়েকমাস আগে বাড়ে আলুর দাম। ২৫ টাকা কেজির আলু সাধারনকে কিনতে হয় ৫০ বা তারও বেশী দামে। এই অবস্থা চলে বেশ কিছুদিন। ভরা মৌসুমেও প্রতি কেজি আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে সাধারনকে।
এখন আবার শুরু হয়েছে খাবার তেল নিয়ে তেলেসমাতি। গেলো মাসখানেক ধরেই বাড়ছে তেলের দাম। গেলো সাতদিনের ব্যবধানে লিটার প্রতি তেলের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। দাম কমা বা কমানোর কোন লক্ষণ বা উদ্যোগ নেই বললেই চলে।
শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে নতুন দরে বোতলজাত তেল বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রতি লিটার রূপচাঁদা সয়াবিন তেল ১৪০ টাকা এবং অন্যান্য কোম্পানির তেল ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেসব দোকানে আগের দরের তেল রয়েছে তারাও এখন বাড়তি দামেই বিক্রি করছে। তবে দু-একটি দোকানে ১৩০ টাকা লিটারে বিক্রি হতে দেখা গেছে। খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১৪ থেকে ১১৬ টাকায়। কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুস সামাদ জানান, এর আগে এত বেশি দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হয়নি।
এরইমধ্যে ব্যবসায়ীরা জানান দিচ্ছেন, অস্থিরতা দেখা দিয়েছে আটা ও ময়দার বাজারে। এই দুটি ভোগ্যপণ্যের দাম কেজিতে বেড়েছে দুই থেকে চার টাকা।এ ছাড়া রসুন, আদা ও হলুদের দামও বেড়ে গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দর কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা।
মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজারে আসা একজন ক্রেতা বেশ ক্ষুব্ধ কন্ঠেই বললেন, চাল, ডাল, আটা, তেল ও পেঁয়াজের মতো পন্যগুলোর দাম বাড়লে কিছুটা আলোচনা সমালোচনা হয়। কিন্তু একটা সংসারে কী শুধু এগুলোই লাগে। সাবান-সোডা, মসলাপাতিসহ অন্য সহযোগি পণ্যগুলোর দাম যেভাবে নীরবে বেড়েই চলেছে তাতো কেউ বলেন না। আমরাতো অসহ্যরকমের অসহায়ত্বের মধ্যে আছি।
এদিকে পন্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে রাখা তদারকি করতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির তথ্য বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে তেলের দাম বেড়েছে লিটারে গড়ে ১০ টাকা। আর এক বছরের ব্যবধানে বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। দেশের বাজারে তেলের সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে আটা ও ময়াদার দাম। কেজিপ্রতি ২ থেকে ৪ টাকা বেড়ে খোলা আটার কেজি এখন ৩০ থেকে ৩২ টাকা, প্যাকেট আটা ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা, খোলা ময়দা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা ও প্যাকেট ময়দা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা হয়েছে।
পেঁয়াজের দাম না কমার কারণ জানাতে কারওয়ান বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, এবার মুড়িকাটা পেঁয়াজ আগাম তুলে ফেলায় মৌসুমও আগেভাগে শেষ হয়েছে। পরিপক্ক হালিকাটা পেঁয়াজ আসতে কিছুদিন সময় লাগবে। এ কারণে এখন বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। এই বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারিতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ, যা আগে ২০ থেকে ২২ টাকা ছিল। খচুরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৬ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে গড়ে ১০ টাকা বেড়ে দেশি রসুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং আমদানি রসুন ১১৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে দেশি ও আমদানি করা আদা ৮০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি হলুদের দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ২৩০ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।