|| বার্তা সারাবেলা/রয়টার্স ||
জান্তা পুলিশের গুলি আর প্রতিবাদ সংঘাতে সেনাশাষিত মিয়ানমারে বুধবার অন্তত ৩৮ জন মারা গেছেন। এমনি হত্যার দিনকে সামরিক অভ্যুত্থানের পর ‘সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন’ হিসেবে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ। মঙ্গলবার দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলো মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানানোর পরদিনই এক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটল।
এমন দমনপীড়ন সত্ত্বেও প্রতিদিনই সেনাশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই বাড়ছে সোচ্চারন। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার নতুন করে বিক্ষোভে নামার অঙ্গীকার ঘোষনা করেছে দেশটির গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, বুধবার পুলিশ ও সৈন্যরা গুলি চালানোর আগে বিক্ষোভকারীদের সেভাবে সতর্কও করেনি। এক মাস আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সে দেশের নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই সেখানে বিক্ষোভ ও রক্তপাত ধারাবাহিকভাবেই বাড়ছে।
বিক্ষুব্ধ মং সংখ বলেন, “আমরা জানি, যে কোনো সময় গুলিতে নিহত হতে পারি। কিন্তু জান্তার অধীনে বেঁচে থাকার কোনো অর্থ নেই। মুক্তির জন্য বিপজ্জনক এই পথই বেছে নিয়েছি আমরা। আমরা যেভাবে পারি জান্তার সঙ্গে লড়াই করে যাব। সামরিক জান্তার শেকড় গোড়া থেকে উপড়ে ফেলাই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।”



এরইমধ্যে দেশটির ‘জেনারেল স্ট্রাইক কমিটি অব ন্যাশনালিটিস’ বৃহস্পতিবার প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গনে তাদের আরও অন্তত দুটি বিক্ষোভ আয়োজনের পরিকল্পনা আছে বলে অন্যান্য আন্দোলনকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টে জানিয়েছেন।
এদিকে মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিনা শানার নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, মিয়ানমারে ১লা ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর বুধবারের ৩৮ মৃত্যু নিয়ে সবচেয়ে ‘রক্তাক্ত দিন’ পার করলো, এতে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দৃঢ় করার চেষ্টায় মোট মৃত্যু ৫০ ছাড়িয়ে গেছে। ক্রিস্টিনা শানার আরো জানান, অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কয়েকটি দেশের কঠোর পদক্ষেপ ও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে বলে বাহিনীটির উপপ্রধান সোয়ে উয়িনকে সতর্ক করা হয়েছে। তবে এর উত্তরে সোয়ে উয়িন বলেন, ‘আমরা নিষেধাজ্ঞায় অভ্যস্ত আর আমরা বেঁচেও ছিলাম’।



ক্রিস্টিনা শানার এও বলেন, “তারা (সেনাশাসক) বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে বলে যখন সতর্ক করলাম, উত্তর পেলাম: ‘অল্প কিছু বন্ধু নিয়ে চলা শিখতে হবে আমাদের’।”
কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের শুক্রবার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসার কথা আছে।
এদিন কয়েকশ আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। তবে এমনসব দমন পীড়ন সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে ফোন করা হলেও ক্ষমতাসিন সামরিক কাউন্সিলের মুখপাত্র কোন জবাব দেননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি দল এক বিবৃতিতে নিহতদের স্মরণে তাদের কার্যালয়গুলোতে পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে বলে জানিয়েছে।