|| বার্তা সারাবেলা ||
মিয়ানমারের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় একটি শহরে নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে শিকারের রাইফেল ও আগুনবোমা নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভকারীরা। এরইমধ্যেই সেনাগুলিতে নিহত হয়েছেন ১১ জন প্রতিবাদকারী। বৃহস্পতিবার স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে এসব তথ্য এসেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
বার্তা সংস্থা বিবিসি জানিয়েছে, বিক্ষুব্ধদের গুলি করে খুন করবার ধারাবাহিকতায় এবারে দেশটির শিল্পী ও অভিনেতাদেরকেও গ্রেফতার করতে শুরু করেছে জান্তাসরকার। বৃহস্পতিবার জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেতা পেয়িং তাকহনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুধু নিজের দেশিই না, পাশের দেশ থাইল্যান্ডেও সমান জনপ্রিয় তাকহন শুরু থেকেই জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে অনলাইন ও রাস্তার বিক্ষোভে নিজের জোরালো উপস্থিতি রেখে আসছিলেন।
স্থানীয় গণমাধ্যম মিয়ানমার নাও ও ইরাবতী জানিয়েছে, তেজ শহরের বিক্ষোভকারীদের দমনে প্রথমে সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর ছয় ট্রাক ভর্তি সেনা মোতায়েন করা হয়। বিক্ষোভকারীরা বন্দুক, ছুরি ও বোমা নিয়ে পাল্টা লড়াই শুরু করলে অতিরিক্ত আরও পাঁচ ট্রাক ভর্তি সেনা নিয়ে আসা হয়।
বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই চলতে থাকে এবং অন্তত ১১ জন প্রতিবাদকারী নিহত ও ২০ জন আহত হন বলে গণমাধ্য দুটি জানিয়েছে। সেনাদের মধ্যে কেউ মারা গেছেন কিনা তা নিয়ে প্রতিবেদনগুলোতে কিছু বলা হয়নি।
এ ঘটনায় ১লা ফেব্রুয়ারি অং সান সু চীর নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে সামরিক জান্তা মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করার পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত বেসামরিকের সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে ভাষ্য অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজোনার্সের (এএপিপি) । বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫৯৮ জন ছিল বলে জানিয়েছিল আন্দোলনকারী গোষ্ঠীটি।
তেজ শহরের নিকটবর্তী কালে শহরে বুধবার একইরকম সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ১২ জন নিহত হয় বলে সংবাদ মাধ্যম ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য। সু চির সরকারকে ক্ষমতায় পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভরতদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী তাজা গুলি, গ্রেনেড ও মেশিনগান ব্যবহার করে বলে এএপিপি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্যে জান্তার মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। সেনাঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় বৃহস্পতিবার সরকার মিয়ানমারের জনপ্রিয় অভিনেতা ও মডেল পাইং তাখোনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে তার বোন রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
তার বোন জানান, কিছুদিন ধরেই ম্যালেরিয়া ও হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছিলো পাইং। ইয়াঙ্গনের স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৪টায় বাবার বাড়ি থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। পাইং এখন কোথায় আছে, সে বিষয়ে কিছুই জানে না তার পরিবার।
মঙ্গলবার দেশটির সবচেযে জনপ্রিয় কমেডিয়ান জারগানারকেও একই কারণে আটক করা হয়।
মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গনে বিক্ষোভকারীরা ফুলভর্তি জুতা বিভিন্ন জায়গায় রেখে নিহত প্রতিবাদকারীদের স্মরণ করেছে।
এএপিপির তথ্য অনুযায়ী, এই মুহুর্তে মিয়ানমারে আটক আছেন প্রায় ২৮৫০ বিক্ষোভকারী। গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে আরও কয়েকশ মানুষের বিরুদ্ধে। ইয়াংগুন শহরের বিখ্যাত শিল্পী ও তারকাদের পাশাপাশি জান্তা গ্রেপ্তার করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরকেও।