|| বার্তা সারাবেলা (রয়টার্স) ||
বৈরুত বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৭৮ এ। আর আহত মানুষের সংখ্যা ৪ হাজারের কাছাকাছি। শহর কেন্দ্রের পাশে বন্দরের রাসায়নিক গুদামে মঙ্গলবার এই বিস্ফোরণ ঘটে। এতে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে গোটা বন্দর এলাকা। ভেঙ্গে পড়েছে ভবনগুলোর শার্ষি আর জানালার কাঁচ। বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গোটা শহরে। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে বিষাক্ত গ্যাস। শহরবাসীকে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে আসতে বারণ করা হচ্ছে। আসলেও অনুরোধ করা হচ্ছে মাস্ক পরতে।
কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যেই উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। বিধ্বস্ত ভবনগুলোর ধ্বংসাবশেষের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে হতাহত মানুষ। এখন পর্যন্ত ৭৮ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেলেও এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আহতদের চিকিৎসা দিতে সামলে উঠতে পারছে না হাসপাতালগুলো।
বেশ ক’বছর ধরে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত লেবাননের মানুষ করোনা অভিঘাতে আরও বেসামাল হয়ে পড়েছে। এরইমধ্যে আকস্মিক এই দুর্যোগ দেশটির সার্বিক পরিস্থিতি আরও অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই।

দেশটির প্রেসিডেন্ট মিশেল আওন বলেছেন, যে গুদামটিতে বিস্ফোরণ হয়েছে সেখানে গেল ছয় বছর ধরে ২৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট রাখা হয়েছিল। যাতে ছিল না কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না বলেও জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আওন। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে বুধবার সকালেই মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন তিনি। বলেছেন, দু’সপ্তাহের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা উচিত।
এদিকে লেবাবন রেডক্রস প্রধান জর্জ কেত্তানি সম্প্রচার সংস্থা মায়াদিনকে বলেছেন, “যা আমরা দেখছি তাতে করে একে মহাদুর্যোগ ছাড়া আর কোন অভিধায় অভিহিত করা যায় না। বিস্ফোরণস্থল ও এর আশপাশে শুধুই হতাহতের উপস্থিতি।”
বিস্ফোরণের ঘন্টাখানেকের মধ্যেই বৈরুত বন্দর এলাকার রাতের আকাশ আগুনের কমলা রঙে ছেয়ে যায়। চারদিকে শুধু অ্যাম্বুলেন্সের গগনবিদারি সাইরেন আর আকাশে হেলিকপ্টারের উপস্থিতিই বলে দিচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা কতটা।
দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, আহতের সংখ্যা এতো বেশী যে, বৈরুতের হাসপাতালগুলোতে জায়গা হচ্ছে না। তাই অনেককেই শহরের বাইরের হাসপাতালগেুলোতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল এবং পূর্বের বেক্কা উপত্যকা থেকেও অ্যাম্বুলেন্স আনা হয়েছে আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে।
শহরবাসীর অনেকেই বলছেন, বিস্ফোরণের মাত্রা এতোটাই বেশী ছিল যে, এমনটা তারা তাদের দেশে ১৯৭৫ থেকে ৯০ সাল অবধি চলা গৃহযুদ্ধের পর আর প্রত্যক্ষ করেননি। মনে হয়েছিল বড় ধরনের কোন ভূমিকম্পে দেবে যাচ্ছে গোটা শহর। আর এরপরপরই বন্দর ও এর আশপাশের রাস্তাগুলোতে মানুষের আহাজারি আর স্বজনদের খোঁজে অসহায় ও উপদ্রুত মানুষের ছুটোছুটি।



প্রিয়জনের খোঁজে অনেকেই ছুটছেন হাসপাতালগুলোতে। রউবা নামের একজন স্বাস্থ্যকর্মী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “একটি জরুরি বিভাগেই তারা তিনশ’র বেশী আহত মানুষকে ভর্তি করেছেন। আমার চাকরিজীবনে একসঙ্গে এতো বেশী আহত মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি হতে দেখিনি। এটা একটা নারকীয় পরিস্থিতি।”
প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব দেশের মানুষকে বলেছেন, “বিপজ্জনক গুদাম” এমন বিস্ফোরনের দায় সরকারসংশ্লিষ্টদেরকে নিতে হবে। বিস্ফোরণের পরপরই এক টেলিভিশন ভাষনে দেশের মানুষকে ধৈর্য ধরবার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা এর জন্য দায়ি তাদেরকে শাস্তি পেতে হবে। এবং এই বিস্ফোরণ কেন ঘটেছে তার বিস্তারিত খুঁজে বের করে দেশের মানুষকে জানানো হবে বলেও অঙ্গীকার করেন প্রধানমন্ত্রী।
বুধবার শোকের দিন ঘোষণা করা হয়েছে সারা লেবাননে। ব্যাংকগুলোতে লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে ব্যাংক সমিতি।



শহরের মানুষকে বিস্ফোরণের ফলে ছড়িয়ে পড়া বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে বৈরুতে মার্কিন দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি সামলে না নেওয়া অবধি শহরবাসীকে ঘরে থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। খুব বেশী দরকার না পড়লে ঘরের বাইরে না বেরোনোর পরামর্শ দিয়ে মাস্ক পরতে বলা হয়েছে সবাইকে।
এখন পর্যন্ত বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ জানা না গেলেও স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, রাসায়নিক গুদামের একটি ছিদ্র সারতে ওয়েলডিং করা হচ্ছিল। আর এ থেকেও বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে।
এদিকে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসান জানিয়েছেন, সরকার এই দুর্যোগ সামাল দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, অনেক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। শহরে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ থাকায় রাতের বেলাতে উদ্ধার কাজ সর্বোচ্চমাত্রায় করা যায়নি। তবে বুধবার সকাল থেকে পূর্ণমাত্রায় উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সংবাদসূত্র ও ছবি : রয়টার্স।