|| বার্তা সারাবেলা/বিবিসি ||
ইন্দোনেশিয়ায় স্কুল কলেজে ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য কিংবা জোরাজুরি করা যাবে না। সম্প্রতি দেশটির খ্রিস্টান এক মেয়েকে তার স্কুল কর্তৃপক্ষ জোর করে হিজাব পরানোর চেষ্টা করেছিল। এই ঘটনা অনলাইনে ভাইরাল হওয়ার পর দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়। যার জেরে দেশটির সরকার স্কুলে ধর্মীয় পোশাক পরা নিয়ে জোর জোরাজুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। খ্রিস্টান ওই মেয়েটি যে স্কুলে লেখাপড়া করে সেখানে ছাত্রীদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলক।
বিবিসি জানায়, গত বুধবার ওই নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত একটি ডিক্রি সই হয়। ডিক্রিতে সরকার ইন্দোনেশিয়ার স্কুল কর্তৃপক্ষকে নিজ নিজ স্কুল থেকে সব ধরনের কট্টর নিয়ম তুলে নিতে ৩০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে। যেসব স্কুল সরকারের আদেশ মানবে না তাদের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হতে পারে।
ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষা ও সংস্কৃতিমন্ত্রী নাদিম মাকারিম বলেন, ‘‘কেউ তার নিজের পছন্দ অনুযায়ী ধর্মীয় পোশাক পরতেই পারেন। এটা তার ব্যক্তিগত অধিকার…কোনোভাবেই স্কুল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত চাপিযে দিতে পারে না।”
খ্রিস্টান পরিবারের ওই মেয়েটি পাডাংয়ে একটি কারিগরি স্কুলে পড়ে। জানুয়ারিতে ক্লাস শুরুর পর থেকেই স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে বার বার স্কুলে-ক্লাসে হিজাব পরতে বলতেন। বিবিসি জানায়, ওই ছাত্রী হিজাব পরতে অস্বীকৃতি জানালে স্কুল কর্তৃপক্ষ তার বাবা-মাকে ডেকে পাঠায়। তার বাবা-মা স্কুলে যায় এবং গোপন ক্যামেরায় স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের কথোপকথনের ভিডিও ধারন করে।
ওই ভিডিও তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করলে মুহূর্তে তা ভাইরাল হয়ে যায় এবং দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। ওই ভিডিওতে স্কুল কর্তৃপক্ষকে বলতে শোনা যায়, স্কুলের একটি নিয়ম আছে। সেই নিয়মানুযায়ী ছাত্রীরা যে ধর্মেরই হোক স্কুলে তাদের অবশ্যই হিজাব পরতে হবে।
মেয়েটির বাবা বিবিসিকে বলেন, ‘‘প্রায় প্রতিদিনই আমার মেয়েকে হিজাব না পরার জন্য ডেকে পাঠানো হত এবং উত্তরে সে সবসময়ই বলতো সে মুসলিম নয়। ‘যদি আমি তাকে হিজাব পরতে জোর করতাম, তবে তো সেটা তার পরিচয় নিয়েই মিথ্যাচার হতো। কোথায় আমার ধর্ম পালনের অধিকার? তার উপর এটা একটি সরকারি স্কুল।”
এ ঘটনায় ইন্দোনেশিয়া জুড়ে তোলপাড় শুরু হলে সংবাদ সম্মেলন ডেকে ওই স্কুলের অধ্যক্ষ ক্ষমা চান এবং বলেন, শিক্ষার্থীদের তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী পোশাক পরতে দেওয়া উচিত।
মুসলমান অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়ায় অন্য ধর্মের মানুষদেরও সরকারিভাবে যথাযথ স্বীকৃতি ও সম্মান দেওয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি দেশেটিতে ধর্মীয় চরমপন্থার উত্থান ঘটছে।