|| বার্তা সারাবেলা ||
প্রধান সম্পাদককে বরখাস্তের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে হাঙ্গেরির শীর্ষস্থানীয় সংবাদ প্রতিষ্ঠান ইনডেক্স.এইচইউ’র প্রায় সব সংবাদকর্মী। ইতোমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদকীয় পর্ষদ ও পঞ্চাশের বেশী আর কাজে যাচ্ছেন না। শুক্রবার ইনডেক্সের সকল ডেস্ক সম্পাদকসহ সম্পাদকীয় কর্মীবাহিনীর ৯০ জনের মধ্যে ৭০ জনের বেশী কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়। একইসঙ্গে তারা তাদের পদত্যাগপত্রও দিয়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছে।
এরআগে চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে সম্পাদকীয় কাজে রাষ্ট্রনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ করায় বরখাস্ত করা হয় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সম্পাদক এসজাবোলসএস দুলকে। যার প্রতিবাদে চলছে তীব্র অসন্তোষ।
ইনডেক্সের উপ সম্পাদক ভেরোনিকা মাঙ্ক পদত্যাগের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বলেন, “সীমার সবটাই অতিক্রম করেছে কর্তৃপক্ষ।”
ইতোমধ্যেই ইনডেক্সের ওয়েবাসাইটে হাঙ্গেরিয় ও ইংরেজি ভাষায় একটি ‘খোলা চিঠি’ও প্রকাশ করেছে পদত্যাগি সংবাদকর্মীরা।চিঠিতে বলা হয়, “সম্পাদকীয় পর্ষদ মনে করছে যে, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সংবাদপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার কোন পরিবেশই আর রাখা হয়নি এবং তাদেরকে চাকরিচ্যূত করবার সব ব্যবস্থাই বাস্তবায়ন করা হয়েছে।”
মাঙ্ক এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিশ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ছাত্র অবস্থায়। ১৮ বছর পর প্রতিষ্ঠান ছাড়তে গিয়ে অন্য সবার মত নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি তিনিও।
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/07/Hungery-Journalist-1.jpg?w=1200&ssl=1)
ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স এর মূল্যায়ণে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার দিক থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে সবথেকে খারাপ অবস্থায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে হাঙ্গেরির অবস্থান দ্বিতীয়। আর সেই পরিস্থিতিতে ইনডেক্সকে মনে করা হতো সবশেষ স্বাধীন একটি সংবাদপ্রতিষ্ঠান। কট্টর ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রী ভিকতর অরব্যানের গেল এক দশকের শাসনসময়ে দেশটির গণমাধ্যমের স্বাধীণতা ধীরেই সংকুচিত হয়ে আসছে। ইতোমধ্যেই অনেক সংবাদ প্রতিষ্ঠান কিনে নিয়েছেন সরকারসমর্থিত ব্যবসায়ীরা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কিংবা বন্ধ হয়ে গেছে অনেক সংবাদ প্রতিষ্ঠান।
এরইমধ্যে শুক্রবার পর্তুগাল সফরে থাকা হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেতেএর এসজিজার্তো বলেছেন, সরকারের হস্তক্ষেপের কারণেই ইনডেক্সে এমন অসন্তোষ ও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা “অসত্য”, এবং এর কোন ভিত্তি নেই। একইসঙ্গে সংবাদ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহি লাসজেলো বোদোলাই বেশ জোর গলায় দাবি করেছেন, ইনডেক্সের সম্পাদকীয় কাজে বাইরে থেকে কোন প্রকার হস্তক্ষেপের অবকাশ নেই।
তবে মাঙ্ক বলেন, গেল কয়েকদিনের মিটিংগুলোতে দুলকে কাজে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বোদোলিকে অনেকবার বলা হয়েছে। কিন্তু তাতে তিনি কোন গা করেননি। বরং বলার চেষ্টা করেছেন, এটি দুলের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তারপরও আমি মনে করি এটি প্রকৃত কোন কারণ নয়। এর পেছনে অন্য কোন কারণ থাকতে পারে।”
উল্লেখ্য, এ বছরের গোড়ার দিকে সরকারসমর্থিত এক ব্যবসায়ী ইনডেক্স হোল্ডিং কোম্পানির একটা বড় শেয়ার কিনে নেন। এবং মাস খানেক আগে সংবাদ প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে পাঠক-অনুসারীদের সতর্ক করে বলা হয়েছিল, তাদের সম্পাদকীয় স্বাতন্ত্র্য ঝুঁকির মুখে। বুধবার বরখাস্ত হওয়ার পর বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান সম্পাদক দুল বলেন, “ইনডেক্স একটি শক্তিশালী দুর্গ। তাই এটিকে ওরা ধ্বংস করতে চায়।”
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/07/Hungery-Protest-01.jpg?w=1200&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/07/Hungery-Protest-01.jpg?w=1200&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/07/Hungery-Protest-01.jpg?w=1200&ssl=1)
মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী মানুষের।
এদিকে ইনডেক্সের সংবাদকর্মীদের প্রতি একাত্মতা ও সংহতি জানিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানী বুদাপেস্টে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী কয়েকশ মানুষ।
পদত্যাগি সংবাদকর্মীরা জানান, বিশ্বজুড়ে আর্থিক মন্দা পরিস্থিতি এবং স্বাধীন সংবাদমাধ্যমবিরুদ্ধ হাঙ্গেরির সরকার ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে তাদের খুব বেগ পেতে হয়েছে এবং হচ্ছে। তারপরও তারা চেষ্টা করছেন কীভাবে সবাই একসঙ্গে থেকে কিছু একটা করা যায়।
এ প্রসঙ্গে মাঙ্ক বলেন, “আগামীতে কী করা যায় সেটা নিয়ে আমরা ভাবছি।ঠিক এই মুহূর্তে আমরা কী করবো সেটা হয়তো জানা নেই। নেই কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাও। তারপরও আমাদেরকে এক থাকতে হবে। আমরা জানি, হাঙ্গেরির বর্তমান রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থায় এটা খুবই কঠিণ একটি কাজ।”
তথ্যসূত্র : দ্য গার্ডিয়ান