|| বার্তা সারাবেলা ||
ভারতীয় জনতা পাটি- বজেপি নেতৃত্বাধীন মোদি সরকারের করা বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে অনড় ভারতের আন্দোলনকারী কৃষকরা। এরইমধ্যে কৃষক আন্দোলনে বিভক্তি তৈরি করতে নতুন কৃষি আইনের বিকল্প খুঁজছে মোদি সরকার। বুধবার কৃষকপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ষষ্ঠ দফা বৈঠকেও কোন সুরাহা না হওয়ায় কৃষি উদারিকরণের এই নীতিকে অন্য কোনভাবে কৃষকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যায় কি না সেই উপায় বের করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার। সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এসব তথ্য জানিয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুরে কৃষক সংগঠনগুলির ডাকা ভারতজুড়ে বনধ চলাকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দপ্তর থেকে ফোন করে কৃষক নেতাদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, কিন্তু বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানী দিল্লিতে পুসার ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচারাল রিসার্চের অতিথিশালায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কৃষক নেতাদের বৈঠক হয়। কিন্তু সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে বৈঠক চলার পরও উভয় পক্ষ নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকে। অমিত শাহ প্রথমবারের মতো কৃষক নেতাদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করলেও নয়া কৃষি আইন আইন বাতিলের দাবিতে অটল থাকেন কৃষক প্রতিনিধিরা।

সর্বভারতীয় কৃষাণ সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা বলেন, “এ পর্যন্ত পাঁচটি বৈঠকে সরকার বার বার একই কথা বলেছে। আইন সংশোধনের যে সব কথা মন্ত্রীরা এতোদিন বলে এসেছেন অমিত শাহ্ও তাই বলেছেন। তাকে বলেছি, নতুন কথা বলুন, একই কথা বারবার বলে লাভ কী?” এর জেরে বুধবার কৃষক নেতাদের সঙ্গে মন্ত্রীদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠকটি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি। হান্নান মোল্লা জানান, বুধবার সকাল ১১টার মধ্যে সরকার প্রস্তাব জানিয়ে চিঠি পাঠাবে। যা নিয়ে কৃষক সংগঠনের নেতারা বৈঠক করবেন। এরপর বৃহস্পতিবার সরকারের সঙ্গে ফের বৈঠক হতে পারে।
সরকারের সঙ্গে ছয় দফা বৈঠকেও কোনো ফল না আসায় আন্দোলন আরও জোরদার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে কৃষক সংগঠনগুলো। এরই ফাঁকে নতুন আইনগুলো বাতিল দাবিতে প্রতিরোধ সংগ্রাম আরো কীভাবে জোরদার করা যায় সে নিয়ে অন্যদের সঙ্গে কথাও হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হান্নান। এই লক্ষ্যে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে বহু কৃষক ট্র্যাক্টর নিয়ে দিল্লির পথে রওনা হয়েছেন বলে জানা গেছে। আন্দোলনকারীরা ট্র্যাক্টর নিয়ে রাজধানীর ভিতরে ঢুকে পড়ার পরিকল্পনা করেছেন।



এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেছেন, “আমরা সংশ্লিষ্ট আইনগুলো সংশোধন করতে চাই। কিন্তু এই আইন পুরোপরি বাতিল করা এককথায় অসম্ভব। আরেক সরকারি কর্মকর্তা জানান, তারা তিনটি আইন নিয়েই নতুন প্রস্তাবনা তৈরি করছেন। যা আন্দোলনে সামিল ৩০টি কৃষক ইউনিয়নের নেতাদের সামনে উপস্থাপন করা হবে।” তবে কৃষক নেতারা চাইছেন, বর্তমান কৃষি নীতিতে সরকারি ক্রয়ের যে বিধান রয়েছে তা আগের মতোই রাখতে হবে। সেইসঙ্গে বেসরকারি বাজারেও ক্রেতাদেরকে রাষ্ট্রিয় বাজারের কর ও মুসকসহ সকল শর্ত মানতে হবে।
গত সেপ্টেম্বরে গৃহিত সরকারের কৃষি সংস্কার নীতির প্রতিবাদে গতমাসের শেষ থেকে আজ অবধি সারাদেশে আন্দোলন করে আসছে ভারতের কৃষকরা। তারা বলছেন, সরকারের এই আইনের ফলে কৃষিপণ্য মজুদ, বিক্রি ও এর দাম নির্ধারণের কোনটাতেই তাদের আর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। বিশেষ করে ক্ষুদ্র কৃষকরা বড় ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়বার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।



প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি’র এই ধরণের কৃষি উদারিকরণ নীতি বাতিল দাবিতে গেলো প্রায় একমাস ধরে সারাদেশতো বটেই রাজধানী দিল্লীতে অবস্থান নিয়েছে লক্ষ লক্ষ কৃষক। প্রতিদিনের বিক্ষোভ ও আলোচনার মধ্যেই মঙ্গলবার সারা ভারতে বনধ্ পালন করে তারা। যাতে দেশের মানুষের অংশ গ্রহণ ছিল উল্লেখ করবার মতো।
সরকারের এই কৃষি উদারিকরণ নীতির সমালোচনা করছে জাতীয় কংগ্রেসসহ দেশের বেশীর ভাগ বিরোধী রাজনৈতিক দল ও শ্রমিক সংগঠনগুলোও। তারা বলছে, সরকারের এই নীতির ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উৎপাদকদের মাথায় পা রেখে মুনাফা হাতিয়ে নেবে দেশের কর্পোরেট তথা বৃহৎ ব্যবসায়িরা। যা ক্ষতিতে ফেলবে দেশের আপামর গ্রামীণ অর্থনীতিকে। অচলাবস্থা কাটাতে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ দাবি করতে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে বিরোধীদলীয় নেতা ও সাংসদরা বুধবার দেশের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করবার কথা রয়েছে।



উল্লেখ্য, ভারতের প্রায় তিন ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে কৃষির অবদান ১৫ শতাংশের কাছাকাছি। আর এই অর্থনীতিতে জড়িয়ে রয়েছে দেশটির এক দশমিক তিন বিলিয়ন মানুষ।