|| বার্তা সারাবেলা ||
এবোলা ও হেপাটাইটিস সি এর ওষুধেই কোভিড সারাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকেরা। দেশটির ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) এবোলা প্রতিষেধক রেমডেসিভির দিয়েই করোনা সংক্রমণের চিকিৎসা করাতে শুরু করেছেন।এনএইচএস করোনার মারাত্মক উপসর্গ রয়েছে এমন বেশ কয়েকজন রোগীকে এ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ রেমডেসিভির দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেছেন। এবং তারা বেশ দ্রুত সেরে উঠছেন বলে দাবি এনএইচএস’র।
দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক চিকিৎসকদের এই সাফল্যের প্রশংসা করে বলেছেন, “এটা করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এর চিকিৎসায় বিরাট এক অগ্রগতি।”
এ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির মূলত হেপাটাইটিস সি ও এবোলার চিকিৎসায় কার্যকর প্রমাণিত। এবারেও কোভিড-১৯ রোগীর ক্ষেত্রে রেমডেসিভিরের প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা গেছে এটি শরীরে করোনাভাইরাসকে বাড়তে দিতে বাধা দিচ্ছে। এবং আগে যেখানে সুস্থ হতে ১৫ দিন লাগতো, সেখানে রেমডেসিভিরে মাত্র চারদিনেই রোগী সুস্থ হয়ে উঠছে।
বলা যায়, বয়স্ক থেকে শুরু করে তরুন রোগীদের যারা মারাত্মক উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি, তাদের ক্ষেত্রে রেমডেসিভির প্রয়োগ করছে এনএইচএস।এতে দারুণ সাফল্যও পেতে শুরু করেছেন তারা।
ডাউনিং স্ট্রিটের প্রতিদিনকার ব্রিফিংয়ে মঙ্গলবার মি. ম্যাট হ্যানকক বলেন, সরকারের আর্লি এক্সেস টু মেডিসিনস স্কিমের অংশ হিসেবে নেওয়া এই পদক্ষেপ করোনা চিকিৎসায় একটি সবুজ সংকেত বটে।মারাত্মক কোন অসুখের চিকিৎসায় ওষুধ নির্বাচনের পথপদ্ধতি চালিয়ে যেতে ২০১৪ সালে এই স্কিম চালু করে যুক্তরাজ্য সরকার।
মি. হ্যানকক বলেন, “আজ আমি ঘোষণা করছি, আমরা এনএইচএস হাসপাতালগুলোতে ভর্তি নির্বাচিত কিছু কোভিড ১৯ রোগীর চিকিৎসায় এ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির দিতে শুরু করেছি।”
তিনি বলেন, “ইতোমধ্যেই আশাব্যঞ্জক ফল পেতে শুরু করেছি। প্রাথমিক তথ্য বলছে, সুস্থ হয়ে ওঠার সময়ও কমপক্ষে চারদিন কমে এসেছে। আপনাদেরকে বলছি, আমরা করোনাচিকিৎসায় এখন থেকে এই চিকিৎসাটা চালিয়ে যাবো এবং এতে আমাদের বড় ধরণের সাফল্য আসবে।আর করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত সময়ে এই সংক্রমণের যত রকমের চিকিৎসা হয়েছে এবং হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রেমডেসিভিরেই হবে বড় অগ্রগতি।”
স্কাই নিউজের স্বাস্থ্যবিষয়ক সংবাদদাতা আশীষ জোশি বলছেন, যেখানে ভ্যাকসিন তৈরির জোর চেষ্টা চলছে, সেখানে কোভিড ১৯ সারাতে “রেমডেসিভিরই হতে পারে চিকিৎসকদের কাছে সমূহ সম্ভাব্য ওষুধ।”
এখন পর্যন্ত খুবই কম সংখ্যক রোগীকে রেমসেডিভির দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আশীষ জোশি বলেন, সরকার ঠিক বলে উঠতে পারছে না ঠিক কতদিকে এইসব রোগী সেরে উঠবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী অবশ্য রেমডেসিভির নিয়ে বেশ আশান্বিত। কিন্তু আমাদের আশাবাদী হওয়ার ক্ষেত্রে একটু সতর্ক হওয়া দরকার।
আর চিকিৎসকদের রেমডেসিভিরের এমন সাফল্যসংবাদে ইতোমধ্যেই এই ওষুধটির ঘাটতি পড়েছে। তবে এর উৎপাদকেরা বলছেন, তারা বিশ্বজুড়েই রেমডেসিভিরের সরবরাহ বাড়াতে শুরু করেছেন। তারপরও বলা যায় আগামী কয়েকমাস এর ঘাটতিটা থেকেই যাবে।”
যুক্তরাজ্যের সরকারী মুখপাত্র জানাচ্ছেন, রেমডেসিভিরের ব্যবহার নিয়ে অবস্থান পরিস্কার করতে দেশের স্বাস্থ্য ও সোস্যাল কেয়ার বিভাগ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গিলিড সায়েন্সেস, এনএইচএস এবং মেডিসিনস এন্ড হেলথকেয়ার প্রডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সির মত সংগঠগুলোর সঙ্গে কাজ করছে।
এদিকে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রা্ন্স, ইতালী ও চীনে এমাসের প্রথম দিকে এক হাজার রোগীকে রেমডেসিভির দেওয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে রেমডেসিভির উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলেছেন, রেমডেসিভির প্রয়োগের পক্ষে তার সরকারের “পূর্ণ সমর্থন ও ক্ষমতা” রয়েছে।
এদিকে যুক্তরাজ্যের আবিস্কার ও ধারণা (ইনোভেশন)বিষয়ক মন্ত্রী লর্ড বেথেল বলছেন, “এনএইচএস এর রেমডেসিভির প্রয়োগে দারুণ অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি আমরা।” তিনি এও বলেন, “আমরা এক বিপর্যস্ত সময় পার করছি, আমাদেরকে এই রোগের চিকিৎসায় এগিয়ে থাকতে হবে। একইসঙ্গে অগ্রাধিকারে রাখতে হবে রোগীদের নিরাপত্তাকেও।
সংবাদসূত্র : স্কাই নিউজ