|| বার্তা সারাবেলা/রয়টার্স-এনডিটিভি ||
ভারতের মোদি সরকারের করা তিনটি কৃষি আইন বাতিল দাবিতে প্রায় মাস খানেক ধরে রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে দেশটির লাখো কৃষক। প্রচন্ড ঠান্ডাতেও তারা রাস্তা ছাড়ছেন না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন কৃষি আইনে ভরসা রাখার জন্য করজোড়ে কৃষকদের কাছে আর্জি জানালেও তাতে সায় নেই কৃষকদের। এমনকি মোদির আলোচনায় বসার ‘বিনীত’ প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছেন তারা।
শুক্রবার মধ্যপ্রদেশে এক কৃষক সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মোদী কৃষি আইন নিয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে কৃষকদের আশ্বস্ত করবার চেষ্টা করেন। এসব আইন নিয়ে কারো কোনও উদ্বেগ থাকলে তা দূর করতে আলোচনায় বসবারও প্রস্তাব করেন।
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/12/India-Farmers-05-1-300x188.jpg?resize=844%2C529&ssl=1)
ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকারের করা বিতর্কিত তিনটি কৃষি সংস্কার আইন বাতিলের দাবিতে কৃষকরা গত তিন সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ করে আসছে। দিল্লি অভিমুখী সড়কও তারা অবরোধ করেছে। দিল্লি ও আশপাশের এলাকাগুলোতে গত কয়েকদিনের প্রচণ্ড ঠাণ্ডাতেও আন্দোলনরত কৃষকরা তাদের দাবিতে অনঢ় থেকে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষক ও সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে ইতোমধ্যে বেশ কয়েক দফা বৈঠকেও কোনও ফল বয়ে আনেনি। কৃষক সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, মোদি সরকারের নতুন কৃষি সংস্কার আইন দেশের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দেবে। সরকারও ধীরে ধীরে নির্ধারিত মূল্যে গম ও ধান কেনা বন্ধ করে দেবে; এতে বেসরকারি ক্রেতার আধিপত্য বাড়বে। যার ফলে তাদেরকে ফসল বেচতে বেসরকারি ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষিতে নামতে হবে।
তবে এসব আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে মধ্যপ্রদেশের সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, কৃষি আইন নিয়ে কৃষকদের মনে যে ধারণা তৈরি হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে কৃষকদের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ মূল্য আগে যেমন ছিল তেমনই থাকবে- সরকার কৃষকদের সেই আশ্বাস দিচ্ছে; এটি তুলে নেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে অহেতুক ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই।”
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/12/Modi-farmers.jpg?resize=858%2C571&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/12/Modi-farmers.jpg?resize=858%2C571&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/12/Modi-farmers.jpg?resize=858%2C571&ssl=1)
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এও বলেন, “বড় বড় দেশগুলোর কৃষকরা আধুনিক যেসব সুযোগ সুবিধা পায়, ভারতের কৃষকদের জন্যও তা সহজলভ্য হওয়া উচিত এবং এতে আর দেরী হতে দেওয়া যায় না। এরপরও কারও কোনও উদ্বেগ থাকলে আমরা সে ভয় দূর করা এবং অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে প্রতিটি ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত আছি।”
কৃষি সংস্কার রাতারাতি করা হয়নি জানিয়ে মোদী বলেছেন, গত ২০-৩০ বছর ধরে কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলো এই ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। এমনকি দেশের কৃষি বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ এবং বহু প্রগতিবাদী কৃষকরাও এ সংস্কারের পক্ষে কথা বলে এসেছেন বলে দাবি করেন মোদি।
প্রচণ্ড ঠাণ্ডাতেও রাস্তা ছাড়ছেন না কৃষকরা
ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, দিল্লি ও আশপাশের এলাকাগুলোতে গত কয়েকদিনের প্রচণ্ড ঠাণ্ডাও আন্দোলনরত কৃষকদের দমাতে পারছে না। বিতর্কিত আইনগুলো বাতিল না হলে ফিরবেন না বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তারা। টানা ২২দিন ধরে কৃষকরা যেখানে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ করছেন বৃহস্পতিবার ভোরে সেখানে ৩৭ বছর বয়সী এক পাঞ্জাবি কৃষকের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সাকলে সিঙ্গু সীমান্তের কাছে এক কৃষক সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা ঠাণ্ডা আবহাওয়ার সঙ্গে লড়ছি; আমাদের এই লড়াই চলমান থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের দাবি পূরণ হবে। এমনকি বৃষ্টি হলেও আমরা নড়বো না।”
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/12/India-farmers-02-3-300x185.jpg?resize=924%2C570&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/12/India-farmers-02-3-300x185.jpg?resize=924%2C570&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/12/India-farmers-02-3-300x185.jpg?resize=924%2C570&ssl=1)
গত কয়েকদিন ধরেই দিল্লি ও এর আশপাশের এলাকার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ডিগ্রি সেলসিয়াস কম বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
এর মধ্যেই কৃষকরা বলছেন, “আমাদের শীত লাগছে না। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে থাকবো।”
ভারতের ২ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির প্রায় ১৫ শতাংশ কৃষির উপর নির্ভরশীল; দেশটির ১৩০ কোটি জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এসব কৃষকদের দাবি নতুন আইনগুলো তাদের জীবন-জীবিকাকে অনিশ্চিত অবস্থার দিকে ঠেলে দেবে। যে কারণে তারা আইনগুলো বাতিলসহ ফসল কিনতে সরকারের বাধ্যবাধকতা বহালসহ আরও বেশ কিছু দাবি জানিয়েছেন।
এ পর্যন্ত মারা গেছে ২০ জন
গেল বৃহস্পতিবার প্রচণ্ড শীতে মারা গেছে এক কৃষক। যার তিনটি সন্তান রয়েছে। যাদের বয়স ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। এ নিয়ে নভেম্বরের শেষদিক থেকে শুরু হওয়া প্রতিবাদে ২০ জনের বেশি আন্দোলনকারী মারা গেছেন বলে জানিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলো। বেশিরভাগ মৃত্যুই বাড়তে থাকা ঠাণ্ডা এবং উত্তর ভারতের উপর দিয়ে বয়ে চলা শৈত্যপ্রবাহের কারণে হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/12/India-farmers-04-300x198.jpg?resize=932%2C615&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/12/India-farmers-04-300x198.jpg?resize=932%2C615&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/12/India-farmers-04-300x198.jpg?resize=932%2C615&ssl=1)
এদিকে ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে অনেক স্থানেই আন্দোলনরত কৃষকদের আগুন পোহাতে দেখা গেছে; দিল্লি মহাসড়কের কাছে বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত কৃষকদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবকরা তাদেরকে কম্বল ও হিটার দিয়ে সহায়তা করছেন।
বৃহস্পতিবার ভোরে ওই পাঞ্জাবি কৃষকের মৃতদেহ মেলার কয়েক ঘণ্টা আগে আন্দোলনের কেন্দ্র দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তের কাছে কৃষক আন্দোলনের সমর্থক এক শিখ যাজক আত্মহত্যা করেন। হরিয়ানার একটি গুরুদ্বারের যাজক বাবা রাম সিং তার আত্মহত্যার নোটে ‘সরকারের অবিচারে ক্রুদ্ধ ও ব্যথিত’ হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
বুধবার আন্দোলন নিয়ে করা বেশ কয়েকটি পিটিশনের শুনানি করতে গিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কৃষক ও সরকারের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন। কৃষক আন্দোলন জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হওয়ার আগেই এর একটি সমাধান বের করা দরকার, বলেছেন তারা।
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/12/India-farmers-06-300x180.jpg?resize=872%2C523&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/12/India-farmers-06-300x180.jpg?resize=872%2C523&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/12/India-farmers-06-300x180.jpg?resize=872%2C523&ssl=1)
আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরুর পর থেকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার ও কৃষক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে বেশ কয়েকদফা বৈঠক হলেও সেগুলোতে ফল হয়নি। সরকার চাইছে, পাস হওয়া কৃষি আইনগুলোর দুয়েকটি ধারা সংশোধনী করে কৃষকদের শঙ্কা দূর করতে। অপরদিকে কৃষকরা সংশোধনীর প্রস্তাব মানতে চাইছে না, তারা চাইছে সরকার বিতর্কিত এ তিনটি আইন পুরোপুরি বাতিল করে কৃষি ও কৃষক সুরক্ষায় আরও নজর দিক।