বিক্ষুব্ধ মিয়ানমারে কিছুটা বিপাকে জান্তাসরকার

|| বার্তা সারাবেলা ||

গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেও জনবিক্ষোভ দমাতে এক প্রকার হিমশিম খাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাশাসক। সম্প্রতি দেশটির রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। গ্রেফতার করে নির্বাচিত নেতা অং সান সু চিসহ অন্য অনেক রাজনীতিককে। আর সেনাবাহিনীর এই ক্ষমতাদখলের বিরুদ্ধে প্রথমদিন থেকেই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে গোটা মিয়ানমার।

বৃহস্পতিবারও দেশটির অনেকগুলো শহরে অভ্যুত্থানবিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশ নেয় হাজার হাজার মানুষ।  বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কোথাও কোথাও পুলিশকে শক্তি প্রয়োগ করতে হয়েছে। রাজধানী নেপিডোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভকারীদের সরাতে জলকামান ব্যবহার করেছে। উত্তরের একটি শহরে ব্যবহৃত হয়েছে ক্যাটাপুল্ট। অভ্যুত্থানবিরোধী টানা কর্মসূচি ও ধর্মঘটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে সরকারি অনেক কার্যালয়।

ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

এরইমধ্যে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বেসামরিক নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সামরিক জান্তা। কাজে ফিরতে নির্দেশ দিয়েছে সরকারি কর্মচারীদের। যারা এই নির্দেশ অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করেছে সেনাশাসকসংশ্লিষ্টরা।

সামরিক জান্তার এসব প্রতিশ্রুতি আর হুঁশিয়ারিতে কোনভাবেই গা করছেন না দেশটির বিক্ষুব্ধ মানুষ। বিক্ষোভকারী কো সোয়ে মিন বলেন, “আমি স্বৈরতন্ত্রে ঘুম থেকে জেগে উঠতে চাই না। আমরা চাই না বাকি জীবন ভয়ের মধ্যে থাকতে।”

বৃহস্পতিবারও ইয়াংগুনে অভ্যূত্থানের বিরুদ্ধ সমাবেশে অংশ নেয় মিনের মতো হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষ। শহরটির সুলে প্যাগোডার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কাছে একাধিক রাস্তার একটি সংযোগস্থলেও প্রতিবাদে অংশ নেয় অসংখ্য প্রতিবাদকারী।

ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

এরআগের সেনাশাসনের সময়ে বিক্ষোভ দমনে নিয়মিত রক্তপাত হলেও এবারে সেনাশাসক খুব একটা কঠোর দমননীতিতে যাচ্ছেন না বলেই প্রতীয়মাণ হচ্ছে। তবে প্রতিবাদকারীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি এবং আইন অমান্যের ডাক ১লা ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা নেওয়া সামরিক জান্তাকে বেশ বিপাকেই ফেলেছে।

বুধবার চালকরা বিভিন্ন সড়ক ও সেতুতে গাড়ি ফেলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যান চলাচলে বাধার সৃষ্টি করেছিল। তবে বৃহস্পতিবার ইয়াংগুনে অনেক চালককেই খুবই ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে দেখা গেছে। ‘ধীরে গাড়ি চালাও’ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মিন বলেন, “সরকারি কর্মকর্তাদের অফিসে যেতে দেরি হলে বা পৌঁছতে না পারলে আমার মতো খুশি আর কেউ হবে না।”

এদিকে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে বিক্ষোভকারীরা অভ্যুত্থানে আটক দুই কর্মকর্তার মুক্তির দাবিতে সমাবেশ করেছেন। রাজধানী নেপিডোতে পুলিশ লাইনের দিকে এগুতে থাকা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যবহার হয়েছে জলকামান।

ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

উত্তরাঞ্চলীয় শহর মেকিনাতে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ক্যাটাপুল্ট ব্যবহার করলে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিক্ষুব্ধ সুত সেং হাতোই বলেন, “তারা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা বা সংবিধান অনুযায়ী কাজ করছে না। তারা সন্ত্রাসীদের মতো আচরণ করছে।”

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার কাছে এখন আইন অমান্য ক্যাম্পেইন বন্ধ করাই বেশি অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এরইমধ্যে ‘বিক্ষোভে প্ররোচনা দেওয়ার’ অভিযোগে বুধবার তারা চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা, গায়কসহ ৬ সেলিব্রেটির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

সংবাদ সারাদিন