|| বার্তা সারাবেলা ||
সুশান্ত সিং রাজপুত। পরিচিতি পেয়েছিলেন অভিনয় দিয়ে। বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে পরিচিত জি টিভিতে সম্প্রচারিত পবিত্র রিশতা সিরিয়ালের মাধ্যমে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের মানুষের চোখে নিজেকে আটকে নিয়েছিলেন জুতো নির্মাতা কোম্পানির একটি বিজ্ঞাপনে নিজের উপস্থিতি দিয়ে। এবার আত্মহন্তারক হয়ে দর্শকদের মনে দাগ এঁকে দিলেন এই রাজপুত!
হতে চেয়েছিলেন প্রকৌশলী। ভর্তি হয়েছিলেন দিল্লি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। তিন বছর পড়বার পর হঠাৎই ঠিক করলেন পড়াশুনা বাদ। করবেন অভিনয়।
সেই অভিনয় জীবনের শেষ টানলেন নিজেকে নিজে খুন করবার মধ্য দিয়ে। বলিউডে সাত বছরের ক্যারিয়ারে সদাহাস্য, চঞ্চল, সাংঘাতিক আত্মপ্রত্যয়ী চরিত্রের সুশান্ত প্রতি পদেই ছাপিয়ে যেতে চাইতেন নিজেকে। মৃত্যুতেও তাই করলেন।
সময়টা ২০০৬ সাল। ঠিক করলেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশুনা ছেড়ে অভিনয় করবেন। তাও আবার মুম্বাইতে। মানে বলিউডে। অনেকেই বলেছিলেন বোকার মত কাজ করছে সুশান্ত।
মুম্বাইতে তার ছিল না কোন ‘বড়ভাই’ বা ‘গডফাদার’, যিনি তাকে হাত ধরে খানিটা এগিয়ে দেবেন। তবে শিগগিরই নজরে পড়েন একতা কাপুরের। আর তিনিই হয়ে ওঠেন সুশান্তর ‘গডমাদার’। মাত্র দুই বছরের মাথায় একটি টিভি শো’তে দ্বিতীয় প্রধান চরিত্রে কাজ করতে শুরু করেন। বছর না ঘুরতেই ‘পবিত্র রিসতা’তে প্রধান চরিত্র। ভারতের সর্বোচ্চ টিআরপি’র এই টিভি সিরিয়াল বাংলাদেশের মত প্রতিবেশী দেশগুলোতেও সুশান্তকে এনে দেয় বিস্তর জনপ্রিয়তা।
এর চার বছর পর। প্রথম চলচ্চিত্র ‘কাই পো চে’!
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/06/Key-Po-Che-1.jpg?resize=593%2C334&ssl=1)
“তোমার যদি স্বপ্ন দেখবার সামর্থ্য থাকে, সেটা হোক যৌক্তিক কিংবা অযৌক্তিক তাতে আসে যায় না। কথা হচ্ছে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তুমি কতটা প্রত্যয়ী-ব্যাস তাতেই হলো, আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না”- এই কথাগুলোই সুশান্ত বলেছিলেন ২০১৯ সালে দিল্লিতে ইন্ডিয়া টুডে আয়োজিত মাইন্ড রকস ইয়থ সামিটে। বলেছিলেন, “সবকিছুই সময়ের ব্যাপার মাত্র”।
সুশান্ত রাজপুত: যতটা না পরিকল্পক তারচেয়েও বেশী ছিলেন স্বপ্নবাজ। গেল বছর নিজের টুইটারে ৫০টি স্বপ্নের কথা জানিয়েছিলেন সুশান্ত। সেগুলোর কতটা কী করে বাস্তবায়ন করা করবেন সে কাজও শুরু করেন। কী করে উড়তে হয় সেটাও শিখতে শুরু করেন।কিন্তু ল্যান্ডিংটা আয়ত্ব করে উঠতে পারেন নি।
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/06/Rajput-1.jpg?w=1200&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/06/Rajput-1.jpg?w=1200&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/06/Rajput-1.jpg?w=1200&ssl=1)
“এটা জরুরি নয় যে, আপনি কোথায় পৌঁছতে চান। এটা একটা জার্নি,” বলেছিলেন ২০১৬ সালে সাংবাদিক রাজদ্বিপ সর্দেশিকে। বলেছিলেন, “এই জার্নিতে কোথাও উুঁচু আবার কোথাও নিচু থাকতেই পারে। এমনকি অনেকের জার্নি কম সময়েরও হতে পারে।” ঠিক তাই সুশান্তর জার্নিটা কম সময়েরই। মাত্র ৩৪ বছরের। গেল ১৪ই জুন নিজের জার্নি শর্ট কাট করে সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন তিনি।
রাজপুতের এভাবে চলে যাওয়াটা হয়তো কষ্টের, হয়তো সহ্য করবার মত নয়। কিন্তু ৩৪ বছরে তিনি তার মত করে তৈরি বিশ্বকে কম দিয়ে যাননি। সাত বছরের ক্যারিয়ারে ১১টি চলচ্চিত্র।গড়ে দিয়ে গেছেন তার মত করে তাকে অনুভব করবার ভিত। আর তাকে মনে রাখবার মত বৈশিষ্ট হচ্ছে তার তারুণ্য, অস্থিরচিত্ততা ও সবকিছুতে নিজের প্রভাব রাখবার প্রয়াস।
কাই পো চে! ছবিতে সুশান্ত দুর্দান্ত এক ক্রিকেটার হয়ে উঠবার সম্ভাবনায় ঋদ্ধ। অন্যকে প্রভাবিত করবার শক্তি ও হয়ে উঠবার প্রতি দুর্দমনীয় আনুগত্য।
সুদ্ধ দেশী রোমান্স! রঘু রাম চরিত্রের মজা করাটাই ভালবাসা।
দিবাকর ব্যানার্জির বোমকেশে তিনি কৌতুহলী, নির্ভয় এক নায়ক।
তবে এসব কিছু ছাপিয়ে তিনি চূড়ায় পৌঁছে যান, এম এস ধোনিতে যখন আমরা তাঁর চুলের হাবভাব থেকে শুরু করে হেলিকপ্টার অবতরণের দৃশ্যের মুন্সিয়ানা দেখতে পাই।
অভিষেক চুবেরি’র ছবি সঞ্চিরিয়াতে আমরা দেখি দুধর্ষ ভূমিকায় রাজপুতের বিস্তৃতি।
তবে সবশেষ ছবি ছিছোরেতে সুশাস্ত নিজেকে উপস্থাপন করেন তার সকল অতীতকে ছাপিয়ে। প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী কিছুটা বাজে পরিস্থিতির শিকার দুর্দান্ত এক প্রকৌশল শিক্ষার্থি। সাফল্যটা অস্থায়ী আর ব্যর্থতা তাকে কখনোই ঘাটাতে পারেনি। নিজেই বলেন, “যদি শুক্রবার কিংবা সপ্তাহশেষের দিনটাও ভাল যাবে না। তাতে কি, সোমবারটাতো ভাল হবে।”
রাজপুত কখনোই নিজের কাজ দিয়ে নিজেকে সংজ্ঞায়িত করতে দিতে চাননি। অনেক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের মনোদার্শনিক অবস্থানকে তুলে ধরেছেন। আলাদা থেকেছেন অন্যদের থেকে।
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/06/MS-Dhoni-01-1.jpg?resize=316%2C456&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/06/MS-Dhoni-01-1.jpg?resize=316%2C456&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/06/MS-Dhoni-01-1.jpg?resize=316%2C456&ssl=1)
ভবিষ্যতের দিনগুলোতে স্ট্রিমিংই তো জায়গা করে নেবে এমনটা বললে বলতেন, অবশ্যই ডিজিটাল প্রিন্টিং, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার পসার আরো বাড়বে। ভার্চুয়াল রিয়ালিটিই হয়ে উঠবে মনোযোগের কেন্দ্র। বলতেন নিজের কোম্পানি নিযে, যেখানে গবেষণা হবে আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স বা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে।
বলিউডে তারাই ছিল তার ঘনিষ্ট বন্ধু, যারা তার বুদ্ধির ধারকে বুঝতে পারতো। এদের মধ্যে ছিলেন, জাতীয় পুরস্কার পাওয়া ‘শিপ অব থেসিউস’ নির্মাতা আনন্দ গান্ধী। যার সাথে দিন পার করে দিতেন নিজের প্যাশনের জায়গা পদার্থবিদ্যা নিয়ে।
সঞ্চিরিয়ার প্রমোশনের সময় ইন্ডিয়া টুডে’কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে রাজপুত বলেছিলেন, “আমরা যে কোন বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারি—এমনকি ফালতু অনেক বিষয় নিয়েও কথা বলেছি ঘন্টার পর ঘন্টা।
আর টুইটারে আনন্দ গান্ধী তার বন্ধু সম্পর্কে লিখেছেন, “তুমি ভবিষ্যতকে করেছো বোধগম্য ও যৌক্তিক আর অতীতকে করেছো ছাপ রেখে যাওয়ার মত। আমি নিজেকে বিস্তৃত করতে পেরেছি তোমাতে। আমি তোমাকে দিয়ে অনুভবকে বুঝতে পারি। যা আমি প্রায়শই বলতাম তোমাকে।”
সংবাদসূত্র : ইন্ডিয়া টুডে