|| সারাবেলা ডেস্ক ||
মাদক ব্যবসায়ীকে ধরতে গিয়ে আজ থেকে মাস ছয়েক আগে কৃষ্ণাঙ্গ নারী ব্রেওনা টেইলরকে খুন করে কেনটাকির লুইভিল পুলিশ। সেই ঘটনার পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ না আনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে লুইভিলের মানুষ। বুধবার রাতে শহরটির বিভিন্ন প্রান্তে কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষের প্রতিবাদের মধ্যেই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। এমনটাই জানানো হয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসির প্রতিবেদনে।
গুলিবিদ্ধ দুই কর্মকর্তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত জানিয়ে লুইভিলের পুলিশ প্রধান রবার্ট শ্রোয়েডার বলেছেন, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। ব্রেওনা টেইলর খুনে পুলিশ সদস্যদের অভিযুক্ত করা হবে কিনা, এ বিষয়ক সিদ্ধান্ত জানানোর আগেই শহরটিতে জরুরি অবস্থা জারি করে কর্তৃপক্ষ। তারপরও পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়লে বুধবার মোতায়েন করা হয় ন্যাশনাল গার্ড বাহিনীর সদস্য।
রাত ৯টা থেকে পরদিন ভোর সাড়ে ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকলেও লুইভিলের অনেক এলাকাতেই কারফিউর মধ্যেই বিক্ষোভ করছে হাজার হাজার মানুষ।বিক্ষোভকারীদের অবশ্য বাড়ি ফিরে যেতে অনুরোধ জানিয়েছেন কেনটাকির গভর্নর অ্যান্ডি বেশিয়ার।
তিনি বলেছেন, “আমরা জানি, সহিংসতার জবাব কখনোই সহিংসতা হতে পারে না। আমরা এখন ওই দুই কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কথা ভাবছি। আমি সবার প্রতি অনুরোধ করছি. দয়া করে বাড়ি ফিরে যান।”
২৬ বছর বয়সী ব্রেওনা টেইলর হত্যাকাণ্ডের ছয় মাস পর বুধবার শুধু একজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সামান্য অপরাধের অভিযোগ আনার পর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে লুইভিলের মানুষ। শহরের বিভিন্ন সড়কে জড়ো হতে শুরু করেন তারা। মার্কিন বার্তা সংস্থা সিএনএন বলছে, কোথাও কোথাও তারা পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষেও জড়িয়েছেন বিক্ষুব্ধ মানুষ।
ব্রেওনার আত্মীয়স্বজন এবং পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা মার্চে ব্রেওনার ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনার দাবি জানিয়ে আসছেন।
বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ পর্যালোচনার পর গ্র্যান্ড জুরি অ্যানি ও’কনেল কেবল ব্রেট হ্যানকিনসনের বিরুদ্ধে হালকা অপরাধের অভিযোগ এনেছেন, বাকি দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই আনা হয়নি। গ্র্যান্ড জুরির এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি কেনটাকির রিপাবলিকান অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রশংসাও করেছেন।
তবে গ্র্যান্ড জুরি ও’কনলের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ব্রেওনার পরিবারের আইনজীবী। কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ না আনাকে ‘আপত্তিকর ও অপমানজনক’ বলেও অ্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।
ব্রেওনার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের উদ্দেশ্য করে অ্যাটর্নি জেনারেল ড্যানিয়েল ক্যামেরন অবশ্য বলেছেন, “সন্তান, ভাতিজি, বোন ও বন্ধু হারানোর শোক আর বেদনাকে দূরে সরিয়ে দিতে তাদেরকে আজ কিছুই দিতে পারছি না আমি।” অ্যাটর্নি জেনারেলের এমন সিদ্ধান্তের আগেই অবশ্য কর্মকর্তারা চলতি মাসে ব্রেওনার পরিবারকে এক কোটি ২০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার একটি সমঝোতায় সম্মত হয়েছিলেন।
এদিকে গেল মার্চে ব্রেওনার ফ্ল্যাটে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশ আইনের কোনো লংঘন করেছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে এফবিআই।