বৈরুত বিস্ফোরণ থেকে গণঅসন্তোষে লেবানন সরকারের পদত্যাগ

লেবাননের রাজধানী বৈরুত বন্দরে গেল মঙ্গলবারের ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর থেকে জনগনের প্রতি সরকারের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার অভিযোগে বাড়ছে গণ অসন্তোষ। এরই জেরে সোমবার পদত্যাগ করেছেন দেশটির সরকার প্রধান।

|| বার্তা সারাবেলা ||

লেবাননের রাজধানী বৈরুত বন্দরে গেল মঙ্গলবারের ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর থেকে জনগনের প্রতি সরকারের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার অভিযোগে বাড়ছে গণ অসন্তোষ। এরই জেরে সোমবার পদত্যাগ করেছেন দেশটির সরকার প্রধান। গেল মঙ্গলবারের বিস্ফোরণে মারা গেছে দুইশ মানুষ। প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। রাজধানী বৈরুতের বহু ভবন বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে বিভিন্ন সাইলোতে রাখা দেশটির মোট খাদ্যমুজদের ৮৫ শতাংশ।

এই পরিস্থিতিতে বিস্ফোরণের ৬ দিনের মাথায় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব। মন্ত্রিসভার তিনসদস্য বিচারমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী এবং পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী আগেই পদত্যাগ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকার আগেই অর্থমন্ত্রীও পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে দিনের শেষে গোটা সরকারই পদত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব বিস্ফোরণের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের “মূল্য দিতে হবে” বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব

এদিকে বিস্ফোরণের পর থেকে সরকার ও সরকারি দলের নেতাদের বিরুদ্ধে অবহেলা ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন বিরোধী দলসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই এবং দেশটির মানুষ। এমন কি বিস্ফোরনের পরপরই লেবাননের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী দুজনেই বলেছিলেন যথেষ্ট নিরাপদ ব্যবস্থা না নিয়ে বৈরুত বন্দরের গুদামে যেভাবে ২,৭৫০টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুত রাখা হয়েছিল তাতে আগুন ধরে গিয়েই এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে।

বিপুল পরিমাণ এই বিস্ফোরক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সরকার বৈরুতে মজুত করে রাখতে দিয়েছিল – এমন তথ্য জানবার পর আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে লেবাননের জনগণ। বিস্ফোরণের জেরে গেল দুইদিন ধরে বৈরুতে বিক্ষোভ হচ্ছে এবং বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি মন্ত্রণালয় ভবনে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে এবং এ সময় পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। কয়েক হাজার মানুষ রাজপথে নেমে বিক্ষোভ করার সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইঁট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশও বিক্ষোভকারীদের দিকে পাল্টা টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ে।

বাড়ছে মৃতের সংখ্যা
বৈরুত শহরের মেয়র মারওয়ান আবুদকে উদ্ধৃত করে আল মারসাদ অনলাইন নিউজ নামে একটি সংবাদ পোর্টালে বলা হয়, বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২২০ জনে দাঁড়িয়েছে। এখনও ১১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

মেয়র মারওয়ান আবুদ আল জাদিদ টিভি চ্যানেলকেও বলেছেন, নিখোঁজদের মধ্যে বহু বিদেশি কর্মী এবং লরি চালক রয়েছেন। এরা বিদেশি হওয়ায় এদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া বেশ কঠিন হবে বলে তিনি মনে করেন।

লেবাননের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ধ্বংসস্তুপ থেকে মানুষ উদ্ধারের কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে, কারণ জীবিত আর কাউকে পাওয়া যায়নি।

শহরের অন্যত্র লাখ লাখ মানুষ ব্যাপকভাবে বিধ্বস্ত বাসাবাড়িতে কোনমতে থাকছে। এসব বহু বাড়ির জানালা ও দরোজা বিস্ফোরণে উড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির মুখপাত্র রোনা হালাবি বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের “ব্যাপকমাত্রায়” জরুরি সাহায্য প্রয়োজন। এদের আশ্রয় দরকার, খাদ্য দরকার। তাদের ঘরবাড়ি পরিস্কার করার জন্য সামগ্রী প্রয়োজন, বিধ্বস্ত বাসায় যা অবশিষ্ট আছে তা সংগ্রহ করার জন্য তাদের সাহায্যের প্রয়োজন।

রেড ক্রসের এই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, “এরপরেও বৈরুতের অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য সহায়তা দরকার, পানি ও বিদ্যুত সরবরাহের দুটি প্রধান কেন্দ্র বিস্ফোরণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” কর্মকর্তারা বলছেন ক্ষয়ক্ষতির আনুমানিক পরিমাণ ৩০০ কোটি ডলারের বেশি।

সংবাদসূত্র : বিবিসি ও রয়টার্স

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন