|| বার্তা সারাবেলা ||
শেষ পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও)বিবাদটাকে চূড়ান্ত পর্যায়েই নিয়ে গেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, “আজ থেকে আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে যাচ্ছি; তাদের জন্য বরাদ্দ তহবিল জনস্বাস্থ্য বিষয়ক অন্যান্য দাতা সংস্থাকে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।”
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসি বলছে, বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার শুরু থেকেই চীনকে দায়ি করে আসছেন ট্রাম্প। বলছেন, তার ভাষায় করোনা ছড়ানোর জন্য দায়ি চীনকে কোনও ধরণের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারেনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। শুধু চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাই নিতে না পারাই নয়, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদামত প্রয়োজনীয় সংস্কার করতেও ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ ট্রাম্পের।
শুরু থেকেই অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন সব অভিযোগ নাকচ করে আসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন যে, “এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অর্থায়ন কমানোর সঠিক সময় নয়।”
এমনিতর অভিযোগ আর অভিযোগ নাকচের ধারাবাহিকতায় গেল গেল ১৫ই এপ্রিল জাতিসংঘের এই সংস্থাটিকে দেওয়া মার্কিন তহবিল বন্ধ করে দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বছর হু-কে ৪০০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এবার আর কোনও অর্থসহায়তা নয়, সেদিন সাফ জানিয়ে দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আর সবশেষ গেল শুক্রবার হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে সরাসরি জানালেন,“বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন পুরোপুরি চীনের নিয়ন্ত্রণে।” সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, ওয়াশিংটন এখন থেকে ডব্লিউএইচও’র বদলে জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও দাতব্য সংস্থাকে অর্থ দেবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ট্রাম্প ঘোষণা দিলেও ডব্লিউএইচও’র সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কচ্ছেদ ঠিক কবে থেকে কার্যকর হচ্ছে, সে নিয়ে এখনো পরিস্কার করে কিছু জানায়নি ট্রাম্প প্রশাসন।
যদিও ১৯৪৮ সালে মার্কিন কংগ্রেসের এক যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হলে সংস্থাটিকে এক বছরের নোটিশ দিতে হবে।
নভেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হতে ইচ্ছুক ট্রাম্প করোনাভাইরাস মোকাবেলায় তার প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তীব্র চাপের মুখে আছেন। কোভিড-১৯ এরই মধ্যে দেশটির এক লাখ দুই হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে; আক্রান্তের সংখ্যাও ১৭ লাখ পেরিয়ে ছুটছে ১৮ লাখের দিকে।
চীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে চাপ দিয়ে নতুন করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বকে বিভ্রান্ত করেছে বলে আগের অভিযোগ পুনর্ব্যক্ত করেন ট্রাম্প বলেন, “বিশ্ব এখন চীন সরকারের কুকর্মের ফল ভোগ করছে।”
চীন ও বিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধমত
শুরু থেকেই তাদের নাম জড়িয়ে চলমান সব ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’কে প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে ট্রাম্প প্রশাসন মহামারী নিয়ে রাজনীতি করছে বলে পাল্টা অভিযোগও করেছে তারা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও তার প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কয়েক মাস ধরেই নতুন করোনাভাইরাসের উৎপত্তি ও এর বিস্তারে বেইজিংকে দায়ী করে এলেও বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজ্ঞানীই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসটি মনুষ্যসৃষ্ট হতে পারে না বলে অভিমত দিয়েছেন।
আর সমালোচকরা বলছেন, প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সময়মতো পদক্ষেপ নিতে ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণেই আক্রান্ত-মৃত্যুর এ সংখ্যাধিক্য। আর নিজের ব্যর্থতা ঢাকতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট চীনকে দোষারোপ করছেন বলেও বলছেন সমালোচকরা।