বিক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্রে বাংকারে আশ্রয় নিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

|| বার্তা সারাবেলা/এপি ||

দেশজুড়ে বিক্ষোভের মুখে বাংকারে থাকতে শুরু করেছেন মার্কিন অধিপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ খবর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বার্তা সংস্থা এ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এপি। সাধারণত হোয়াইট হাউসের বাইরে কোন সন্ত্রাসি হামলা, এমনকি পুলিশবিরুদ্ধ কোন বড় রকমের জনবিক্ষোভের সময়টাতে মার্কিন প্রেসিডেন্টরা যাতে নিরাপদে থাকতে পারেন সেজন্যই এই বাংকার তৈরি করা হয়েছে।

এদিকে যে শহরটাতে বিক্ষোভের শরু মিনেসোটার সেই মিনিয়াপোলিস শহরে বিক্ষুব্ধ মানুষের ওপর ট্রাক চালিয়ে দিয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সম্প্রচার মাধ্যমে এমন দৃশ্য সম্প্রচার হওয়ায় মানুষ আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে অন্য শহরগুলোতে।

গেল সপ্তাহে দেশটির পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েড খুন হওয়ার পর থেকে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সারা যুক্তরাষ্ট্র। এটিকে খুন জানিয়ে প্রথম বিক্ষুব্ধ হয় মিনেসোটার মিনিয়াপোলিস শহর। এই শহরেরই মানুষ ছিলেন ফ্লয়েড। বিক্ষোভ থামাতে মিনিয়াপোলিসে মোতায়েন করা হয়েছে ন্যাশনাল গার্ড।

তাতে আরো আগুনে ঘি ঢালবার মত অবস্থা। বিক্ষোভ এখন নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংনটসহ গোটা যুক্তরাষ্ট্রে। জ্বলছে গাড়ি, পুড়ছে প্রতিষ্ঠান, সেই সুযোগে হচ্ছে লুটপাট। বিশেষ করে এমনি সহিংসতা আর লুটপাট ঠেকাতে গুলির নির্দেশও দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শুক্রবার রাতেই বাংকারে আশ্রয় নিয়েছেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের বাইরে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষ। ছুঁড়ছে ইটপাটকেল, ফ্লয়েড খুনের বিচার দাবিতে দিচ্ছে স্লোগান, পুলিশের ব্যারিকেডও মানছে না তারা।

ট্রাম্প শুক্রবার এমনি নিরাপদ আশ্রয়ে থাকেন প্রায় একঘন্টা। হোয়াইট হাউস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই তথ্য না জানালেও, এটি নিশ্চিত করেছেন ক্ষমতাসীন দল রিপাবলিকান দলের এক সদস্য। নাম না জানিয়ে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ রিপাবলিকান সদস্য বলছেন, হোয়াইট হাউসের বাইরে যেভাবে চিৎকার আর ইটপাটকেল ছোঁড়া হচ্ছে তা আর সহ্য করতে পারছেন না তাদের প্রেসিডেন্ট।

এছাড়া তীব্রতর কোন জনবিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে কী করে বাংকারের মত জায়গায় বেশী সময় কাটাতে হয়ে সেই অভ্যস্ততার চেষ্টা করতেই প্রথম দিন প্রায় এক ঘন্টা সেখানে থাকেন প্রেসিডেন্ট। ঐ রিপাবলিকান সদস্যের দেওয়া এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তা। নাম জানাতে চাননি তিনিও।

এদিকে হোয়াইট হাউস মুখপাত্র জুড ডিরে বলেছেন, ‍“নিরাপত্তা ও সম্পর্কিত কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা কোন মন্তব্য করেন না।” এছাড়া দেশটির নিরপত্তা দফতরও মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা এবং সংশ্লিষ্ট পথপদ্ধতি নিয়ে কোন কথা বলতে চাইছেন না।

রিপাবলিকান ঐ সদস্যের দেওয়া তথ্য বলছে, গেল কয়েকদিনের বিক্ষোভের মাত্রা ও বিস্তৃতিতে প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা বেশ ‘বিচলিত’ হয়ে পড়েছেন। ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প ও তাদের ১৪ বছরের ছেলে ট্রাম্পের সঙ্গে বাংকারে ছিলেন কিনা তা জানা যায়নি। যদিও দেশটির নিরাপত্তা প্রটোকল অনুযায়ী এমনিতর পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট পরিবারের সবাইকেই মাটির নিচের আশ্রয়ে চলে যেতে হয়।

এই পরিস্থিতিতে শনিবার মহাশূন্যযান উৎক্ষেপণ দেখতে ফ্লোরিডাও গিয়েছিলেন ট্রাম্প। ফিরে এসে তাকে প্রায় অবরুদ্ধ হোয়াইট হাউসে ঢুকতে হয়। রাত কাটাতে হয় নিজের ঘরের কয়েকশ গজ দূর থেকে ভেসে আসা বিক্ষুব্ধ মানুষের গগণবিদারি স্লোগান আর সমস্বরিত দাবির শব্দনিনাদের মধ্যে।

এদিকে হোয়াইট হাউসের সামনের এই লাফয়েট পার্কে প্রতিদিনই বাড়ছে বিক্ষুব্ধ মানুষের সংখ্যা। তারপরও নিজের শক্তিমত্তা প্রদর্শনে অবিরাম টুইট করে যাচ্ছেন ট্রাম্প। দেশের এমন সংকটেও বিরুদ্ধ মতকে আক্রমণ করতেও ছাড়ছেন না মার্কিন এই অধিপতি।

শহরগুলো যেখানে জ্বলছে রাতের পর রাত। টেলিভিশন খুললেই ভেসে উঠছে সহিংস সব বিক্ষুব্ধ মানুষের উপস্থিতি। সেখানে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা হিসেবে ট্রাম্পকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন দেওয়ানো যায় কিনা সে নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর পরামর্শকরা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তাতে সায় মেলেনি ট্রাম্পের।

তিনি ভাবছেন, আগামী কয়েকদিনে হয়তোবা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ আর সহিংসতা ও লুটতরাজের মধ্যেকার তফাৎটা মানুষ বুঝতে পারবে। এবং তাতে করে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণেও আসবে বলেও ধারণা করছেন তিনি। যদিও এই রোববারেও জনসম্মুখে আসতে দেখা যায়নি মার্কিন এই অধিপতিকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন