বাইডেনই ম্যাজিক হিরো

|| সারাবেলা/বিবিসি, সিএনন, গার্ডিয়ান ||

যুক্তরাষ্ট্রে গেলো মঙ্গলবারের নির্বাচনের পর ভোট গণনা এখনও চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে মোট ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে অন্তত ২৭০টি নিশ্চিত করতে হবে। সর্বশেষ চূড়ান্ত ফলে জো বাইডেন পেয়েছেন ২৫৩টি ইলেকটোরাল ভোট। আর ২১৪টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প।

চূড়ান্ত ফল ঝুলে আছে জর্জিয়া, নেভাডা, পেনসিলভেইনিয়া ও অ্যারিজোনা- এই চার রাজ্যের ফলাফলের ওপর।জর্জিয়ায় রিপাবলিকান প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে টপকে গিয়ে শেষ মুহূর্তের গণনায় এগিয়ে আছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। সেখানে তিনি জিতে গেলে হোয়াইট হাউজ নিশ্চিত করতে লাগবে আর মাত্র ১ ভোট। আর সেক্ষেত্রে ট্রাম্পের ২৭০ ভোট পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও ভোট গণনা থামাতে জর্জিয়া, পেনসিলভেইনিয়া ও মিশিগানে ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের মামলা খারিজ করে দিয়েছে আদালত। নেভাডাতেও মামলা করেছে ট্রাম্প শিবির।

সিএনএন বলছে, ব্যাটলগ্রাউন্ড জর্জিয়ায় বাইডেন এখন ট্রাম্পের চেয়ে ৯১৭ ভোটে এগিয়ে আছেন। গণনার শুরু থেকেই এ রাজ্যে এগিয়ে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে ট্রাম্প ১৮ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন । এ রাজ্যে ভোট পড়েছে ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ১৯১টি। তার মধ্যে ৯৯ শতাংশ ভোট ইতোমধ্যে গণনা করা হয়েছে। শতাংশের হিসাবে দুজনেই এখন পর্যন্ত পেয়েছেছন ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ করে ভোট।

যুক্তরাষ্ট্রের সব রাজ্য মিলিয়ে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে ২৫৩টি পেয়েছেন বাইডেন। চূড়ান্ত জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট থেকে মাত্র ১৭ ভোট দূরত্বে আছেন তিনি। জর্জিয়ায় ইলেকটোরাল ভোট আছে ১৬টি। ফলে এ রাজ্যে জয় পেলে বাইডেন পৌঁছে যাবেন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে।

অন্যদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এখন পর্যন্ত জিতেছেন ২১৪ ইলেকটোরাল ভোট; চূড়ান্ত জয় পেতে হলে তার চাই আরও ৫৬ ভোট। জর্জিয়ার পাশাপাশি নেভাডা, পেনসিলভেইনিয়া ও অ্যারিজোনা ও নর্থ ক্যারোলাইনায় এখনও ভোট গণনা চলছে। এসব রাজ্যের ফলাফলই নির্ধারণ করে দেবে দুই প্রার্থীর ভাগ্য।

বাইডেন যদি জার্জিয়ায় জিতে যান, আর বাকি চার রাজ্যের মধ্যে যে কোনো একটিতে জয় নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলেই তার হোয়াইট হাউজে যাওয়া নিশ্চিত। বাইডেন যদি জর্জিয়া জিতে নেন, তাহলে তার ইলেকটোরাল ভোট হবে ২৬৯, অর্থাৎ মোট ভোটের অর্ধেক। সেক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আর ২৭০ ভোট পাওয়ার সুযোগ থাকবে না। তখন বাকি সব রাজ্যে ট্রাম্প জয় পেলেও ফল হবে রোমাঞ্চকর টাই।

হোয়াইট হাউজের দখল ধরে রাখতে হলে ট্রাম্পকে জর্জিয়ায় হারলে চলবে না। সেই সঙ্গে পেনসিলভেইনিয়া এবং আরও অন্তত দুটি রাজ্যে জিততে হবে। আর যদি নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেই যায়, মানে দুই প্রার্থীর ইলেকটোরাল কলেজ ভোট যদি সমান সমান হয়েই যায়, তখন মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে ভোটাভুটিতে সিদ্ধান্ত হবে, কে হবেন মার্কিন অধিশ্বর।

বিশ্ব গণমাধ্যমে ট্রাম্প ও ভোট
এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের একের পর এক আইনি পদক্ষেপ এবং ‘ভিত্তিহীন’ অভিযোগ নিয়ে যে ‘বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টি হয়েছে, তা শিরোনাম হচ্ছে চীন, ইরান ও রাশিয়ার গণমাধ্যমগুলোতে।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ব ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমস বলছে, এই ভোট যুক্তরাষ্ট্রে ‘বিভাজন, সহিংসতা, দুর্ভোগ’ বয়ে এনেছে। চীনে এই নির্বাচন মূলত হাসি-ঠাট্টার বিষয় হয়ে উঠেছে।

ইরানের সম্প্রচারমাধ্যম যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে ভোট গণনা প্রক্রিয়া নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভের খবর দিয়েছে। রেডিও ইরান (ভিআইআরআই) যুক্তরাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা বাড়তে থাকার মধ্যে নির্বাচনী ফলাফলের অস্পষ্টতা নিয়ে প্রতিবেদন করেছে।

রাশিয়ার ক্রেমলিনপন্থি টিভি চ্যানেলগুলো শুক্রবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকে আর শীর্ষ সংবাদ হিসাবে প্রচার না করলেও অন্যান্য সব চ্যানেলেই প্রাধান্য পেয়েছে ট্রাম্পের তোলা ‘ভোট চুরির’ অভিযোগ। তবে ট্রাম্পের এই অভিযোগের যে কোনও প্রমাণ নেই তা খবরে বলা হয়নি।

‘ভোটে অনিয়মের কোনও প্রমাণ নেই’
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ডাকে দেওয়া ভোট গণনা চলার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ‘অবৈধ’ ভোট গোনা হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেও নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভোটে অনিয়মের কোনও প্রমাণ নেই। বিবিসি রেডিও ফাইভ-লাইভ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মিশন ‘দ্য অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি এন্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই) এর মুখপাত্রের কাছে ট্রাম্পের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন- অনিয়মের কোনও প্রমাণ নেই।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন