পায়ে হেঁটে ৯৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কলকাতায়

|| অন্যদেশ ডেস্ক ||

ওরা সাতজনই শ্রমিক। কাজ করেন রাজমিস্ত্রির। ওদের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরে। জীবিকার তাগিদে গিয়েছিলেন ছত্তিশগড়েরর রায়পুরে। সে করোনার আগে। এরমধ্যে হানা দিল করোনা। সারাদেশ লকডাউন। বন্ধ যানবাহন, বন্ধ সবকিছু। তাই বলেতো থেমে থাকে না জীবন। টাকা পয়সা যা ছিল তাও শেষ। অনুপায় এই সাত শ্রমিক রওনা করেন বাড়ির উদ্দেশ্যে। যানবাহন না থাকায় পা দুটোই ভরসা। দূরত্বটাও কম না। প্রায় সাড়ে নয়শ’ কিলোমিটার।

টানা পাঁচদিন দুখানি পায়ে ভর করে শেষতক পৌছলেন নিজের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে। সোমবার রাতে দক্ষিণেশ্বর আইল্যান্ডের কাছে ওই সাত রাজমিস্ত্রিকে পিঠে, মাথায় ব্যাগপত্তর নিয়ে হাঁটতে দেখেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা। ওদের ঠাঁই মেলে পাশের নির্মাণাধীন মেট্রো প্রকল্পের ছাউনিতে। তাঁরা ওই শ্রমিকদের থেকে সব শুনে তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করেন। এর পরে মেট্রো প্রকল্পে ঠাঁই মেলে ওদের।

প্রায় ৯৫০ কিলোমিটার পথ হেঁটে ওঁদের কারও জুতো ছিঁড়ে গিয়েছে। কারও আবার পায়ে ফোস্কা পড়েছে। ক্লান্ত শরীরে মেট্রো প্রকল্পের ভিতরে ঠাঁই পেলেও সফিকুল রহমান, রমজান আলি, মহম্মদ নিগার-সহ দলের সকলেই চাইছিলেন উত্তর দিনাজপুরে নিজেদের বাড়িতে ফিরতে।

এরইমধ্যে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা খবর পৌঁছন পুলিশ ও বরাহনগর পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে। সেখানকার চেয়ারম্যান পারিষদ (জনস্বাস্থ্য) দিলীপনারায়ণ বসু বলেন, ‘‘জায়গাটি কামারহাটি পুরসভার অধীনে। তাই খবর পেয়ে পুলিশ ও কামারহাটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। রাতে পুলিশ গিয়ে ওঁদের খাবারের ব্যবস্থাও করে।’’

সফিকুল জানান, তাঁদের দলের তিন জন রায়গঞ্জের, দু’জন কালিয়াগঞ্জের এবং বাকি দু’জন বিহারের বারসোইয়ের বাসিন্দা। লকডাউনের মাত্র ১৫ দিন আগে তাঁরা রায়পুরে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা হতেই তাঁদের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সফিকুল বলেন, ‘‘ঠিকাদারের ফোন নম্বরও ছিল না। লকডাউন হতেই তিনি পালিয়ে যান। আমাদের কাছে যা টাকাপয়সা ছিল, সব শেষ হয়ে যায়। খেতেও পাচ্ছিলাম না।’’

শেষে গত বৃহস্পতিবার, অর্থাৎ ২৩শে এপ্রিল ভোরে ওই সাত জন পায়ে হেঁটেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। রমজান আলি জানান, তাঁরা ছত্তীসগঢ় থেকে বেরিয়ে জাতীয় সড়ক ধরে ওড়িশা হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকেন। দিনের অধিকাংশ সময়ে তাঁরা রাস্তার ধারেই বসে কাটাতেন। সন্ধ্যা নামলেই শুরু করতেন হাঁটা। সারা রাত ধরে হাঁটতেন। চলার পথে বিস্কুট পাওয়া গেলে তা ভাগ করে খেতেন। রমজান বলেন, ‘‘রাস্তায় বেশ কয়েক জায়গায় পুলিশ আটকেছিল। সব জানানোর পরে কপালে যন্ত্র ঠেকিয়ে পরীক্ষা করে ছেড়ে দেয়।’’

কিন্তু দক্ষিণেশ্বরে আসার পরে ওই রাজমিস্ত্রিদের আটকে দিয়েছে প্রশাসন। নিয়মমাফিক পরীক্ষার পরে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে বেলঘরিয়ার রথতলার কোয়রান্টিন কেন্দ্রে। তার আগে মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশের দেওয়া খিচুড়ি খাওয়ার পরে হাসিমুখে রমজানরা বলেন, ‘‘দুটো ভাত খেয়ে পেটটা ভরল। কিন্তু বাড়ি যেতে পারলে মনটাও ভরবে।’’

সংবাদসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন