|| বার্তা সারাবেলা ||
বাংলাদেশের আইন প্রণেতা কাজি মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন কুয়েতের এক মেজর জেনারেল।
উপসাগরীয় সংবাদপত্র আরব টাইমস জানিয়েছে, বাংলাদেশের সংসদ সদস্য কাজি শহিদ ইসলাম পাপুলের সঙ্গে সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেন ও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অ্যাসিটেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহকে কুয়েত সরকার সাময়িক বরখাস্ত করেছে।
এরআগে কুয়েত পাবলিক প্রসিকিউশনের তদন্তের বরাত দিয়ে দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল দিরার আল-আসৌসি উপ প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস আল-সালেহকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানিয়ে চিঠি দেন। চিঠি পাওয়ার পর মেজর জেনারেল মাজেন আল জারাহকে সাময়িক বরখাস্ত করে ডিক্রি জারি করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস আল-সালেহ।
পাবলিক প্রসিকিউশনের তদন্তে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতের সরকারসংশ্লিষ্টদের ঘুষ দিয়ে ভিসাবাণিজ্য ও মানুষ পাচারের মত অপকর্মের প্রমাণ পাওয়ার পরই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
প্রসিকিউশনের তদন্তে প্রমান মিলেছে যে, মেজর জেনারেল আল জারাহ সিটিজেনশিপ, পাসপোর্ট ও রেসিডেন্স অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক সহকারি আন্ডার সেক্রেটারি থাকতে ঘুষের বিনিময়ে বেশ কিছু লেনদেনে সায় দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের সংসদ সদস্য পাপুল পুলিশের জেরায় স্বীকার করেছেন যে, যে সব কর্মকর্তা তার কোম্পানি মারাফিয়ে কুয়েতিয়াকে ভিসা বাণিজ্য পাইয়ে দিতে ঘুষ নিয়েছেন তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন মেজর জেনারেল আল জারাহ।
এদিকে কুয়েতের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, অর্থপাচার, মানুষ পাচার আর অবৈধ ভিসা বাণিজ্যের অভিযোগে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলকে রিমান্ড নেওয়ার পর থেকে এ সম্পর্কিত অনেক তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার সরকারসংশ্লিষ্ট একজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো।
পাবিলক প্রসিকিউশনের তদন্তে এও জানা গেছে যে, বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থার সঙ্গে পাপুলের কোম্পানি ব্যবসাসংক্রান্ত অন্তত চারটি চুক্তি করেছে। বেশ কয়েক বছর আগে এসব চুক্তি করা হয়। যেগুলোর মধ্যে কোন কোটির মেয়াদ গেল দুইমাস আগেই শেষ হয়ে গেছে। আবার করোনা মহামারির জন্য কোন কোনটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
ব্যবসায়িক এসব চুক্তির আর্থিক পরিমাণ দশ লাখ কুয়েতি দিনার বা তিন দশমিক ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর এগুলোর বেশীর ভাগই পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ সম্পর্কিত।
পাবলিক প্রসিকিউশন সূত্র বলছে, মারাফিয়ে কুয়েতিয়ার সঙ্গে যেসব সরকারি সংস্থার চুক্তি হয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটি সংস্থা তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে সরকারি টেন্ডার সম্পর্কিত কেন্দ্রীয় সংস্থাকে চিঠি দেয় চলতি মাসের প্রথম দিকে। যাতে চুক্তির মেয়াদ পয়লা জুলাই ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালের ১৯শে জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।কিন্তু সরকারি টেন্ডার সম্পর্কিত কেন্দ্রীয় ঐ সংস্থা বিবেচনার জন্য সুপারিশ স্থগিত রাখে।
এছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত আরেকটি সরকারি সংস্থা চুক্তির বাইরে গিয়ে পাপুলের কোম্পানিকে অতিরিক্ত সুবিধা পাইয়ে দিয়েছে বলে প্রমাণ মিলেছে পাবলিক প্রসিকিউশনের তদন্তে। মূল চুক্তিতে সরকারি্ একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনার কাজ করার কথা থাকলেও এর বাইরে আর একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বও দেওয়া হয় মারাফিয়ে কুয়েতিয়াকে। ব্যবসায়িক এই চুক্তির আর্থিক পরিমান সাত লাখ ২০ হাজার কুয়েতি দিনার বা দুই দশমিক ৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটির মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত করা হয়।
উল্লেখ্য বাংলাদেশের আইন প্রণেতা কাজি মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুল মারাফিয়ে কুয়েতিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা। যার পঞ্চাশ লাখ কুয়েতি দিনারের সমপরিমান সম্পদ রয়েছে কুয়েতে। সাধারন ব্যবসা, ঠিকাদারি এবং রাস্তা ও ভবন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনা ব্যবসাসংশ্লিষ্ট অন্তত চারটি কোম্পানি রয়েছে বাংলাদেশের এই আইন প্রণেতার।
নিজের এসব কোম্পানির অধীনে পাপুল গেল কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে বহু শ্রমিককে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে কুয়েতে কাজ দিয়েছেন। যাদের কাছ থেকে নানা কায়দায় টাকা আদায় করতেন পাপুল। অভিযোগ উঠেছে কুয়েতের সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে এসব অবৈধ ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন বাংলাদেশের এই সংসদ সদস্য।
শুধু তাই নয়, কুয়েতে গড়া এসব বাণিজ্য থেকে অর্থের একটি বিশাল অঙ্ক তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন বলে জানতে পেরেছে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন।
আজ থেকে বছর বিশেক আগে একজন সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কুয়েতে পাড়ি জমান নোয়াখালির লক্ষীপুরের কাজি মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুল। এখন তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের একজন আইন প্রণেতা। জাতীয় সংসদের লক্ষীপুর -২ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য তিনি। নিজের স্ত্রীকেও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য করেছেন পাপুল।