নতুন সংক্রমণের মুখে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যে ফের লকডাউন

নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় লকডাউন ও একইসঙ্গে দুর্যোগঅবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে অস্ট্রেলিয় রাজ্য ভিক্টোরিয়াতে। সংক্রমণ যাতে অন্য রাজ্যে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ভিক্টোরিয়া ও নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের সঙ্গে দেশটির অন্য রাজ্যগুলোর সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

|| বার্তা সারাবেলা(বিবিসি) ||

নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় লকডাউন ও একইসঙ্গে দুর্যোগঅবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে অস্ট্রেলিয় রাজ্য ভিক্টোরিয়াতে। সংক্রমণ যাতে অন্য রাজ্যে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ভিক্টোরিয়া ও নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের সঙ্গে দেশটির অন্য রাজ্যগুলোর সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ড্যানিয়েল অ্যান্ড্রুস বলেছেন, রোববার থেকেই সংক্রমণ এড়াতে প্রয়োজনীয় সকল বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। নতুন এসব বিধিনিষেধের আওতায় রাজ্যের রাজধানী মেলবোর্নে রাতের বেলায় কার্যূনে জারি থাকবে রাতের বেলায়। সকলকে বাড়িতে থাকতে হবে। নির্দিষ্ট কিছু প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না।

ভিক্টোরিয়া রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ড্যানিয়েল অ্যান্ড্রুস রোববার রাজ্যজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেন। ছবি: সিএনএন

রাজধানীর পাঁচ কিলোমিটারের বাইরের কোন কেউ আসতে এবং যেতে পারবেন না। নিত্যপণ্যের জন্য দোকানপাটে যেতে পারবেন এক পরিবারের মাত্র একজন। তাও দিনে একবার।

শুরুর দিকে করোনা সংক্রমণ বিস্তার ঠেকাতে অন্য অনেক দেশের মত সফল হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ২ কোটি ৫৫ লাখ ২৩ হাজার ২০৭ জন মানুষের দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছে মাত্র ১৭ হাজার। আর মারা গেছে ২০০ জন।

কিন্তু সম্প্রতি ভিক্টোরিয়া রাজ্যে নতুন করে সংক্রমণের মাত্রা বাড়তে থাকায় লকডাউনে যেতে বাধ্য হয়েছে রাজ্য সরকার। ৬৬ লাখ মানুষের এই রাজ্যে রোববার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৬৭১ জন। মারা গেছে সাতজন। নতুন সংখ্যা নিয়ে রাজ্যটিতে মোট মৃতের মোট সংখ্যা এখন ১২৩। আর সংক্রমিতের সংখ্যা ১১ হাজার ৫৫৭ জন।

বাস্তবতা বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রুস স্বীকার করেছেন যে, অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় জনবহুল এই রাজ্যে লকডাউনের বিধিনিষেধ কার্যকর করা যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এর গতি ও বাস্তবায়ন বেশ ধীর। তিনি বলেন, “আামদেরকে আরো বেশী কিছু করতে হবে। হতে হবে আরো কঠোর। আর এটাই একমাত্র পথ প্রাণঘাতি এই ভাইরাস এড়ানোর।”

লকডাউনের নতুন বিধিনিষেধ কম করে হলেও আগামী ১৩ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রুস।

লকডাউনের নতুন বিধিনিষেধ

করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই পর্যায়ে এসে মেলবোর্নকে চতুর্থ পর্যায়ের বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। মানুষের চলাফেরা আরো বেশী সীমিত থাকবে নতুন এই লকডাউন সময়ে।

রাজধানী মেলবোর্নে রাতের বেলায় থাকবে কার্ফ্যু। যা রোববার থেকেই কার্যকর হয়েছে। এই সময়ে শুধু স্বাস্থ্যসুশ্রষা কিংবা অসুস্থদের সেবা দেওয়ার কাজ ছাড়া অন্য কোন কারণে বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না।

শুধু নিত্যপন্য কিনতে বাইরে যাওয়া যাবে। তাও দিনে একবার এবং পরিবারের মাত্র একজন সদস্যই এজন্য বাইরে বেরোতে পারবেন। শরীর চর্চ্চার জন্য বাইরে থাকা যাবে। তবে তা এক ঘন্টার বেশী নয়। আর রাজধানীর পাঁচ কিলোমিটারের বাইরে কেউ যেতে পারবেন না। এবং বাইরে থেকে কেউ আসতে পারবেন না।

বন্ধ থাকবে শিশুসদনগুলো। সকল শিক্ষার্থিকে বাড়িতে বসেই পড়াশুনা চালিয়ে যেতে হবে।

সংক্রমণ বিস্তার ঠেকাতে ভিক্টোরিয়া ও নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার অন্য রাজ্যগুলোর সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ছবি: এএফপি।

রাজধানীর বাইরে রাজ্যের সর্বত্র আগামী বৃহস্পতিবার থেকে তৃতীয় পর্যায়ের বিধিনিষেধের আওতায় আনা হবে। বুধবার থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হবে হোটেল, রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, বার ও সবধরণের জিম।

এসব বিধিনিষেধ মানানোয় পুলিশকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রুস বলেন, “এগুলো সত্যিই বড় রকমের বিধিনিষেধ। তার পরও বলবো এগুলো না মানলে আমাদেরকে আরো বেশী ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। আর এটাও প্রমাণিত যে, আমরা যত কম বাইরে বের হবো, ততই সংক্রমণ এড়াতে পারবো।”

কেনই বা ভিক্টোরিয়াতে সংক্রমণমাত্রা বেশী

কোভিড ১৯ ঠেকাতে বলা যায় শুরু থেকেই এক প্রকার সাফল্য দাবি করে আসছিল অস্ট্রেলিয়া সরকার। কার্যকর লকডাউন ও হোটেলগেুলোতে কোয়ারেন্টাইন করবার ব্যবস্থা নেওয়ায় গেল চারমাস ধরেই দেশটিতে সংক্রমণের রেখাচিত্র নিচের দিকেই রয়েছে। এরআগে বেশীর ভাগ সংক্রমণ বাইরে থেকে আসা পর্যটকদের মাধ্যমে ঘটে থাকলেও মেলবোর্নে নতুন করে এই ভাইরাসের সংক্রমণ অস্ট্রেলিয়াকে বেশ বড় বিপর্যয়ে ফেলেছে বৈকি।কারণ এবারের সংক্রমণের বেশীর ভাগই ঘটছে স্থানীয়দের মাধ্যমে। যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যারপর নাই ভাবিয়ে তুলেছে।

জুলাই মাসের প্রথম দিকে দেশটিতে প্রায় তিন লাখ মানুষকে লকডাউনের আওতায় নেওয়া হয়েছিল। সামরিক বাহিনীর সহায়তায় কার্যকর করা হয়েছিল ‘রিং ফেন্স’। সেমসয়ে মেলবোর্নের পাঁচ লাখ মানুষকে ছয় সপ্তাহের জন্য বাড়িতে থাকতে বলা হয়।

এবারে অবশ্য মেলবোর্ন সরকার বিশেষ করে ঐসব নিরাপত্তা প্রহরিদের ওপর কড়া নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা হোটেল কোয়ারেন্টাইন শিবিরগুলোতে লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল করবার সুযোগ করে দিয়েছিল। লকডাউন বিধিনিষেধের শৈথিল্য, সামাজিক দূরত্বের বাধ্যবাধকতা না থাকাই ভিক্টোরিয়াতে সংক্রমণ বাড়বার কারণ হিসেবে দেখছেন স্বাস্থ্য বিষেশজ্ঞরাও।

প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রুসও বলছেন, ‘সামাজিক সংক্রমণ’ ও ‘রহস্যজনক সংক্রমণ’ এই দুই মিলিয়ে কাজের জায়গা ও বাড়িতে বাড়ছে সংক্রমিতের সংখ্যা। আর সংক্রমণের এই দ্রুত বিস্তার আগামী কয়েকদিন, কয়েক সপ্তাহ কিংবা মাসেও কমবে না বলেও জানান ভিক্টোরিয়ার প্র্রধানমন্ত্রী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন