জান্তাবিরুদ্ধতায় যোগ দিচ্ছে মিয়ানমারের সংখ্যালঘুরাও

শনিবারের বিক্ষোভে জাতিগত সংখ্যালঘুরা মূলত ৪টি দাবির কথাই জোরের সঙ্গে উচ্চারণ করেছে। এগুলো হল- সংবিধান বাতিল, স্বৈরতন্ত্রের অবসান, ফেডারেল সিস্টেম চালু ও সব বন্দির মুক্তি।

|| বার্তা সারাবেলা ||

মিয়ানমারের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী সেনাশাসকদের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভে দেশটির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরাও অংশ নিতে শুরু করেছে। নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং বিজয়ীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে সামরিক বাহিনীর প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটিতে ১লা ফেব্রুয়ারি হওয়া অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভ প্রতিদিনই বাড়ছে।

তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার ইয়াংগুনে সেনাবিরোধি বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেয় দেশটির নাগা, ও চিনসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা গণতান্ত্রিক সরকার পুনর্বহাল, সু চি ও অন্যান্য রাজনীতিকদের মুক্তি এবং ২০০৮ সালের সংবিধান বাতিলের দাবিতে তাদের সোচ্চারণ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা নতুন সংবিধানে ‘ফেডারেল সিস্টেম’ বহাল করবারও দাবি তুলেছেন।

শনিবারের বিক্ষোভ সংগঠকদের একজন নাগা জনগোষ্ঠির মানুষ কে জুং বলেন, “স্বৈরতন্ত্রের অধীনে দেশে ফেডারেল ব্যবস্থা চালু করতে পারবো না আমরা। আমরা সামরিক জান্তাকে স্বীকৃতি দিতে পারি না।”

জাতিগত সংখ্যালঘুদের অনেক দল এখনও সেনাদের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের বিরোধিতায় অংশ নেয়নি জানিয়ে এই যুবনেতা বলেন, “জাতিগত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অং সান সু চির জোট গড়ার ব্যর্থতার প্রতিফলন এটি। এরপরও এই লড়াইয়ে জিততে হবে আমাদের। আমরা জনগণের সঙ্গে আছি। স্বৈরতন্ত্রের পতন পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাবো।”

শনিবারের বিক্ষোভে জাতিগত সংখ্যালঘুরা মূলত ৪টি দাবির কথাই জোরের সঙ্গে উচ্চারণ করেছে। এগুলো হল- সংবিধান বাতিল, স্বৈরতন্ত্রের অবসান, ফেডারেল সিস্টেম চালু ও সব বন্দির মুক্তি।

চিন জাতিগোষ্ঠীর সদস্য সালাই মন বোই এ প্রসঙ্গে বলেন, “অনেকেই আছেন যারা এনএলডিকে পছন্দ করেন না। কিন্তু আমরা এনএলডিকে নিয়ে কথা বলছি না। তারপরও আমাদেরকে সকল জাতিগোষ্ঠির জন্য নিরাপদ একটি বাসস্থানের জন্য এই জান্তা সরকারকে পদানত করতেই হবে। এর কোন বিকল্প থাকতে পারে না বলেও জানান এই যুবনেতা।

প্রসঙ্গত স্বায়ত্তশাসন প্রসঙ্গে সু চির প্রতিশ্রুতি নিয়ে জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিভ্রান্তি থাকায় অনেকে অভ্যুত্থানবিরোধী প্রতিবাদে যুক্ত হচ্ছে না।

জাতিগত সংখ্যালঘুদের বর্ণিল এই বিক্ষোভ ছাড়াও ইয়াংগুনের সুলে প্যাগোডাতে কয়েকশ’ বিক্ষোভকারী সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে। সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখল ও সু চিসহ রাজনীতিকদের আটকের প্রতিবাদে নেপিডোতে ৯ই ফেব্রুয়ারির বিক্ষোভে মাথায় গুলিবিদ্ধ এক তরুণী শুক্রবার মারা যান।আর এটাই এবারের অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে প্রথম মৃত্যু।

ছবি: এএফপি’র সৌজন্যে

মেয়া থুই থুই খাইং নামের ওই বিক্ষোভকারীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র; মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের ওপর বল প্রয়োগের নিন্দাও জানিয়েছে তারা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় গুরুতর আহত পুলিশের এক সদস্যের মৃত্যুর খবরও নিশ্চিত করেছে।

সংবাদ সারাদিন