|| বার্তা সারাবেলা ||
করোনাভাইরাস পরাজিত হবে সেই বিশ্বাস নিয়ে টিকা নিতে শুরু করেছে ভারতের মা্নুষ। দেশটির তিন হাজার ছয়টি কেন্দ্রে আজ শনিবার থেকে শুরু হয়েছে এই টিকাদান কর্মসূচি। প্রতিটি কেন্দ্রে দিনে ১০০ জনকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রথম দফার এই টিকা দেয়ার কাজ শেষ করতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। উল্লেখ্য, গেলো শুক্রবার পর্যন্ত ভারতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক কোটি পাঁচ লাখ ২৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। এ পর্যন্ত মারা গেছে এক লাখ ৫১ হাজার ৯১৮ জনের।

টিকাদান কর্মসূচির প্রথম দিন পশ্চিমবঙ্গের ২১২টি কেন্দ্র থেকে টিকা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার। কোন জেলায় কত টিকা পাঠানো হবে তার সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য সরকার। তবে অবশ্যই যারা প্রথমে টিকা পাবেন তারা যেন প্রথম ডোজ পাওয়ার পর সময়মত একই কোম্পানির দ্বিতীয় ডোজ টিকা পান, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। প্রথম দফায় রাজ্যটির ৬ লাখ স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।
আরেক রাজ্য রাজস্থানে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে জয়পুরের সাওয়াই মান সিং মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সুধীর ভাণ্ডারিকে টিকা দেয়ার মধ্য দিয়ে। মধ্যপ্রদেশে যারা শুরুতেই টিকা পাবেন তাদের মধ্যে একটি হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষী ও একজন পরিচারকও আছেন বলে জানিয়েছে রাজ্যটির সরকার। তবে মহারাষ্ট্র ও কেরালার মত যেসব রাজ্যে ভাইরাস সংক্রমণ বেশি, সেসব জায়গায় শুরুতে বেশি পরিমাণে টিকা পাঠানো হয়েছে। ওই দুই রাজ্যে বর্তমানে দৈনিক সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এ টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে ‘সম্ভবত কোভিড-১৯ এর শেষের শুরু’ হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ডের ‘কোভিশিল্ড’এবং ভারত বায়োটেকের ‘কোভ্যাক্সিন’দুটো টিকাই মানবদেহের জন্য নিরাপদ ও করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে জানিয়ে দেশবাসীকে আশ্বস্তও করেছেন তিনি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, শনিবার প্রথম দিনেই টিকা পাবে দেশটির ৩ লাখ মানুষ। এভাবে প্রথম দফায় স্বাস্থ্যকর্মীসহ সম্মুখসারির তিন কোটি মানুষকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও পরিচ্ছন্নতাকর্মী, সেনাবাহিনী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মীদের নাম রয়েছে প্রথম তালিকায়।



মহামারী মোকাবেলায় দিল্লির টাস্ক ফোর্সের ডা. সুনীলা গার্গ বার্তা সংস্থা এনডিটিভিকে বলেন, শুরুতেই যারা টিকা পাবেন তাদের বয়স ৫০ বছরের কম। এই তালিকায় থাকা বেশিরভাগই নার্স, ওয়ার্ড বয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং তরুণ চিকিৎসক। তিনি বলেন, “তারা যেন হাসপাতালে সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তাই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া তরুণদের দেহে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটা সাধারণ মানুষের মনে টিকার বিষয়ে আস্থা বাড়াতে সাহায্য করবে। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের ৮০ শতাংশের বেশির বয়স ৫০ বছরের নিচে। এটাও শুরুতে তরুণ স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।”
স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, “টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত টিকা দেওয়া হবে। বিকাল ৫টার মধ্যে যারা টিকা নিতে আসবেন, তাদের ৫টা গড়িয়ে গেলেও টিকা দেওয়া হবে। যেমনটা ভোটের সময় হয়।”
নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেককে ২৮ দিনের ব্যবধানে দুই ডোজ টিকা দেওয়া হবে। প্রথম দফায় স্বাস্থ্যকর্মীসহ সম্মুখ সারির যোদ্ধা তিন কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার পর টিকা পাবে ২৭ কোটি মানুষ, যাদের বয়স ৫০ এর বেশি বা দুরারোগ্য ব্যাধির কারণে যারা ঝুঁকির মুখে রয়েছেন। ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষের এ দেশের অন্তত ৩০ কোটি নাগরিককে আগামী ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে ভারত সরকার।
ভারতে টিকাদান কর্মসূচিতে যেসব ডোজ ব্যবহৃত হচ্ছে, সবই ভারতে তৈরি হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীকে পরাজিত করার লড়াইয়ে আপাতত দুটি টিকাকে অনুমোদন দিয়েছে তারা। একটি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার বানানো, অপরটি ভারত বায়োটেকের। এর মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকা ভারতে উৎপাদিত এবং কোভিশিল্ড নামে বাজারজাত করবে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। আর ভারতীয় কোম্পানি ভারত বায়োটেক তাদের টিকা বাজারজাত করবে কোভ্যাক্সিন নামে।



গত ৯ই জানুয়ারি এক ঘোষণায় ভারত সরকার জানায়, ১৬ই জানুয়ারি তাদের করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। তার আগে নতুন বছরের শুরুতে দুটি টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় দেশটির ওষুধ খাতের নিয়ন্ত্রণক সংস্থা।
এদিকে কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচির বিষয়ে সব তথ্য সংগ্রহ করতে প্রধানমন্ত্রী মোদী ‘কো-উইন ভ্যাকসিন ডেলিভারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামের একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেরও অনুমোদন দিয়েছেন, যার মাধ্যমে টিকার মজুদ, সংরক্ষণের তাপমাত্রা এবং বিতরণ পরিস্থিতির তাৎক্ষণিক তথ্য পাওয়া যাবে।
যারা টিকা পাবেন, তাদের হালনাগাদ তথ্য কো-উইন প্ল্যাটফর্মে আপলোড করা হবে। সেজন্য ‘আধার’ কার্ডের সাহায্য নেওয়া হবে। প্রথম ডোজ টিকা দেওয়ার পর প্রত্যেক ব্যক্তিকে একটি ডিজিটাল সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। সেখানে তাদের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার সময় থাকবে। একই সঙ্গে সরকারও জানতে পারবে কারা টিকা পেয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়ার পর চূড়ান্ত ডিজিটাল সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।
ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে জনমনে আস্থা বাড়াতে এবং গুজব ও ভুলতথ্য ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতেও কো-উইন প্ল্যাটফর্ম কাজ করবে।