কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুতে বিক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্রে গুলির নির্দেশ ট্রাম্পের

|| বার্তা সারাবেলা ||

পুলিশ হেফাজতে নিরস্ত্র এক কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকের মৃত্যুতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে গোটা যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির মিনিয়াপোলিসে গেল সপ্তাহের সোমবার কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক ফ্লয়েডের গাড়িতে জাল নোট থাকার খবরে তাকে আটক করতে যায়। সেখানেই পুলিশের এক কর্মকর্তা ফ্লয়েডের ঘাড়ের উপর হাঁটু দিয়ে তাকে মাটিতে চেপে ধরলে তিনি মারা যান। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতোমধ্যেই মিনেসোটা রাজ্য গভর্নর টিম ওয়ালজ ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন মিনিয়াপোলিসে।

এটিকে সুস্পষ্ট হত্যা দাবি করে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহর। শুক্রবারও বেশ কয়েকটি শহরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে বিক্ষুব্ধ মানুষ। এদিন হোয়াইট হাউসের বাইরে কয়েকশ বিক্ষোভকারী ৪৬ বছর বয়সী আফ্রো-আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েড হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।

বিক্ষোভ হয়েছে এবং হচ্ছে মিনেসোটা, নিউ ইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন শহরে। এসব বিক্ষোভে অংশ নিতে রাস্তা নেমে আসছে হাজার হাজার মানুষ।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের কাছে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীরা ফ্লয়েডের ছবি হাতে বিক্ষোভ দেখান ও ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’ স্লোগান দেন। এ প্রতিবাদ কর্মসূচির সময় হোয়াইট হাউস অস্থায়ীভাবে লকডাউন করে দেয়া হয়; গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এ বাসভবনের প্রবেশ ও বেরিয়ে যাওয়ার পথগুলো বন্ধ করে দেন।

ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদে টানা বিক্ষোভ চলা মিনিয়াপোলিস ও সেইন্ট পল শহরে শুক্র ও শনিবার রাত ৮ থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ দেয়া হয়েছে। দোকান লুটপাট ও ভবন-গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শুক্রবার পুলিশের সঙ্গে প্রতিবাদকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে নিউ ইয়র্ক, লস এঞ্জেলস, শিকাগো, ডেনভার, হিউস্টন, লুইজভিল, ফিনিক্স, কলম্বাস ও মেম্ফিসসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শহরে। বিক্ষোভকারীরা আটলান্টায় বেশ কয়েকটি ভবনে ভাংচুর চালিয়েছে, পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে। ডালাসে প্রতিবাদকারীদের ইট-পাথর ছোড়ার পাল্টায় পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়েছে।

এরইমধ্যে বিক্ষোভ সামাল দিতে লুটতরাজ করতে দেখলে সরাসরি গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার সকালে আইন শৃংখলা বজায় রাখতে ন্যাশনাল গার্ড পাঠাবেন তিনি। টুইটারে ট্রাম্প বলেন, ‍“ মিনিয়াপোলিসে এমন বিশৃংখলা আমি দেখতে পারছি না। শহরটির মেয়রকে র‌্যাডিক্যাল লেফট অভিহিত করে ট্রাম্প বলেন, এটি সামাল দিতে না পারা মেয়রের নেতৃত্বের ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই নয়। মেয়র জ্যাকব ফ্রেকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘শহরে শান্তি ফেরাতে হয় তাকে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তমত কাজ করতে হবে। আর সেটা যদি তিনি না করেন তাহলে সেখানে ন্যাশনাল গার্ড পাঠানো হবে ।”

ট্রাম্প আরো বলেন, “এই ধরনের সহিংসতা করে প্রকারান্তরে জর্জ ফ্লয়েডের স্মৃতির প্রতি অসম্মান দেখানো হচ্ছে। আমি এটা হতে দিতে পারি না। মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প বলেন, দেশের সেনাবাহিনী তাঁর সঙ্গে রয়েছে। আমরা সর্বোচ্চভাবে চেষ্টা করছি বিশৃংখলা নিয়ন্ত্রণ করতে। কিন্তু লুটতরাজ দেখলে গুলি চালানো ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় থাকবে না।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহের সোমবার ফ্লয়েডের গাড়িতে জাল নোট থাকার খবর পেয়ে তাকে আটক করতে গিয়েছিল পুলিশ। সেখানেই পুলিশের এক কর্মকর্তা ফ্লয়েডের ঘাড়ের উপর হাঁটু দিয়ে তাকে মাটিতে চেপে ধরেন বলে এক ভিডিওতে দেখা গেছে। সেসময় ফ্লয়েডকে ‘আমি শ্বাস নিতে পারছিনা’ বলতে শোনা যায়। অ্যাম্বুলেন্সে করে পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

৪৬ বছর বয়সী এ কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই বিক্ষোভ প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মিনিয়াপোলিস শহর। মঙ্গল ও বুধবারও বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ান। বেশ কয়েকটি ভবন ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে এসময়ে। বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদকারীরা বৃহস্পতিবার মিনিয়াপোলিসের একটি থানাও জ্বালিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে রাজ্যের সবচেয়ে বড় এ শহরটিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে।

ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় মিনিয়াপোলিস পুলিশ বিভাগ তাদের চার কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করে। এদের মধ্যে ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু তুলে দেয়া ৪৪ বছর বয়সী ডেরেক শভিনও আছে। গ্রেপ্তার শভিনের বিরুদ্ধে শুক্রবার ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। সোমবার তাকে আদালতে হাজির করার কথা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘ভয়ানক ব্যাপার’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। নিহত আফ্রিকান-আমেরিকানের পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সংবাদসূত্র : আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন